• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

শুকিয়ে যাওয়া পদ্মায় আটকা পড়েছে কুমির: উৎসুক মানুষের ভীড়

প্রকাশ:  ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৩৪
পাবনা প্রতিনিধি

পাবনা সদর উপজেলার চরকোমরপুরে পদ্মা নদীর ক্যানেলে আটকে পড়েছে একটি কুমির। গেলো বর্ষার কোনো এক সময় পথ ভুলে ভেসে আসে কুমিরটি। এরপর পানি নেমে গেলেও আটকে যায় শুকিয়ে যাওয়া পদ্মা নদীতে। ঘটনা জানাজানি হলে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে কুমির দেখতে ভীড় করছে নানা বয়সী মানুষ। এ নিয়ে আতংক থাকলেও কুমিরটিকে প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজ। তবে প্রশাসন ও বন বিভাগের আশ্বাস, এ বিষয়ে নেয়া হচ্ছে কার্যকর পদক্ষেপ।

পাবনা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরের গ্রাম চর কোমরপুর। পাশেই পদ্মা নদী। বর্ষার থৈ থৈ জল শুকিয়ে এখন পায়ে হাঁটা পথ। সেই পথে আরও অন্তত ৪ কিলোমিটার দূরে ধু ধু চরের মাঝে ছোট খালে পরিণত হওয়া নদীতেই ভেসে বেড়াচ্ছে একটি কুমির। দুই সপ্তাহ আগে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কয়েকজন জেলে প্রথম দেখতে পায় কুমিরটিকে। তারপর এ খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এখন প্রতিদিন কুমির দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ভীড় জমছে নানা বয়সী উৎসুক মানুষের। এতদিন টেলিভিশনের পর্দায় কুমির দেখলেও এই প্রথম সামনাসামনি কুমির দেখতে পেরে উচ্ছসিত স্থানীয়রা। তারা জানান, এ নিয়ে কিছুটা আতংক থাকলেও এখন পর্যন্ত কারও কোনো ক্ষতি করেনি কুমিরটি।

বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে চরকোমরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার কোলে অনেক মানুষের ভীড়। শিশু, বৃদ্ধ এমনকি নারীরাও এসেছেন কুমির দেখতে।

জামাল হোসেন নামের একজন জানান, কয়েকদিন আগে পদ্মা নদীর চরে বরশি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ কুমিরটিকে মাথা তুলতে দেখি। ভয়ে আঁতকে উঠে আমি বরশি ফেলে দৌঁড়ে এসে সবাইকে খবর দেই। এরপর অনেকেই কুমিরটিকে দেখেছে।

আবুল হোসেন ও দিলবার হোসেন নামের দুইজন জেলে জানান, আমরা চরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। ১৫ দিন আগে এখানে কুমির দেখা যায়। আমরা এখন অন্য জায়গায় মাছ ধরি। এখানে ভয়ে কেউ মাছ ধরে না।

জমিরন বেওয়া নামের একজন বলেন, জীবনে কখনও সামনে থেকে স্বচক্ষে কুমির দেখি নাই। শুনছি এখানে কুমির দেখা গেছে। তাই দেখতে আসছি। আমি অনেকক্ষণ বসে থেকে একবার দেখতে পারছি। বেশ বড়সড় কুমির।

খবর পেয়ে কুমিরের ছবি তুলতে পদ্মার কোলে কয়েকদিন ধরে ভীড় করছে অনেক আলোকচিত্রী। তাদেরই একজন পাবনার প্রাকৃতিক আলোকচিত্রী সুপ্রতাপ চাকী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনদিন ধরে এখানে আসছি ছবি তুলতে। অবশেষে বুধবার কুমিরের ভাল ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছি। আমার মতে, প্রাকৃতিক প্রাণীকে প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ করা দরকার। কুমিরটির যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি রাখা উচিত।

জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন জানান, কুমির উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খবর দেয়া হয়েছে। বন বিভাগীয় কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে কুমিরটি উদ্ধার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। সে পর্যন্ত স্থানীয়দের ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

সামাজিক বন বিভাগ পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পাবনার বন বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী বিভাগের কর্মকর্তারা ওই স্থান পরিদর্শন করেছেন। জায়গাটা মূলত পদ্মার সংশ্লিষ্ট ক্যানেল। যেখানে কুমিরটি বর্তমানে ভাল অবস্থায় আছে। পানির গভীরতাও অনেক। সেখানে কুমিরের থাকা বা খাওয়ার কোনো সমস্যা হবে না। শুকনো মৌসুমেও এখানে পানি একেবারে শুকায় না। তাই ভয়ের কিছু নেই। আগামী বর্ষায় সে পুনরায় ফিরে যেতে পারবে।

এদিকে, স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পদ্মার ওই কোলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। যে কোলের দখল নিয়ে ইতোপূর্বে প্রভাবশালী দুই গ্রুপের সংঘর্ষও হয়েছে। বর্তমানে কুমির থাকায় সেখানে ওই চক্রের কেউ মাছ ধরতে পারছেন না। তাই গুজব ছড়িয়ে কুমিরটি সেখান থেকে সরিয়ে দিতে অপচেষ্টা করছে ওই চক্রটি। যাতে তারা পুনরায় মাছ ধরতে পারে।

/এসএম

পাবনা,কুমির

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close