• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ব্রাজিলের লুলার সামনে ৩ চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ:  ০১ নভেম্বর ২০২২, ১৩:১২
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তনে ব্রাজিলজুড়ে চলছে উদযাপন। চরম ডানপন্থি জইর বলসোনারোকে পরাজিত করে ক্ষমতায় ফিরলেও অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। দারিদ্র্য নিরসন, আবাসন সমস্যা ও পৃথিবীর ‘ফুসফুস খ্যাত’ আমাজনের ক্ষত সারিয়ে তোলার মতো কঠিন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে বামপন্থী এই নেতাকে।

আগামী ১ জানুয়ারি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন লুলা। অবধারিতভাবেই তাকে বলসোনারো সরকারের রেখে যাওয়া দুরবস্থা মোকাবিলায় কোমর বেঁধে কাজ করতে হবে। দারিদ্র্য, আবাসন ও আমাজনের মতো ইস্যুর সঙ্গে ব্রাজিলীয়দের মধ্যে সৃষ্ট বিভেদও দূর করতে হবে তাঁকে।

বলসোনারো সরকারের আমলে দেশটির ৩ কোটির বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে পড়েছে, দরিদ্র হয়েছে ১০ কোটি মানুষ। আমাজন উজাড়ে বলসোনারোর নীতি ব্রাজিলকে সমালোচিত করেছে বিশ্বজুড়ে। এসব সংকট কাটিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন লুলা।

নির্বাচনে জয়ের পরের ভাষণেও দারিদ্র্য মোকাবিলাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন লুলা। ‘মানুষ না খেয়ে থাকবেন’ তা কোনোভাবেই মানতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। লুলা বলেন, ‘আমাদের দেশ বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনে তৃতীয় হওয়ার পরও লাখ লাখ শিশু, নারী ও পুরুষ না খেয়ে থাকছেন। এটি হতে পারে না। ব্রাজিলের প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটা দিন যাতে তিনবেলা খেতে পান, তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।’

২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন লুলা। সে সময় তাঁর সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক নীতি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছিল। এবারও তিনি সেই নীতিই অব্যাহত রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থায় লুলার পক্ষে আগের মতো সাফল্য পাওয়া কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া কংগ্রেসে বলসোনারোর সমর্থকদের জোর বাধার সম্মুখীন হতে পারেন তিনি।

দেশবাসীকে সাধ্যের মধ্যে আবাসন সুবিধা এবং গ্রাম পর্যায় বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লুলা। তবে সবার জন্য সাধ্যমতো আবাসন খুব সহজ নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, লুলার উদারনীতি উচ্চাভিলাষে পর্যবসিত হতে পারে।

২০১৯ সালে বলসোনারো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ক্রমাগত আমাজন বন ধ্বংসের হার বাড়তে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, বন উজাড় ও অগ্নিকাণ্ডের কারণে আগের দশকের চেয়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে কার্বন নিঃস্বরণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর আমাজনের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর এলাকা আগুনে পুড়ে যায়। পৃথিবীর ‘ফুসফুস খ্যাত’ আমাজন বনাঞ্চল সুরক্ষার বিষয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় জোর দিয়েছিলেন লুলা। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সামনে তাই আমাজনের ক্ষত সারিয়ে তোলা বড় চ্যালেঞ্জ।

গত সপ্তাহে ব্রাজিলবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেন লুলা। সেখানে নারী–পুরুষের সমান মজুরি, হাসপাতালগুলোয় অস্ত্রোপচার ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত করা এবং নবজাতকদের জন্য ডে–কেয়ারের ব্যবস্থা অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিল। তবে এই তালিকা ‘খুব একটা কার্যকর হবে’ বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।

এদিকে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উপায় ও অর্থায়ন নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি লুলা। করোনা মহামারি পরবর্তী দুরাবস্থা কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবের চ্যালেঞ্জ কতটা দক্ষ হাতে মোকাবিলা করতে পারেন ৭৭ বছর বয়সী লুলা, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, এনবিসি, ব্লুমবার্গ

লুলা,ব্রাজিল,প্রেসিডেন্ট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close