• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

একদা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

প্রকাশ:  ১০ মার্চ ২০১৮, ২২:১৬ | আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৮, ২২:২৬
লুৎফর রহমান রিটন

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী নামের অপরূপ নারীর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিলো শুভাশীষ মজুমদার নামের তরুণ এক শিল্পীর মাধ্যমে। এই শুভাশীষ মানে শুভ ছিলো প্রীতিভাজন শিল্পী ধ্রুব এষের বন্ধু। ধ্রুব তখন গাউসিয়া মার্কেট লাগোয়া এলিফ্যান্ট রোডে থাকে। আমারও নিবাস তখন এলিফ্যান্ট রোডের কাঁটাবন ঢালের এক বৃক্ষ শোভিত বাড়িতে। এক সন্ধ্যায় শুভ এসেছিলো ধ্রুবর কাছে। সঙ্গে ওর বউ রত্নেশ্বরী। এই রত্নেশ্বরীর মা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। শুভ অনেক গল্প করতো আমার সঙ্গে, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সম্পর্কে। আর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরেকজন মানুষের কথাও শুভ বলতো সেই মানুষটার নাম 'বিয়ার ভাই'। হ্যাঁ, বিয়ার ভাই। এটা কেমন নাম হলো? লোকটা কি ভালুকের মতো? নাকি লোকটা বিয়ার পান করতে ভালোবাসে খুব? আমার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশটাকে সমর্থন করে শুভ। বিয়ার ভাইয়ের সঙ্গে প্রচুর বিয়ার পান করার সুযোগ ঘটে শুভর। সম্পর্কে বিয়ার ভাই লোকটা রত্নেশ্বরীর বাবা যদিও! জামাতা-শশুরের এমন মজার জুটির কথা শুনে আমি আগ্রহী হয়ে উঠি বিয়ার ভাইয়ের ব্যাপারে। কিন্তু আমার প্রধান আগ্রহ থাকে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর প্রতিই। শুভ একদিন নিয়ে গিয়েছিলো আমাকে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কাছে। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বিখ্যাত বাড়িটি পেরিয়ে তবেই যেতে হয় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর বাড়িতে। ওই বাড়ির অনতিদূরেই কবি সুফিয়া কামালের বাড়ি। এক সকালে শুভর সঙ্গে ফেরদৌসী আপার বাড়িতে গেলাম। খুব বেশি বড় নয়, ছোট্ট ছিমছাম গাছের মায়া জড়ানো একটা বাড়ি। খুব খোলামেলা। চতুর্দিকে মায়াময় আলো খেলা করে সারাক্ষণ।

সম্পর্কিত খবর

    বোঝা গেলো শুভ আগে থেকেই আমার কথা বলে রেখেছে ফেরদৌসী আপাকে। আমার আগমনে দেখলাম খুবই খুশি হয়েছেন তিনি। চমৎকার বড়সড় লাল একটা টিপ আপার কপাল আলো করে আছে। গলায় হাতে প্রচুর মালা আর ব্রেসলেট। উজ্জ্বল রঙা সুতি শাড়িতে বাঙালি নারীর প্রতীক হয়ে ফুটে আছেন হাস্যোজ্জ্বল ফেসদৌসী প্রিয়ভাষিণী। আমার সঙ্গে খুব দ্রুতই চমৎকার একটা বোঝাপড়া হয়ে গেলো তাঁর। বেতের চেয়ার বেতের টি-টেবিল বেতের মোড়ায় সাজানো ড্রয়িং রুমে আমরা বসেছি। এই ঘরে গাছের গুড়ি আর ডালপালা দিয়ে বানানো প্রচুর দৃষ্টিনন্দন ভাষ্কর্য শোভ পাচ্ছে। ভেজা এবড়ো খেবড়ো দুমড়ানো ভাঙা কিছু গাছের ডাল নাড়াচাড়া করতে করতে ফেরদৌসী আপা বললেন, কাল রাতে একটু ঝড় হয়েছিলো। সকালে পথ থেকে এগুলো কুড়িয়ে এনেছি। এগুলো থেকেই বানাবো কয়েকটা ভাষ্কর্য। এই যে দেখেন এটাকে খুব অনায়াসে একটা বাউলের শেপে নিয়ে আসা যাবে।

    বহুবার অনুরোধ করলাম আপাকে, আপা, প্লিজ আমাকে আপনি আপনি করে বলবেন না। তুমি করে বলুন।

    কিন্তু তিনি মানবেন না কিছুতেই। বললেন, আপনাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। এতো বিখ্যাত একজন ছড়াকারকে আমি তুমি করে বলতে পারি না। কতো লেখা পড়েছি আপনার!

