• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কয়লা গায়েবে সংকটে বড়পুকুরিয়া খনি, বন্ধের পথে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রকাশ:  ২২ জুলাই ২০১৮, ১৬:৪৬ | আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৮, ১৭:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক:

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি উত্তোলন করে রাখা এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় জ্বালানি সংকটে পড়েছে কয়লা খনির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। পর্যাপ্ত কয়লা না থাকায় যে কোনো সময় ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এরই মধ্যে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার অপর ইউনিটটি বর্তমানে সীমিত ক্ষমতায় চালিয়ে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে এটিও বন্ধ করে দিতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করা দেড় লাখ টন কয়লা ইয়র্ডে মজুদ থাকার কথা। কিন্তু মজুদ আছে মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন কয়লা । এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার হদিস নেই । এ বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পেট্রোবাংলাকে জানালে কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে।

এদিকে পর্যাপ্ত কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পথে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাকিম জানান, জ্বালানি হিসেবে খনি থেকে উত্তোলন করা কয়লা খনির ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বড়পুকুরিয়ায় গত ২৯ জুন থেকে খনির ভেতরে যন্ত্রপাতি স্থানান্তরের জন্য কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। খনি কোম্পানির একজন মহাব্যবস্থাপক বলেছেন, তাদের আশা আগামী মাস থেকে ফের উত্তোলন শুরু হবে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে চালাতে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। পূর্ণ ক্ষমতায় চালাতে প্রতিদিন এখানে তিন হাজার ৩০০ টন কয়লার প্রয়োজন হলেও এখন মাত্র ৬০০ টন কয়লা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সাময়িকভাবে উত্তোলন বন্ধ থাকায় ও মজুদ ফুরিয়ে আসায় ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে এখন আংশিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে। এভাবে চালালেও আগামী ২৫ জুলাইয়ের পর কয়লাশূন্য হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, কয়লা মজুদ না থাকার কথা খনি কর্মকর্তারা সময়মতো জানালে হয়ত এরকম তীব্র সংকটে পড়তে হতো না। পর্যাপ্ত কয়লা পেলেই কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ৫০ হাজার টন কয়লা তাদের ইয়ার্ডে মজুদ ছিল। এর পর ২৯ জুন পর্যন্ত আরও ১ লাখ ৮৫ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১ এপ্রিল থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে কয়লা গেছে ২ লাখ ৫০ হাজার টন। হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা থাকার কথা ছিল, যার কোনো হদিস নেই।

২২৭ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ কয়লা গায়েবের ঘটনায় চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

পেট্টোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কয়লা খনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করে পেট্রোবাংলায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কোম্পানি সেক্রেটারি ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করে সিরাজগঞ্জে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে। আর সাময়িক বরখাস্ত কর্মকর্তারা হলেন, আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) ও খালেদুল ইসলাম উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর)। বিসিএমসিএল-এর একজন কর্মকর্তা জানান, দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই চারজনের বিরুদ্ধে এখন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) কামরুজ্জামানকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বড়পুকুরিয়া খনি,কয়লা গায়েবে
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close