• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ

প্রধান বিচারপতির চরিত্রে কলঙ্কের কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস চলছে

প্রকাশ:  ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৪০ | আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৪৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের আড়াই কোটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নিদারুণভাবে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। তার চরিত্রে কলঙ্কের কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস চলেছে ও চলছে। এমনকি তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার হুমকি পযর্ন্তও দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন।

সম্পর্কিত খবর

    তারা বলেন, প্রধান বিচারপতির রায়কে পুঁজি করে সরকারের অভ্যন্তরে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল মহল তার ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে নিয়ে এসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, উন্নততর পদায়ন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত করার সর্বনাশা প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।

    প্রধান বিচারপতির ইস্যুকে মূলধন করে সাম্প্রদায়িক চক্রান্তে লিপ্ত কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানানো হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

    পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, কাজল দেবনাথ, অ্যাডভোকেট সুব্রত দেবনাথ, জয়ন্ত সেন দীপু, জেএম ভৌমিক, মিলন কান্তি দত্ত, পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রবীন্দ্র নাথু বসু, আদিবাসী নেতা সঞ্জিব দ্রং। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঐক ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্রাচার্য। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদ সদস্য সত্য রঞ্জন, দীপংকর ঘোষ, উত্তম চক্রবর্ত্তী, পদ্মাবর্তী দেবী প্রমুখ।

    লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, বিগত ৭০ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত কেবল সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার মেধা, মনন ও যোগ্যতায় সাংবিধানিক অন্যতম প্রধান পদ অলঙ্কৃত করেছেন। সরকারি দল ও সরকারের একাংশের তীব্র বিরোধিতাকে অগ্রাহ্য করে প্রধানমন্ত্রী তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

    তিনি আরও বলে, দুঃখজনক হলেও সত্য সুপ্রিম কোর্টের ৭ বিচারপতির সর্বসম্মত একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে টার্গেট করে সরকারি দল ও জোটের মহলবিশেষ থেকে ব্যক্তিগতভাবে তার বিরুদ্ধে শুধু একতরফা আক্রমণাত্মক, বিদ্রূপাত্মক বক্তব্য উত্থাপন করা হচ্ছে।

    রানা দাশগুপ্ত বলেন, যেদিন প্রধান বিচারপতি শপথবাক্য পাঠ করেন, সেদিনই সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন পরিচয়দানকারী আওয়ামী ওলামা লীগ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে বলেছে, মুসলমান রাষ্ট্রে হিন্দু প্রধান বিচারপতি মানি না, মানব না। আমার কাছে সুস্পষ্টরূপে মনে হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়কে নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে কটাক্ষ করে যেসব বক্তব্য সরকার এবং সরকারি দল ও জোটের দায়িত্বশীল কোনো কোনো মন্ত্রী ও নেতার বক্তব্য থেকে বেরিয়ে এসেছে তা আওয়ামী ওলামা লীগের বক্তব্যেরই প্রতিফলন।

    তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির জন্ম পরিচয়, ধর্ম, সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি ইত্যাদি পরিচয়ে এমনকি রাজাকারের মিথ্যা অভিধায় উল্লিখিত করে বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক উসকানিও অব্যাহতভাবে দেয়া হয়েছে ও হচ্ছে। তার চরিত্রে কলঙ্কের কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস চলেছে ও চলছে। এমকি তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার হুমকি পযর্ন্তও দেয়া হয়েছে।

    রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা এ দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর বাঙালি ও আদিবাসী একাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুমহান নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, সীমাহীন আত্মত্যাগ করেছি, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছি, নির্মূল ও নিশ্চিহ্নের মুখোমুখি হয়েছি।

    তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আবারও যে ধর্ম ও ধর্মীয় বিভাজনের বেড়াজালে আটকা পড়ে তা নয়, পাকিস্তানি আমলের মতোই এ দেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুরা একটানা বঞ্চনা, বৈষম্য, নিগৃহ, নিপীড়ন এবং সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হয়।

    সভাপতির বক্তব্যে হিউবার্ট গোমেজ বলেন, আমরা সরকারের লোক, এ সরকারকে সাপোর্ট করি। আমাদের নিরাপত্তাসহ ভালোমন্দ সরকার দেখবে- এটিই স্বাভাবিক। এ সংবাদ সম্মেলনে আমরা শুধু উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা বলেছি।

    পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে যারা বসে থাকে, তারা সবচেয়ে ভয়ানক। ঘাপটি মেরে বসে থাকা লোকজনই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষই ছিল খুনি মোশতাক। যারা তাকে খুন করেছে, তাদের অনেকেই তার কাছেই ঘাপটি মেরে থাকত। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোনো সরকারের মধ্যেই আগামী সরকার অবস্থান করে। ঘাপটি মেরে থাকারাই স্বাধীনতাবিরোধী, দেশবিরোধী। তারাই সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে আসছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close