• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

বিশ্বে বাস্তুচ্যুত ১১ কোটি মানুষ, জাতিসংঘের উদ্বেগ

প্রকাশ:  ১৪ জুন ২০২৩, ২৩:২৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ১১ কোটিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বুধবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ, আফগানিস্তান সংকট এবং সুদানের গৃহযুদ্ধের কারণে শরণার্থীর মোট সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। এদের অনেকে অভ্যন্তরীণভাবে নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত।

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। নিজ দেশ ও ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ১ কোটি ৯১ লাখ বেশি।

১৯৭৫ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে এটি সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি বৃদ্ধির তথ্য।

ইউক্রেন ও সুদান সংঘাতে লাখ লাখ উদ্বাস্তু নতুন করে যোগ হওয়ায় বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ১১ কোটিতে পৌঁছেছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।

তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সহিংসতা বাড়ছে। এতে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হচ্ছে।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী মোট ৩৫.৩ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তু বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ৬২.৫ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

গ্র্যান্ডি বলেন, “আমার আশঙ্কা হলো, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার উল্লেখ করেন, প্রায় ৭৬% শরণার্থী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে পালিয়ে গেছে, যেখানে ৭০% প্রতিবেশী দেশে থেকে গেছে।

যুদ্ধ, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলোকে দায়ী করেছেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা। ইউএনএইচসিআরের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মোট শরণার্থী এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন এমন মানুষের প্রায় অর্ধেকই এসেছে সিরিয়া, ইউক্রেন ও আফগানিস্তানের।

শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম-কানুন এবং অনেক জায়গা থেকে তাদের ফেরত পাঠানোয় উদ্বেগ জানিয়ে সবার সহায়তা আশা করেন গ্র্যান্ডি।

“১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের মূলনীতি অনুসরণে দেশগুলোর মধ্যে শিথিলতার মাত্রা বাড়তে দেখছি আমরা, এমনকি ওই কনভেনশনে চুক্তিবদ্ধ অনেক দেশের মধ্যেও এমনটা দেখা যাচ্ছে,” ব্রিফিংয়ে বলেন তিনি।

গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীরা অভিবাসী ও শরণার্থীদের বিষয়ে দায়িত্ব বণ্টনের চুক্তিতে পৌঁছেছেন, এমন বেশকিছু অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি গ্র্যান্ডি।

“কিছু বিষয়ে উদ্বেগ আছে, তা সত্ত্বেও (ইইউ মন্ত্রীদের চুক্তি) এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি আমি। ইউরোপীয়রা কোনো এক বিষয়ে একমত হয়েছে, এতে আমরা খুব খুশি,” বলেছেন তিনি।

নতুন ভয় সুদান

বাস্তুচ্যুতির কারণ ও প্রভাব কমানোর জন্য জরুরি বৈশ্বিক পদক্ষেপের আবেদন জানিয়ে গ্র্যান্ডি বলেন, “এই বছর ইউএনএইচসিআর ভালো আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে নেই।”

“সুদান সংকটের জন্য তহবিল চাওয়া হলেও মাত্র ১৬% তহবিল পাওয়া গেছে।”

এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশটিতে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪,৬৭,০০০ মানুষ সুদান ছেড়ে পালিয়েছে, যখন ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ছয় মাসে সুদান থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ শরণার্থীর পরিসংখ্যানের মধ্যে তিনি বলেছিলেন, “এখন আমি ভাবছি এটি খুব কম।”

২০২২ সালের শেষে সিরীয় শরণার্থী ছিল সাড়ে ছয় লাখ। যার মধ্যে সাড়ে তিন লাখ প্রতিবেশী তুরস্কে অবস্থান করছেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ অভিযান শুরু হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দ্রুততম শরণার্থী প্রবাহ শুরু হয়েছিল। যেখানে ইউক্রেন থেকে ৫৭ লাখ মানুষ শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছে।

২০২২ সালে তিন লাখ ৩৯ হাজারেরও বেশি শরণার্থী ৩৮টি দেশে ফিরে গেছে। যেখানে ৫৭ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ দেশে ফিরেছে।

সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া দেশগুলো হলো তুরস্ক (৩৬ লাখ), ইরান (৩৪ লাখ), কলম্বিয়া (২৫ লাখ), জার্মানি (২১ লাখ) এবং পাকিস্তান (১৭ লাখ)।

জাতিসংঘ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close