• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আমি কোরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি: জাফর ইকবাল

প্রকাশ:  ১৪ মার্চ ২০১৮, ১৯:৪১ | আপডেট : ১৪ মার্চ ২০১৮, ২১:৪৩
শাবি প্রতিনিধি

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, আমি পবিত্র কোরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই পড়েছি। তোমরা আমাকে নাস্তিক বলো। আমার মতো করে আর কেউ পড়েছে বলে আমার মনে হয় না।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তৃতায় ধর্মের নামে বিপথগামী তরুণদের উদ্দেশ্য করে ড. জাফর ইকবাল এসব কথা বলেন।

সম্পর্কিত খবর

    তিনি পবিত্র কোরআনের লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, তুমি যদি একটা মানুষকে মারো তবে তুমি পুরো মানব জাতিকে হত্যা করো। কে তোমাদের মাথায় এসব ঢুকিয়েছে।

    হামলাকারী সন্ত্রাসী ফয়জুল ও অন্যান্য উগ্রপন্থীদের উদ্দেশ্যে ড. জাফর ইকবাল বলেন, হামলাকারীর জন্যে আমার কোন রাগ নাই বরং মায়া আছে, করুণা আছে, একটা মানুষ কি পরিমাণ দু:খী হলে ভাবতে পারে যে আরেকজনকে খুন করে সে বেহেশতে যাবে। এটা কি সম্ভব, অথচ পৃথিবীটা কত সুন্দর। সে মনে করে ওই মানুষকে মারতে পারলে আমি বেহেশতে যাবে। এখানেই হয়তো তেমন কেউ আছে। তোমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকলে তোমরা আমার সাথে দেখা করো।

    হামলাকারীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, তুমি কার কথায় এ রাস্তায় নেমেছো। তোমার বাবা-মা-ভাই রিমান্ডে, তুমি রিমান্ডে, এটা কোন জীবন হলো। প্লিজ, যারা এভাবে চিন্তা করো, আমার সামনে এসে কথা বলো। আমি আনন্দের সাথে তোমাদের কথা শুনতে রাজি আছি। কি নিয়ে কষ্ট, কি নিয়ে বিভ্রান্তি, আমার সাথে কথা বলো। তোমার যারা তুমি যদি একটা মানুষকে বাঁচাও, সমস্ত মানব জাতিকে বাঁচাও। তাই আমার ছাত্র-ছাত্রীরা যারা ওইদিন আমাকে বাঁচিয়েছে, তারা সমস্ত মানব জাতিকে বাঁচিয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, একজনকে বাঁচানো মানে সমস্ত মানব জাতিকে বাঁচানো। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ধন্যবাদ জানাতে না পারি, ততক্ষণ শান্তি পাচ্ছিলাম না। এখন ভালো লাগছে যে আমি দায়িত্ব পালন করছি।

    তিনি বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলায় নিহতদের কথা স্মরণ করে বলেন, আজ আমার অনেকের কথাই মনে পড়েছে। অভিজিৎ, অনন্ত, ওয়াশিকুর, নীলয়, হুমায়ুন আজাদ স্যারসহ অনেকের কথাই মনে পড়ছে। আমার শুধু তাদের ও তাদের পরিবারের কথাই মনে পড়েছে। তাদের প্রতি আমি সম্মান জানাই।

    শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি ২০১৫ সালে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, উপাচার্য ভবনের সামনে আমাদের ছাত্ররা আমার শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। তখনই ভেবেছিলাম চলে যাব, কিন্তু সিদ্ধান্ত পাল্টাই। বললাম যে না, কয়েক বছর মাত্র, সহ্য করি, এরপর চলে যাবো (চাকুরি শেষে)। ওই ঘটনায় আমি গুটিয়ে ফেলি নিজেকে। সকালে আইআইসিটি ভবনে ঢুকি, সন্ধ্যায় মাথা নিচু করে বের হয়ে যাই। তখন অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনেকে এসে আমাকে অনুরোধ করে তাদের অনুষ্ঠান যাওয়ার জন্যে। কিন্তু আমি তাদের না করে দিই যে না আমি আর তোমাদের এসবে যাবো না, তোমরা আমাদের গায়ে হাত তোলো। বিষয়টা আমার কাছে নিষ্ঠুর মনে হয়েছে। তাই এখন আমি বলছি, আমি এখন তোমাদের সাথে থাকবো। তোমাদের গানের অনুষ্ঠান, নাটক, বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠানে আমি যাবো। আমি এখানে এজন্যেই এসেছি যে আমি আছি তোমাদের সাথে।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর কখনও ১৯৭৫ এ ফিরে যাবে না। সেনা কর্মকর্তাদের সাথে আমার কথা হয়েছে। ওই সময় সেনাবাহিনী আমাদের উল্টো দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এখন যারা সেনাবহিনীতে কর্মরত, তারা মুক্তিযুদ্ধকে বুকে ধারণ করেন। বাংলাদেশ আর কখনও ’৭৫ সাল(এর মতো) হবে না।

    তিনি বলেন, আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি, আমি ভেবেছি কেউ মাথায় আঘাত করেছে। হামলার পরপরই আমাকে ওসমানীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি ঠান্ডা মাথায় কাজ করার জন্যে ওসমানী মেডিকেলের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুলিশ, প্রশাসন, চিকিৎসকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

    অনুষ্ঠানে সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক এনে অন্যের পরিপূরক। তিনি বলেন, আজকে এ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিন্স মারা গেছেন কিন্তু আমরা আমাদের বিজ্ঞানী জাফর ইকবালকে ফিরে পেয়েছি। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা হয়েছিল কিন্তু সেজন্যে কি আমরা থেমে গেছি?

    এসময় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস, ড. রেজা সেলিম প্রমুখ।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close