• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জেলায় জেলায় ‘খরচ’, পথেই বাড়ছে পশুর দাম

প্রকাশ:  ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০৫:৫৬ | আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০৬:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

কোরবানি ঈদের বাকি আর মাত্র দিন সাতেক। রাজধানীতে অার দুদিন পরেই কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বিকিকিনি শুরু হবে। অধিকাংশ বেপারী বাড়তি লাভে পশু বিক্রির জন্য এখন ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। সড়ক-মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়ার ঝুঁকি থাকায় আগেভাগে রওনা হলেও পশুবাহী পরিবহনগুলোকে পথে পথে থমকে দাড়াতে হচ্ছে।

এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গেলেই থেমে যাচ্ছে ট্রাকের চাকা, গুনতে হচ্ছে টাকা। ফলে গন্তব্যে পৌছাতে পৌছাতে বেপারীদের খরচ হচ্ছে গরু প্রতি তিন- চার হাজার টাকা। বেপারীরা খরচের এই বাড়তি টাকা আদায় করবেন ক্রেতাদের কাছ থেকেই। এতে ক্রেতাদের গরু প্রতি বেশি গুনতে হবে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্য পশু পরিবহনসহ নানা সরঞ্জামে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি শুরু করেছে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পাশাপাশি সড়কে-মহাসড়কে তৈরি হচ্ছে ইচ্ছাকৃত যানজট। চাঁদা না বলে এখন চাওয়া হয় ‌'খরচ'। আর টাকা পেলেই তৎপর হচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেটের কর্মীরা, ওই এলাকা সবধরনের জট থেকে মিলছে দ্রুত মুক্তি।

সব হাটেই কোরবানির পশু হিসেবে গরুর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেপারীর গরুসংগ্রহ করে বড় বড় শহর ও হাটবাজারে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে পশু সংগ্রহ করে জড়ো করছেন। আস্তে আস্তে এগুলো শহরে পাঠাবেন তারা। কিন্তু শুরুতেই তারা সঙ্কট দেখছেন নানা সরঞ্জামের। সিদ্দিকুর রহমান নামে এক পশু ব্যবসায়ী বলেছেন, ঘাটে ঘাটে তাদের টাকা গুনতে হচ্ছে। পশু সংগ্রহ করে জড়ো করতেই পথে পথে শেষ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আর হাটে পাঠাতে কত জরিমানা গুনতে হয় তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

কয়েকবছর ধরে নোয়াখালী-চট্টগ্রামসহ ওই এলাকার হাটবাজারে পশু সরবরাহ করে থাকেন তাহের মিয়া। তি ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি পশু সংগ্রহ করে থাকেন। তাহের বললেন, একটি পশু কিনে তার বাড়িতে নিতে বাড়তি অন্তত এক হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। দেখা যায়, এক স্থান থেকে কিনে অন্য স্থানে নেয়ার সময় কয়েকটি স্থানে চাঁদা দিতে হয়। ভোলা থেকে গরু যখন ট্রলারে তোলেন তখন গরু প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। আবার লক্ষ্মীপুর গিয়ে ঘাটে যখন ট্রলার থেকে গরু নামানো হয় তখনো ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দিতে হয়।

একই অভিযোগ সিরাজগঞ্জের গরুর বেপারী শাজাহানের। তিনি জানান, চরাঞ্চল থেকে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফেরার পথে এখনই টাকা গুনতে হচ্ছে পথে পথে। এই টাকা আবার আদায় হবে ক্রেতাদের কাছ থেকে।

এখনই কোথাও কোথাও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ঘাটগুলোতে ট্রাক আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাকগুলো আটকে থাকলে এমনিতেই পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও ফেরি সঙ্কট থাকার কারণে উভয় ঘাটে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক অপেক্ষা করছে।

গত কয়েক দিন থেকেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পণ্যবাহী ট্রাকের সারি এবং দৌলতদিয়া ট্রাক টার্মিনালে দুই শতাধিক ট্রাক আটকে রয়েছে। সময় মতো ফেরি পার হতে না পেরে উভয় ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী ও চট্টগ্রামমুখী অর্ধশতাধিক কোরবানির পশুবাহী ট্রাকও রয়েছে বলে জানা গেছে। ট্রাক চালকেরা জানান, ঘাটে ১২ ঘণ্টা করে ফেরির জন্য বসে থাকায়; পশুর খাবার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে হাটে পশুর দাম বেড়ে যাবে।

ওই এলাকার ট্রাফিক সার্জন মৃদুল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেছেন, কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে পণ্যবাহী ট্রাক পারের অপেক্ষায় থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার মো: শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৫টি ছোট-বড় ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়া পারে ছয়টি ঘাটের মধ্যে পাঁচটি সচল রয়েছে। আর রাতে ছোট ফেরিগুলো চলতে পারে না। এ ছাড়াও পুরনো দুর্বল পাঁচটি রো রো ফেরি তীব্র স্রোতের বিপরীতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার মাত্র পাঁচ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগছে। ২৪ ঘণ্টায় ওই দুর্বল ফেরিগুলো তিনটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। ফলে ঘাটে যানজট থেকেই যাচ্ছে।

একই অবস্থা মাওয়া ফেরিঘাটেও। সেখানেও শত শত ট্রাক আটকে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ট্রাকগুলো আটকে থাকলে এমনিতেই পরিবহন সঙ্কট সৃষ্টি হবে। তখন পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে।

কোরবানির পশুবাহী পরিবহনকে বিভিন্ন স্থানে কৃত্রিম যানজটের ফাঁদে আটকে ‌'খরচ' আদায়ের নামে চাঁদাবাজি চলছে জানিয়ে বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, সরকার সমর্থক শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের কারাসাজিতেই এসব হচ্ছে। ঈদের আগে বাড়তি কামাইয়ের আশায় শ্রমিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে পথে নেমেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। এখনই বিভিন্ন রুটে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। হাট শুরু হলে অবস্থা দাঁড়বে ভয়াবহ।

এই শ্রমিক নেতা জানান, পশুবাহী ট্রাক থেকে আদায় করা একটা অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে পৌছে দেওয়ায় ঈদকে সামনে রেখে সড়কে-মহাসড়কে এইসব অরাজকতায় নজর দিচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগে আগে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। দূর্ভোগ পোহাতে হবে বেপারীদের আর ক্রেতাদের পশু কিনতে গুনতে হবে বাড়তি টাকা।

কোরবানির পশু,কোরবানির পশুর হাট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close