ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে কাউকে গ্রেপ্তার নয়
ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এখন কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। শুধু তাই নয় যারা এই আইনে করা মামলায় আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা জামিনের আবেদন করতে পারবেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও এখন স্থগিত থাকবে।
বুধবার (১১ মে) দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই আইন খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন। এই আইনের পর্যালোচনা শেষ না করা পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে।
সম্পর্কিত খবর
দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ৮০০টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রয়েছে এসব মামলায় ১৩ হাজার লোক জেলে আছেন।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার সংখ্যা ১৬০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ৯৬ জনকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়, তার মধ্যে দুইজনের শাস্তি হয়েছে। গ্রেপ্তার ৯৬ জনের মধ্যে ৫৫ জনের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ওই বছর কর্ণাটকে সবচেয়ে বেশি মানুষকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তালিকায় এর পরে আসাম, জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর প্রদেশ।
ব্রিটিশ ভারতে ১৮৬২ সালে দণ্ডবিধি চালু হয়। তখন সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহ নিয়ে কোনো সেকশন চালু ছিলো না। ১৮৭০ সালে ধারাটি যুক্ত হয়। বালগঙ্গাধর তিলককে প্রথম এই ধারা অনুসারে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মহাত্মা গান্ধীকেও ইয়ং ইন্ডিয়ার লেখার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।
এই আইনের আ্ওতায় বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার ও জেলে পাঠানো যায়। ১৯৬২ সালে কেদারনাথ মামলায় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে সাংবিধানিক ঘোষণা করে জানায়, সরকারের সমালোচনা করা হলে, তাকে কোনোভাবেই দেশদ্রোহ বলা যাবে না। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গতবছর প্রশ্ন তোলে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কি এই আইনের প্রয়োজন আছে? তারা জানায়, সরকার পুরনো প্রচুর আইনকে বাতিল করেছে। তাহলে এই আইনের পর্যালোচনা কেন করা হবে না?
কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন ছিলো, রাষ্ট্রদ্রোহের যেসব মামলা চলছে, সেগুলোকে থামিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। কারণ, এর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ, টাকা নয়ছয় ও অর্থ বিদেশে পাঠানোর ঘটনা জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু সরকারের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, যতোদিন তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন, আইন পর্যালোচনা করবেন, ততোদিন এই আইন প্রয়োগ করে কোনো নতুন করে মামলা হবে না। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম