• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আফ্রিকায় খাদ্য সংকট প্রকট হওয়ার শঙ্কা

প্রকাশ:  ০৯ মার্চ ২০২২, ০৯:১৯
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ববাজারে এরই মধ্যে তীব্রভাবে পড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যসহ আন্তর্জাতিক বাজারে অস্তিরতা শুরু হয়েছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোয়। সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খাওয়া এসব দেশের সরকারের সামনে চলমান যুদ্ধ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে কৃষ্ণ সাগরীয় দেশগুলোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাদ্যশস্য সরবরাহ হয়। এর মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেন বড় অংশ রফতানি করে। দেশ দুটি যৌথভাবে প্রায় ৩০ শতাংশ গম রফতানি করে। আর আন্তর্জাতিক বাজারের মোট ভুট্টার প্রায় ১৩ শতাংশ এককভাবে সরবরাহ করে ইউক্রেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো (মেনা নামে পরিচিত) খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে কৃষ্ণ সাগরীয় দেশগুলোর বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ফলে চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ওই অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ সীমিত হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি সামনে আরো অবনমন হবে বলে আশঙ্কা আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকদের।

কম মূল্যে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর প্রধান উৎস কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। ইউক্রেনের বন্দর থেকে জাহাজীকরণ এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ছাড়া, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে মেনাভুক্ত দেশগুলো। উচ্চমূল্যে খাদ্যশস্য আমদানি, অর্থনৈতিক সংকট ও দ্বন্দ্ব সংঘাতেই যেখানে বিপর্যস্ত এসব দেশ, সেখানে খাদ্যশস্যের সরবরাহ সংকট আরো জটিল করবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বাইরের উৎস থেকে খাদ্যশস্য আমদানির চেষ্টা করছে মেনা। কিন্তু সেটি তাদের জন্য সহজ হবে না। বৈশ্বিক বাজারে এসব পণ্যের দাম এখন যেমন ঊর্ধ্বমুখী, তেমনি রয়েছে নিষেধাজ্ঞার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব। ফলে খাদ্যশস্য আমদানিতে বাড়তি মূল্য দিয়েও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে এখন খাদ্যশস্য আমদানি করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর প্রত্যেকেই এখন নতুন উৎস দেশের সন্ধানে।

চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানির স্বল্পতা ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মেনা অঞ্চলের আবাদ বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। এজন্য খাদ্যশস্যের আমদানির ওপরই বেশি নির্ভরশীল তারা।

আবুধাবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মনিকা মালিক বলেন, উপসাগরীয় অনেক দেশে খাদ্যশস্যের উদ্বৃত্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু মিসর ও লেবাননসহ মেনার বেশির ভাগ দেশই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের লাগামহীন দাম এসব দেশকে আরো নাজেহাল করবে।

গম আমদানিতে বিশ্বে শীর্ষে মিসর। খাদ্যশস্যটির মোট আমদানির ৮০ শতাংশই আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর উচ্চমূল্যের কারণে দেশটির ক্রেতারা দুটি টেন্ডার বাতিল করেন। এছাড়া দেশটির দুটি কার্গো ইউক্রেনের বন্দরে আটকা পড়ে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ১৪ বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে। ঊর্ধ্বমুখী অন্যান্য খাদ্যশস্যের দামও। এ অবস্থায় খাদ্যশস্য আমদানিতে মেনা অঞ্চলের দেশগুলোকে ৪০ শতাংশের বেশি বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আলজেরিয়া ও লিবিয়াসহ জ্বালানি তেল উৎপাদক উপসাগরীয় অনেক দেশই বাড়তি মূল্যে খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারবে। জ্বালানি পণ্য বিক্রি থেকে আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের জন্য চাপ কিছুটা কমবে। কিন্তু অন্যদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

খাদ্য সংকট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close