    তাঁর এই আপনি বলা বলবৎ ছিলো বাকি জীবন।

    শুভাশীষ তার শাশুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেও শ্বশুর মানে বিয়ার ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়টা করিয়ে দিতে পারলো না। কারণ বিয়ার ভাই জরুরি কাজে ঢাকার বাইরে। পরবর্তীতে কখনোই এই পরিচয় পর্বটা আর হয়ে উঠলো না। অনেক বছর পর, এক সন্ধ্যায় যদিও আমি দেখা পেয়েছিলাম 'বিয়ার ভাই' নামের অসাধারণ এই মানুষটির। সে প্রসঙ্গ খানিক পরে।

    আপার শিল্পকর্ম দেখে সেদিন আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তখন আমি নানান রকম অনুষ্ঠান করে বেড়াই। যাকে বলে ক্ষ্যাপ মারা। আমার কাছে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী নামের অন্যরকম এক শিল্পীর কথা শুনে তাঁর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন প্রযোজক কামরুন নেসা হাসান। তিনি তখন মহিলাদের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেন। সেই অনুষ্ঠানে আমি টুকটাক কাজ করে দিই। বিনিময়ে অল্প কিছু টাকা পাই। তো আমি প্রস্তাব করলাম ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নাম। তাঁর একটা সাক্ষাৎকার নেয়া গেলে অনুষ্ঠানে আলাদা একটা ফ্লেভার আসবে। কামরুন নেসা হাসান অর্থাৎ আমাদের মেনকা আপা তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি শর্ত জুড়ে দিলেন, শুধু যোগাযোগ ঘটিয়ে দিলেই হবে না। রেকর্ডিংয়ের সময় আমাকেও উপস্থিত থাকতে হবে। তিনি আউটডোর শুটিং-এর ব্যবস্থা করে ফেললেন। মেনকা আপার কথামতো নির্দিষ্ট দিনে আমিও গিয়েছিলাম বিটিভি আউটডোর টিমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নেবে ঝকমকে এক তরুণী। এক সেনা কর্মকর্তার শ্যালিকা। সেনা বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের সেই কর্মকর্তার সঙ্গে আমার বিপুল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো রেকর্ডিং-এর কয়েক ঘন্টায়। আমি একেকটা কথা বলি আর ভদ্রলোক হেসে ওঠেন। সেই বন্ধুত্ব এখনও বহাল আছে। বইমেলার মাঠে মাঝে মধ্যেই হঠাৎ আমার সামনে এসে হাজির হন। তারপর খুব হাস্যোজ্জ্বল এবং আন্তরিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেন--আমাকে চিনতে পেরেছেন? বলেন তো আমি কে?

    কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই বলি আমি- সুন্দরী শ্যালিকার দুলাভাই আপনি,আপনাকে চিনবো না! হাহ হাহ হাহ।

    বিটিভিতে ভাষ্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়েছিলো যথাসময়ে। খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি। আমাকে কতোবার যে ধন্যবাদ দিয়েছেন। এরপর তিনি যখন বিখ্যাত হয়ে উঠলেন সারাদেশের মানুষের কাছে, তখনও দেখা হলেই তিনি মনে করিয়ে দিতেন সেই অনুষ্ঠানের কথা। বলতেন--এখন দেশের টেলিভিশনে কতো কথা বলি। কতো সাক্ষাৎকার নেয়া হয় আমার! কিন্তু আমাকে টিভি পর্দায় প্রথম এনেছিলেন আপনি! আমি ভুলিনি কিন্তু...

