• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ডিজেল পাচার বেড়েছে

প্রকাশ:  ২২ মে ২০১৮, ১৭:০৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভারতে জ্বালানি তেলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশ থেকে ডিজেলের চোরাচালান আচমকাই বেড়ে গেছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যদিও দাবি করেছে ডিজেল পাচারের ঘটনা এখনও ততটা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কিন্তু বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এই চোরাচালানের ফলে এর মধ্যেই বিপুল রাজস্ব হারাতে শুরু করেছে। খবর: বিবিসি বাংলা।

ভারতের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত যতদিন না জ্বালানি তেলে শুল্ক ও করের পরিমাণ কমাবে, ততদিন এ পাচারের সমস্যা থেকেই যাবে। ভারতে ডিজেলের দাম এখন প্রায় প্রতিদিনই পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের আসাম বা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ডিজেল বিকোচ্ছে প্রতি লিটার ৭১ রুপিতে, যা ৮৮ বাংলাদেশি টাকার সমান।

সে জায়গায় বাংলাদেশের ভেতরে ডিজেলের দাম মাত্র ৬৫ টাকা লিটার। আর ঠিক সে কারণেই সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের চোরাকারবার। দিল্লির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক গবেষণা থিঙ্ক ট্যাংক ইকরিয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ অর্পিতা মুখার্জি বলেছেন, পাশাপাশি দুটো দেশে জ্বালানির দামে এতটা ফারাক থাকলে স্মাগলিং ঠেকানো খুব মুশকিল।

তিনি বলেন, যেখানে দুটো দেশে জ্বালানির দামের পার্থক্য এত বেশি এবং সীমান্তও নিশ্ছিদ্র নয়, সেখানে এটা হবারই ছিল। বস্তুত বাংলাদেশ বা আরও অন্যান্য সার্ক দেশ থেকে জ্বালানি পাচারের এ সমস্যাটা বারে বারেই ঘটেছে। আর ফারাকটা না কমলে ঘটেই চলবে।

ড. মুখার্জির মতে, বড় রাস্তা দিয়ে ট্যাংকারে করে হয়তো তেল পাচার করা যাবে না, কিন্তু ছোট ছোট মাপে এটা চলতেই থাকবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসির চেয়ারম্যান আকরাম আল হোসেন বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা সমস্যা সম্পর্কে অবহিত।

বিপিসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু হানিফও জানান, তাদের ভর্তুকি-দেয়া ডিজেল যে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে, এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতি লিটার ডিজেলে প্রায় বাইশ-তেইশ টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। এখন আমাদের সীমান্ত এলাকার পাম্পগুলোতে ডিজেলের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে কিনা বলা মুশকিল। তবে আমরা আমাদের সব তেল কোম্পানিকে বলেছি- তারা যেন ওখানকার সব পাম্পে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে তার পরেই তেল দেয়।

তিনি বলেন, আরও একটা ব্যাপার আছে। বেনাপোল বা বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে যেসব ট্রাক আসে তারা কিন্তু ট্যাংক প্রায় খালি করে ঢোকে আর যাওয়ার সময় পুরোটাই ভর্তি করে নিয়ে যায়। প্রতিদিন এভাবে একশ থেকে দেড়শ ট্রাকও কিন্তু এক রকম সস্তার ডিজেল পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে বলতে পারেন।

তবে ট্রাকভর্তি করে ডিজেল ভারতে নিয়ে যাওয়া হলেও ফেনসিডিল বা এমনকি গরুর মতো অত সহজে এই দাহ্য পদার্থটি পাচার করা যায় না বলেই দাবি করছে বিএসএফ।

আসামের ধুবড়িতে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট আরকে দুয়ার দাবি, ভারতে ডিজেলের দাম বাংলাদেশের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি হলেও এ মার্জিনটা তত লোভনীয় নয়। তিনি বলেন, যে কোনো স্মাগলড জিনিস অনেক হাত ঘুরে যায়। তাদের সবাইকে খুশি রাখতে হয়। কিন্তু ডিজেলে অতটা মার্জিন কোথায়?

তিনি বলেন, একটা গরুর দাম ভারতে ১০ হাজার আর বাংলাদেশে ২৫ হাজার, কাজেই সেটা পাচার করা হয়তো পোষায়। কিন্তু সীমান্তের দুই পারে ডিলার-এজেন্ট-দালাল-কুরিয়ার সবাইকে খুশি করে ডিজেল পাচারে ততটা কিন্তু মুনাফা করা সম্ভব নয়।

তার পরও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত দিয়ে ছোট ছোট জারকিন বা কনটেনারে করে ডিজেল পাচারের ঘটনা সম্প্রতি খুব বেড়ে গেছে। আর সেটার কারণ ভারতে আকাশছোঁয়া দাম। গবেষক অর্পিতা মুখার্জি বলেন, ডিজেলে বাংলাদেশের ভর্তুকি নয়; বরং ভারতের বসানো শুল্ক আর করই এ সমস্যার মূলে।

তিনি বলেন, অন্য কোনো দেশ তেলে ভর্তুকি দিলে আপনার কিছু করার নেই। কিন্তু আমরা যেটা দেখতেই পারি, বাড়তি কর বা শুল্ক চাপিয়ে আমরা দামের ফারাকটাকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছি না তো?

অর্পিতা মুখার্জি আরও বলেন, জ্বালানিতে বাড়তি কর বসানোর মানে আপনি কিন্তু আপনার গোটা অর্থনীতিটাকেই প্রতিযোগিতার পরিপন্থী করে তুলছেন। আমি যতদূর জানি জ্বালানিতে বাংলাদেশের ভর্তুকি তত কিছু নয়; বরং সমস্যাটা ভারতেরই। কারণ তারা জ্বালানি তেলের ওপর বিরাট অঙ্কের কর বসিয়ে রেখেছে।

২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে এ যাবত ভারতের বিজেপি সরকার মোট ৯ বার জ্বালানি তেলের ওপর এক্সাইজ ডিউটি বাড়িয়েছে - আর কমিয়েছে মাত্র একবার। ভারতে জ্বালানি তেলকে জিএসটির আওতাতেও আনা হয়নি, কাজেই প্রতিবেশী দেশ থেকে এই চোরাচালানের সমস্যা অবধারিত ছিল বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

ওএফ

ভারত,পাচার,ডিজেল,বেড়েছে
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close