• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

যেভাবে শেষ হলো গাজীপুর সিটির শেষদিনের প্রচারণা

প্রকাশ:  ২৫ জুন ২০১৮, ০১:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। রোববার ছিল প্রচারণার শেষ দিন। এদিন ভোরের আলো ফুটে ওঠার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তুমুল ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার।

প্রচারণার শেষ দিন সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশ, জনসংযোগ, ভোট প্রার্থনা, দোয়া আর ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মধ্যে কেটেছে নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর।

এদিন সকালে বাসা থেকে বের হন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তার সঙ্গে ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। দলীয় নেতাকর্মী বেষ্টিত জাহাঙ্গীরের গাড়িবহরটি সালনায় হাজির হলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে জমায়েত হন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করে ভোট চান তিনি।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাহাঙ্গীর আলমের গাড়িবহর রওনা দেয় কোনাবাড়ির উদ্দেশ্যে। সেখানে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন ও ভোট কামনা করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে এই প্রার্থী হাজির হন জয়দেবপুর চৌরাস্তায়।গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও অনুসারীরা মুহূর্তেই জড়ো হয়ে যান। এক পর্যায়ে পথসভা পরিণত হয় জনসভায়।

পথসভায় প্রথমে বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছওে খুলনায় বিএনিপর মেয়র ছিল। সেখনে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। গাজীপুরেও ঠিক তাই হয়েছে। তিনি গাজীপুরবাসীকে অনুরোধ করেন নৌকাপ্রতীকে ভোট দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত করার।এসময় খুলনা এলাকার কোনো বাসিন্দা গাজীপুরে ভোটার থাকলে তাদেরকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়অর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুরে রাস্তাঘাট বলে কিছু নেই। এখানে ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকে যায় বৃষ্টি হলে। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথমে এই জয়দেবপুর চৌরগাস্তার উন্নয়ন করবেন। এছাড়া টঙ্গী থেকে চন্দ্রা পর্যনন্ত রাস্তাকে ছয় লেনে পরিণত করবেন।

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে বিএনপির মেয়র গাজীপুরের কোনো উন্নয়ন কাজ করেননি। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। কেন্দ্র ও স্থানীয পর্যায়ে একই দল থাকলে উন্নয়নকাজও ভাল হবে। গাজীপুরবাসী ভোট দিয়ে আমাকে সেই সুযোগ করে দেবেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামী লীগ ৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দল। সেই দলের প্রার্থী হিসেবে আমাকে শেখ হাসিনা মনোয়ন দিয়েছেন। গাজীপুরবাসীও সেই আওয়ামী লীগের সাথে থাকবেন। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী রক্তের রাজনীতি করেন। তার এক ভাই এখন ফাঁসির আসামি। অতীতে তিনি যখনই নির্বাচিত হয়েছেন হত্যার মধ্য দিয়ে নির্বাচন করেছেন। গাজীপুরবাসী আর রক্ত দেখতে চায় না। এখন শান্তি ও উন্নয়ন দেখতে চায়।

পথসভা শেষে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জনসংযোগ করা হয়। সেখানে জনসংযোগ শেষে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন জাহাঙ্গীর। দুপুরে বাসাতে খাবার শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হক চৌধুরী নওফেল তার পাশে থাকলে সাংবাদিকরা জানতে চান নির্বাচনের প্রাক্কালে বাইরের কোনো নেতা এভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারেন কিনা। পরে তিনি বলেন, প্রার্থীর খোঁজ নিতে এসেছেন। কোনো প্রচারণা নয়।

পরে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, তিনি জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এই দীর্ঘদিনের প্রচারণায় কোনো ভুলভ্রান্তি হলে সবাইকে সেটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিনে সংবাদ সম্মেলন, জনসংযোগ, দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করে ব্যস্ত সময় পার করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার।

রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তার টঙ্গীর আউশপাড়া নিজস্ব বাসভবনে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রধানদের নিয়ে আলোচনায় বসেন তিনি। বৈঠকের সময় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ১০টার দিকে রওনা হাসান সরকার রওনা দেন গাজীপুর শহরের উদ্দেশ্যে। বেলা ১১টায় দিকে বিভিন্ন সাংবাদিকদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে ভোটারদের আহ্বান জানিয়ে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ভোটের দিন যত ঝড়-বৃষ্টি ও বাধা থাকুক না কেন, আপনারা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন। নিজের জীবন দিয়ে হলেও ভোট কারচুপি ঠেকাবো। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে সম্মানজনক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবো।

হাসান সরকার বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার যে নিয়ম-কানুন কমিশন থেকে দেওয়া হয়েছে, সরকার সেটি সস্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করুক, এটাই আমরা দেখতে চাই।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছে, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা করো, নয় তো এলাকা ছেড়ে পালাও। আমাদের নেতাকর্মীদের জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, জেলা হেফাজত ইসলমের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাছির উদ্দিন, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর আলম শুক্কুর, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুর রহিন খান কালা প্রমুখ।

এরপরই তিনি ছুটে যান টঙ্গীবাজার এলাকায়। সেখানে ব্যবসায়ীদের সাথে তিনি কুশল বিনিময় করে ভোট চান। এ সময় তিনি বলেন, গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের করের টাকার প্রত্যেকটি পয়সার সঠিক ব্যবহার করব। আপনাদের ভোটে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পেলে আপনাদের প্রতিটি পয়সা আমানতের সহিত খরচ করবো। অতীতেও আপনাদের আমানতের খেয়ানত করিনি, আগামীতেও আপনাদের আমানত যথাযথভাবে রক্ষা করা চলবো।

দ্বিতীয় দফায় তফসিল ঘোষণায় প্রার্থীরা প্রচারাভিযান চালানোর সময় পেয়েছেন মাত্র সাত দিন। তাই রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবিরাম প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

যারা নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা নয় বা ভোটার নয় তাদের ২৩ জুন দিবাগত রাত ১২টার আগেই নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে। এছাড়া দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৭ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাশকতা ঠেকাতে রোববার সকাল থেকে ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্লাটুনগুলো ২৭ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে যথা সময়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৫৭ ওয়ার্ডে ৫৭ টিম র‌্যাব সদস্য একটি টিম রিজার্ভ এবং প্রতি ২ ওয়ার্ডের এক প্লাটুনসহ মোট ৩০ প্লাটুন বিজিবি এবং ১০ হাজার ০২৪ জন আনসার ও পুলিশ বাহিনী নির্বাচনে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন,জাহাঙ্গীর,হাসান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close