    দিন যায়।

    ততোদিনে আমার জানা হয়ে গেছে একাত্তরে ফেরদৌসী আপার জীবনে ঘটে যাওয়া দুঃসহ অমানবিক পৈশাচিক ঘটনার কথা। ডক্টর নীলিমা ইব্রাহীমের 'একাত্তরের বীরাঙ্গণা' বইতে ফেরদৌসী আপার কথা নেই। কিন্তু আছে তাঁর মতো অনেক ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত নারীর কথা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে নারীগণ তাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগ উপহার দিয়েছেন। আমাদের মায়েদের বোনদের কন্যাদের রক্ত আর অশ্রুতে লেখা পাকিস্তানী ঘৃণ্য পশুগুলোর বর্বর অত্যাচারের কাহিনীগুলো জনসমক্ষে পুরোটা আসেনি। কিছু কিছু এলেও নির্যাতিতার নাম পরিচয় গোপন রাখতে হয়েছে। কারণ আমাদের সমাজে এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষ অমানুষের পর্যায়েই রয়ে গেছে। সামাজিকতার ভয়ে নির্যাতিতারা প্রকাশ্যে এসে বিচার চাইতে পারেননি। নীলিমা ইব্রাহিমের বইতে বলা হয়েছে সেরকম কিছু ঘটনা। তথাকথিত লোক লজ্জার ভয়ে দেশ স্বাধীন হবার পরে পাকিস্তানী সেনাবিহিনির বিভিন্ন ক্যাম্প ও বাংকার থেকে উদ্ধার পাওয়া অনেক ধর্ষিতা মা বোন এবং কন্যাকে তাদের পরিবার আর ফিরিয়ে নেয়নি ঘরে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে এধরণের ভিক্টিমরা তাই বিচ্ছিন হয়ে গেছে তাঁদের সমাজ সংসার থেকে।

    এক পর্যায়ে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে শাহরিয়ার কবিরের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সৃষ্টি করলেন অনন্য এক দৃষ্টান্ত।

    নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি কিংবা শেষান্তে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এক সন্ধ্যায় শাহরিয়ার কবির ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে উপস্থাপন করলেন ভিন্ন এক মাত্রায়। হলভর্তি মানুষের সঙ্গে দর্শসারিতে বসে আছি আমিও। রস্ট্রামের নকশা করা কাঠ ধরে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। আমার থেকে খুব বেশি দূরে নন তিনি। রস্ট্রামের ওপরে ফেলা আলোতে ফেরদৌসী আপার হাতের বালা ব্রেসলেট গলার মালাগুলোও স্পষ্ট। জ্বলজ্বল করছে তাঁর কপালের লাল টিপটি।

    অনুচ্চ কণ্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে তিনি বলতে শুরু করলেন একাত্তরের গল্প। না গল্প নয়। জীবন কাহিনী। খুলনার পাকিস্তানী ক্যাম্পে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয়ংকর সেই গল্প। পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর কথোপকথন এবং সেনা কর্মকর্তার পৈশাচিক বর্বরতার কাহিনি তিনি বলছিলেন কান্না মিশ্রিত কিন্তু অদ্ভুত এক দৃঢ় উচ্চারণে। তাঁর গলা ধরে আসছিলো। বারবার তিনি থেমে যাচ্ছিলেন। অশ্রু মুছছিলেন। তারপর আবার বলতে শুরু করছিলেন। পুরো অডিটোরিয়াম জুড়ে পিন পতন নিরবতা। দিন দিন, প্রতিদিন একই ভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছিলেন তিনি। দিনের পর দিন মাসের পর মাস তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন রক্তাক্ত হয়েছেন ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন আর স্বপ্ন দেখেছেন-একদিন দেশ স্বাধীন হবে...।

    ফেরদৌসী আপার অবিশ্বাস্য সংগ্রামের গল্প শুনে, রক্তাক্ত শরীরে তাঁর লড়াইয়ের কথা শুনে, তাঁর অসম্ভব প্রাণশক্তির পরিচয় জেনে, প্রতিদিন বারবার মৃত্যুবরণ করার পরও আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে ওঠার বিবরণ শুনে হলভর্তি দর্শকশ্রোতা আমরাও নিমজ্জিত হয়েছি অবর্ণনীয় বেদনার সাগরে! আমার চোখের জল বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো একটা দৃশ্য। আপা তাঁর জীবনের গল্প বলে যাচ্ছেন। প্রথম সারিতে বসা, আমার সামনেই, ছুঁয়ে দেয়া দূরত্বে বসা একজন পুরুষ কাঁদছিলেন আকুল হয়ে। আমি তাঁর পেছনটা দেখতে পাচ্ছি শুধু। কান্নার গমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে মানুষটার শরীর। ফেরদৌসী আপার বড় মেয়েটা, সম্ভবত ফুলেশ্বরী, ছুটে গিয়ে পেছন থেকেই ঝাপটে ধরে থাকলো সেই মানুষটাকে। দর্শক আসনে বসে থাকা সেই মানুষটা দুই হাত পেছনে এনে মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে তাঁর নিজের কষ্ট কমাতে চাইছেন। ফর্সা ওই মানুষটাই শুভাশীষের 'বিয়ার ভাই'। রত্নেশ্বরী ফুলেশ্বরীদের বাবা। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সবচে বড় আশ্রয় আর ভালোবাসার মানুষটি...

