• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হাসানের স্ত্রীর জবানবন্দীতে ডিবি ইন্সপেক্টর জালাল খুনের বর্ণনা

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৮, ০২:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিবির ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিনকে কীভাবে খুন হন তা খুনি হাসানের স্ত্রী তানিয়ার ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) সাক্ষী হিসেবে এই জবানবন্দি দেন তানিয়া।

তানিয়া জবানবন্দিতে বলেন, “ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টায় আমি দুই মেয়েসহ নিজ ঘরে ঘুমাতে যাই। আমাদের ভাড়া বাসাটা দুইতলা বিল্ডিংয়ের ছাদের ওপর টিনশেড। এ সময় আমার স্বামী হাসান (২৬) ও তার বন্ধু মানিক (২২) ঘরের বাইরে ছাদের ওপর মাদুর বিছিয়ে বসে ছিল। এর কিছু সময় পর কুকুরের ডাক শব্দ শুনতে পাই। আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি আমার স্বামী ও তার বন্ধু মানিক ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে, একজন লোককে লক্ষ্য করে আমার স্বামীর হাতে থাকা কালো রংয়ের পিস্তল দিয়ে গুলি করছে। গুলি লাগার পর গুলিবিদ্ধ লোকটি বলেন, ‘স্যার, আমাকে বাঁচান’। আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতরে চলে যাই। ওই সময় আরও কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনি। আমার স্বামী হাসান ও তার বন্ধু মানিক ছাদের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। পরে জানতে পারি হাসান যে লোকটিকে গুলি করেছে তিনি পুলিশের লোক এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।”

সম্পর্কিত খবর

    দক্ষিণ পীরেরবাগের ১০৫/এ/১ নম্বর বাড়িতে গত বছরের নভেম্বরে ভাড়ায় ওঠেন বলে জানিয়েছেন হাসানের স্ত্রী। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী হাসান একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি। মাঝে মাঝে মোবাইল ফোন মেরামতের কাজ করতো বলে জানি। গত নভেম্বর মাসে আমার স্বামী আমাদের বর্তমান দক্ষিণ পীরেরবাগের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। আমাদের দুইটি মেয়ে আছে। কিছুদিন আগে থেকে আমার স্বামী হাসান নেশা করত বলে আমি বুঝতে পারি।’

    গত ১১ জানুয়ারি মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ২৯৯/৯/১/এ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে দুই সার্জেন্ট মামুনুর রশীদ ও সোহেল রানার সরকারি দুটি আগ্নেয়াস্ত্র (পিস্তল) চুরি হয়। এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর চুরি হওয়া ওই পিস্তল দুটি উদ্ধার করতে গত ১৯ মার্চ রাতে পীরেরবাগের ১০৫/১/এ নম্বর বাড়ির দোতলায় ছাদের টিনশেড বাসায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগ। অভিযান চালানোর আগে বাসাটি রেকি করতে যান ডিবি পুলিশের সদস্যরা। দোতলা বাড়ির ছাদের পরিস্থিতি দেখার জন্য ভবনের কার্নিশ বেয়ে ওঠার চেষ্টা করেন পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীর। বিষয়টি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা প্রথমে ইট দিয়ে জালাল উদ্দিনের মাথায় আঘাত করে এবং পরে তার মাথা বরাবর দুই রাউন্ড গুলি করে। এ সময় জালাল উদ্দিন কার্নিশের রড থেকে নিচের দিকে পড়ে গিয়ে ঝুলে থাকেন। ডিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। ঘটনার কিছু সময় পর গুরুতর আহত অবস্থায় ডিবির পরিদর্শক জালাল উদ্দিনকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মধ্যরাতে তিনি মারা যান।

    এদিকে, বৃহস্পতিবার (২২শে মার্চ) দিবাগত রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাসান নিহত হয়েছেন। বন্দুকযুদ্ধের সময় ঘটনাস্থল থেকে দুইটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে

    গোয়েন্দা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ডিবি ইন্সপেক্টর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত হাসান ও মানিকের মূল কাজ ছিল রাতের বেলা বিভিন্ন বাসায় গ্রিল কেটে চুরি করা। তার এই চক্রের সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন জড়িত। এই চক্রটি প্রতিদিন দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকতো। রাতের বেলা বিভিন্ন বাসার কার্নিশ বেয়ে উপরে উঠে গ্রিল কেটে চুরি করতো। হাসান-মানিকসহ এই চক্রের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মিরপুর ও আশপাশের থানায় একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। এমনকি সে গ্রেফতার হয়েছে একাধিকবার।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close