• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মার্কেন্টাইলকে গণমানুষের ব্যাংক হিসেবে দাঁড় করাতে চাই

প্রকাশ:  ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৫২ | আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১২:০৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

একেএম সাহিদ রেজা। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের এ উদ্যোক্তার বিনিয়োগ রয়েছে মিডিয়া, বীমাসহ অন্যান্য খাতেও। ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে কথা বলেছেন

ব্যাংকার থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পটা বলুন

সম্পর্কিত খবর

    ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করতাম। নিজেই ব্যবসা করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল। ছাত্রাবস্থাতেই এজন্য সিদ্ধান্ত ছিল, ব্যবসার গতিপথ চিনে চাকরি ছেড়ে দেব। ১৯৮৬ সালে বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করলাম। কিন্তু ব্যাংকে চাকরি শুরুর পর মনে হলো, এটি একটি একঘেয়েমিপূর্ণ জায়গা। স্বাধীনভাবে জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে চাকরি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। এর পর থেকেই চাকরি ছাড়ার পরিকল্পনা শুরু করি। ব্যাংকে যে ব্যবসায়ী গ্রাহকরা আসতেন, তাদের সঙ্গে গল্প করতাম। জানতে চাইতাম, তিনি কীভাবে ও কী ধরনের ব্যবসা করেন। ব্যবসায় সফল হওয়ার ধাপগুলো বুঝতে চাইতাম। এর পর যখনই সুযোগ এল, ব্যবসা করার সম্ভাবনা তৈরি হলো, তখনই চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নেমে পড়লাম।

    ১৯৯৩ সালে আমি প্রথম ব্যবসা শুরু করি। সে সময় রাশিয়ার বাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করতাম। এর পর ১৯৯৬ সালে নিজেই তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। পোশাক শিল্পে এখন আমার পূর্ণাঙ্গ ভার্টিক্যাল সেটআপ আছে। ওভেন ফ্যাব্রিকস থেকে শুরু করে ওভেন গার্মেন্ট তৈরি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটিই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে। এছাড়া মিডিয়া ও বীমাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছি। ক্যাম্পাস জীবনে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। ছাত্র অবস্থায় গ্রামে গেলে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করতাম। সমাজের উন্নয়ন ও খেলাধুলার জন্য ক্লাব, লাইব্রেরি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করতাম। মানুষের জন্য কিছু করার তাড়না সবসময়ই আমার মধ্যে ছিল।

    ১৯৯৯ সালে যাত্রা করা মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১৮ বছরে পা রেখেছে। এ দীর্ঘ পথচলায় লক্ষ্যের কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক?

    মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোক্তারা স্বপ্নতাড়িত মানুষ। মরহুম আবদুল জলিল সাহেবের আহ্বানে আমি ব্যাংকটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। সাবেক ব্যাংকার হিসেবে ব্যাংকিং খাতের প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিল। তরুণ ব্যবসায়ী হিসেবে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আমার উদ্যম অনেক বেড়ে যায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের যাত্রা হয়েছিল। ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদানই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

    এ মুহূর্তে আমাদের ব্যাংকের ১০ লাখ ১৬ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। জনগণের ১৯ হাজার ৯০৭ কোটি টাকার আমানত রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে। ৩৩ হাজার ৪৯৮ জন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এই যে বৃহত্ পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্নটি আরো বড় হয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক একটি কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের করপোরেট গভর্ন্যান্স খুবই দৃশ্যমান। আমি শুরু থেকেই এ ব্যাংকের সঙ্গে আছি। এর আগে আমি ব্যাংকের বিভিন্ন কমিটির দায়িত্বে ছিলাম। এবার পরিচালনা পর্ষদ আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে। এটিকে আমি স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি সোপান হিসেবেই নিয়েছি এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

    চেয়ারম্যান হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংককে আগামী দিনে কোথায় দেখতে চান?

    আমরা দেশের প্রথম সারির ব্যাংক হতে চাই। গত জুন প্রান্তিকে মুনাফার দিক থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংক দেশের শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে চলে এসেছে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও আমরা ভালো করেছি। খেলাপি ঋণ আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছি। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন আমরা নিশ্চিত করেছি। গণমানুষের বিপদের বন্ধু হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংককে আমরা দাঁড় করতে চাই। গ্রাহক ও শাখা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাংককে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে চাই। তরুণ উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। এর মাধ্যমেই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশের যুবসমাজ মুক্তি পেতে পারে। আমি মনে করি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রকৃত অর্থে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি হবে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাবে। জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কাজ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

    বেসরকারি ৪০টিসহ দেশে ৫৭টি ব্যাংক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে আরো ব্যাংক খোলার প্রস্তাব আসছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?

    ১৬ কোটি মানুষের দেশে বিদ্যমান ব্যাংকের সংখ্যা অত্যধিক হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি না। আরো ব্যাংক এলে অর্থনীতির জন্য ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। নতুন ব্যাংক বাজারে নতুন ধারণা নিয়ে আসতে পারে। বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন। এটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

    এটি খুবই দুঃখজনক। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পর্ষদ বিবাদ বা স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে। আমাদের পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে হূদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। পরস্পরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুর মতো সম্পর্ক। আমরা ব্যাংকের পর্ষদে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি। পরিচালকদের দ্বন্দ্ব বা সংঘাত ব্যাংকিং খাতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেখানে টাকা-পয়সার বিষয় থাকে, সেখানে টুকটাক সমস্যাও থাকে। এটি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

    পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে বেনামে ঋণ নিচ্ছেন। ব্যাংকের পরিচালক পদের অপব্যবহার করে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও আছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?

    পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। বেনামে যে পরিচালক ঋণ নেন, তিনি অপরাধী। সুতরাং অপরাধীর বিচার দেশের প্রচলিত আইনেই হবে। এটিকে উত্সাহিত করার কোনো অবকাশ নেই। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কোনো বেনামি ঋণ নেই। পরিচালকদের দাবির মুখে সরকার ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি কার্যকর হলে ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েম হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী মনে করেন।

    ব্যাংকের মতো বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সামাজিক অংশগ্রহণ অনেক বেশি থাকা দরকার। দু-একজন ব্যক্তির কাছে ব্যাংক না গিয়ে সম্প্রসারণমুখী থাকা উচিত। সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে যত বেশি সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকবে, ওই ব্যাংক তত বেশি ভালো চলবে বলেই আমি মনে করি।

    মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে কিছু বলুন

    এ মুহূর্তে মার্কেন্টাইল ব্যাংক জনকল্যাণমুখী ব্যাংক বলেই আমি মনে করি। দিন দিন এ ব্যাংকের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বড় ব্যাংক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বিদ্যমান অথনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে চাই। নিশ্চিত মুনাফার জায়গায় আমরা যেতে চাই, যাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। জনগণের আমানতের যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে চাই। আমাদের কাছে থাকা গ্রাহকদের আমানত শতভাগ নিরাপদ।

    সুত্র.​ বণিক বার্তা

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close