    কিছুদিন আগে অটোয়ায় বসে আমি জানতে পারলাম, আমার এক বন্ধু জানালো ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী নাকি আমাকে খুঁজছেন। আমি ফোন করলাম আপাকে। কী আপা আমাকে নাকি খুঁজছেন আপনি?

    --আরে খুঁজবো না! কোথায় গিয়ে পড়ে আছেন আপনি! আসেন তো! কতো দরকার আপনাকে। একেকটা দুঃসময়ে আমরা যখন সমবেত হই, আমার দু'চোখ শুধু আপনাকে খোঁজে। দেশ ছেড়ে কেনো পড়ে আছেন দূর দেশান্তরে! আসেন তো ভাই...

    আহারে আপা, এভাবে আকুল হয়ে ডাকার মতো মানুষগুলোর সংখ্যা কী রকম কমে আসছে দিন দিন। আপনারা একেকজন মৃত্যুবরণ করেন আর আমরা কী রকম একা হয়ে যাই! বার বার একটু একটু করে মরে যাই...

    ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সঙ্গে আমার দুর্দান্ত কয়েকটা ছবি তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্র সাংবাদিক শামসুল হক টেংকু। ২০১৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চ্যানেল আই ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বিজয় মেলায় এসেছিলেন ফেরদৌসী আপা। দুপুরে রিসেপশন লবিতে বসে গল্প করছিলাম আপার সঙ্গে। বহুদিন পর আমাকে পেয়ে মহা উচ্ছ্বসিত ছিলেন আপা। মুক্তিযুদ্ধের অনন্য প্রতীক আমার আপাটা বারবার ছুঁয়ে দেখছিলেন তাঁর প্রিয় ভাইটিকে। আর আমিও আমার চিরাচরিত দুষ্টুমিতে আপাকে মাতিয়ে রাখতে সচেষ্ট ছিলাম। কান্নায় ভরা আপার জীবনের কয়েকটা মুহূর্তও যদি খানিকটা রাঙিয়ে দেয়া যায় তাতেও পূণ্য।

    প্রিয় ফেরদৌসী আপা, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনার অবদানকে আমরা মনে রাখবো। আপনার প্রতি ঘটে যাওয়া নৃশংসতাকে আমরা মনে রাখবো। মুক্তিযুদ্ধের 'বীর নারী' হিশেবে আপনি থাকবেন আমাদের বুকের গভীরে, নিবিড় শ্রদ্ধায় পরম মমতায়। আপনার 'সম্ভ্রম' বিফলে যায়নি আপা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। পাকিস্তানী ঘৃণ্য পশুদেরও বিচার একদিন হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে আপনি এক জ্বলন্ত স্বাক্ষী হয়ে শক্তি যোগাবেন। আপনার আত্মত্যাগ ব্যর্থ হতে পারে না।

    একাত্তরে আপনার রক্ত ক্ষরণের বিষয়টিকে কী অবলীলায় আপনি সর্বদা প্রস্ফুটিত রেখেছিলেন কপালের লাল টিপ হিশেবে। আমাদের মেয়েদের কপালে লাল টিপ দেখলেই আপনার সেই লাল টিপের কথা মনে পড়বে। আপনার কপালে ফুটে থাকা লাল টিপের কথা মনে পড়বে আমাদের পতাকার লাল সূর্যটার দিকে তাকালেও।

    তারপর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে আপনার গল্প--একদা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী নামে এক 'বীর নারী' জন্মেছিলেন সোনার বাংলায়...

    ছবি: শামসুল হক টেংকু অটোয়া, ৮ মার্চ ২০১৮

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close