• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বরাদ্দ নিয়ে উধাও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান

সোনাগাজীতে বিদ্যালয় ভবন নদীগর্ভে বিলীন, পাঠদান মক্তবে

প্রকাশ:  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৩৪ | আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৩৭
আবদুল্লাহ আল-মামুন (ফেনী)

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের নদী উপকূলীয় দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা দ্বিতো ভবনটি ২০১১ সালে বড় ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

নতুন ভবনের আসায় কষ্ট শিকার করে জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যালয়টির পাঠদান চলছে পাশ্ববর্তী সড়কের উপর একটি ফোরকানীয়া মক্তবে। মক্তবটি মাত্র এক কক্ষ বিশিষ্ট হলেও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সেখানে দুটি কক্ষ করা হয়েছে। দুই পালায় শ্রেণি কার্যক্রম চললেও পাঠদান ব্যহৃত হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় সংকটের কারণে শিক্ষকরা একটি কক্ষের এক কোনে আলাদা করে ছোট একটি কক্ষ বানিয়ে নিয়েছেন। ওই কক্ষে চলে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম। অনেক সময় সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকে বিদ্যালয়ের সব ধরনের আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি বিদ্যালয়টির জন্য নতুন ভবন বরাদ্দ দেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন শুধুমাত্র মাটি কাটার পর কাজ রেখে চলে গেছে।

১৯০০ সালে দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রামের স্থানীয় হোসেন আহম্মদ নামে এক ব্যক্তি ৩৩শতক জমি দান করেন। ওই জমির উপর টিন আর বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়টি চালু করা হয়। আট-দশ বছর পর টিনের ঘরটি জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পুনরায় ঘরটি সংস্কার করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নেন।

পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলে নতুন ঘর ও পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনটি গত ২০১১সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শিক্ষা জীবন থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এতে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় কষ্ট করে পাশ্ববর্তী সড়কের উপর থাকা একটি ফোরকানীয়া মক্তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। সেখানেও কক্ষ সংকট থাকায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির পাঠদান এক সঙ্গে আর দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় সকাল বেলা তাদের শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। এদের ছুটি শেষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি কক্ষে বসে ক্লাস করে।

অপর কক্ষটিতে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলে। একটি কক্ষে দুই শ্রেণির পাঠদান এক সঙ্গে হওয়ায় দুইজন শিক্ষকও এক সঙ্গে কাজ করে থাকে। এতে উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ ভালভাবে বুঝতে ও লিখতে অসুবিধা হয়ে থাকে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি ভাল ভাবে নিতে প্রয়োজন নতুন ভবন ও কক্ষের। বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সীমাহীন কষ্ট করে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার জানায়, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় তাদেরকে মক্তবে লেখা-পড়া করতে হচ্ছে। ঘরটিও বেড়াগুলো ভাল না হওয়ায় বৃষ্টি হলে পানি পড়ে তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় পাঠদান চলাকালে জোয়ারের পানি ডুকে তাদের জামা-কাপড় ভিজে লেখা-পড়াসহ বাড়ি যেতে অনেক অসুবিধা হয়।

দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ইসরাত জাহান জানায়, জোয়ার ও বৃষ্টি হলে বিদ্যালয়ে বসার টেবিলগুলো ডুবে যায়। মেঝেতে জোয়ারের কাদা মাটি জমে সেদিন আর ক্লাস হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম ভূঁঞা বলেন, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে দেড়শ শিক্ষার্থী রয়েছে। এরা সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভবন না থাকায় কক্ষ সংকটের কারনে এক সঙ্গে সবার পাঠদান ও পরীক্ষা নেওয়া যায় না। এই কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধের পর বিদ্যালয়ের আগের জায়গায় চর জেগে ওঠেছে। ওই স্থানে সরকারী ভাবে বিদ্যালয়ের তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি ভাবে প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে কিছুদিন যাওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সৈয়দ আহম্মদ বলেন, বিদ্যালয়ের বন্ধ হওয়া কাজটি পুনরায় চালু করার জন্য তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়ে বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন সমাধান পাননি। শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং এলাকায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের ভবনটি দ্রুত নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হিটলারুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী এএনএম মনির উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সোনাগাজীতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এক প্রকল্পে প্রায় ২৯ কোটি ১৮লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি আশ্রয় কেন্দ্র কাম বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য ২০১৬সালের জুন মাসে দরপত্র আহবান করা হয়।

সাতটি ভবনের মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছিল। দরপত্রের শর্তানুযায়ী সাতটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের এসএস এ ই জয়েন্ট বেঞ্জার নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার বিভাগকে।

২০১৭ সালে সালের মাঝামাঝি সময়ে আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মাটি কাটা শুরু করেছিল। কিন্তু মাটি কাটা শেষে তারা হঠাৎ কাজ বন্ধ করে কেন চলে গেল তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, একাধিক বার জানতে চেয়েও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাঠ প্রকৌশলী হেমন্ত দাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম বলেন, যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছে তাদেরকে অবশ্যই নির্মাণ কাজ করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিল প্রদান বন্ধকরণসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ওএফ

ফেনী,স্কুল,পাঠদান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close