• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

গাইবান্ধায় ধূমপানে শিশু কিশোরদের আসক্তি বাড়ছে

প্রকাশ:  ২৩ মে ২০১৮, ১৭:০৫
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধায় ধূমপায়ীদের সংখ্যা দিন দিন চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে। আসক্ত এসব ধূমপায়ীদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। যাদের মধ্যে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষ করে তরুনদের মাঝে ধূমপান একটি ফ্যাশন বা স্মাটনেস অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এদের মধ্যে ক্লাস বর্জনকারী শিক্ষার্থীরা বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। আসক্ত এসব শিশু-কিশোরদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। সেই সাথে তাদের কাঁধে সাইট ব্যাগ, হাতে মোবাইল ফোন, পকেটে সিগারেট ও দিয়াশলাই যেন নিত্য দিনের সঙ্গী।

শিশু-কিশোরদের উপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের শতকরা ৩০ ভাগে ধূমপানে জড়িয়ে গেছে। এসব শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকায় বন্ধুরা মিলে দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনে আনেন। এরপর ক্লাস বর্জন করে নির্জন স্থানে গিয়ে ধূমপান করে থাকেন। তাদের চলন-বলনে অন্যরকম আর্ট লক্ষ্য করা যায়। আর এক বিশেষ ভঙ্গীতে চলাফেরা করেন এসব শিশু-কিশোররা। প্রতিনিয়ত স্কুলে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে থাকা এসব শিক্ষার্থীরা শহর ও বন্দরের বিশেষ গোপন জায়গায় বসে ধূমপান করে থাকেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার মাদকদ্রব্য গাজাঁ, ইয়াবা ও হিরোইনে আসক্ত হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের অনেকে প্রাকাশ্যে ধূমপান করেন শহর, বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জের অলিগলিতে।

এসব শিশু-কিশোরদের বিকালের আড্ডায় বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক ও দর্শনীয় স্থান গুলোতে দেখা যায়। কাধেঁ স্কুল ও কলেজের ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। শিশুদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় আইনত নিষিদ্ধ হলেও সে আইন মান্য করেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে খুব সহজে হাতের নাগালে মিলে এসব তামাকপন্যে। ধূমপানে আসক্তি বাড়তে থাকে এসব স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে।

ধূমপানে আসক্ত কয়েকজন কিশোরের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এদের অনেকে প্রতিনিয়ত ধূমপান করেন, কেউ আবার সখের বসে খাচ্ছেন সিগারেট। তাদের অনেকে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরে আসক্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানান। এদের অধিকাংশ শিশু-কিশোরের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের নিচে। আবার অনেক কিশোররা মনে করেন সিগারেট খাওয়া একটি ফ্যাশন। ছেলেরা ধূমপান না করলে তাদের হাফ লেডিস মনে করেন অনেকে। ফলে একটু স্মার্ট হওয়ার আশায় ধূমপানে আসক্ত হোন তারা।

বর্তমানে বাজারে ৩ টাকা থেকে শুরু করে ১১ টাকার মধ্যে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি ব্রান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। স্বল্পমূল্য এবং সহজলভ্য হওয়ায় এসব তামাক পন্যের ক্রেতা হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে শহরের পৌর পার্ক এলাকার সাইফুল নামে এক সিগারেট বিক্রেতার কাছে শিশু-কিশোরদের নিকট তামাকপন্য বিক্রয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, কেউ সিগারেট চাইলে আমরা দিতে বাধ্য হই, আমি না বিক্রি করলে আরেক দোকান থেকে তারা কিনবে। তবে সিগারেট খেতে বারন করলে তারা আমাদের উল্টো জ্ঞান দিয়ে চলে যায়। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আইনে তো প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়াও নিষেধ। কয়জনে সে আইন মানে? আর এতো আইন দেখলে তো আর ব্যবসা করা যাবে না।

এ ব্যাপারে জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আ. মজিদ বলেন, সন্তানের সামনেই অনেক বাবা ধূমপান করেন। এতে ওই সন্তানও ধূমপানে আগ্রহী হয়। বর্তমানে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মধ্যে ধূমপান সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তবে আমরা সর্বদা ধূমপান থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে ধারনা দেই।

রংপুর সরকারী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘শিশু বয়স থেকে ধুমপান খুবই ভয়াবহ। এতে করে প্রথমেই শিশুর মানসিক ও দৈহিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হয়। এজন্য তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কুফল জানাতে বেশি করে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এসব কিশোরের অভিভাবকদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়া জরুরী। তবে তামাকজাত পন্য বিক্রেতাদের নৈতিক ভাবে সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে শিশু-কিশোরদের আসক্তি আরো বাড়তে থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

ওএফ

ধূমপান,শিশু কিশোর,আসক্তি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close