• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

সৌদি আরবে তীব্র গরম, পুড়ছেন হাজিরা

প্রকাশ:  ২৭ জুন ২০২৩, ২০:৪৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

“মোবাইল ফোন গরম হয়ে উঠছে, ফুটপাত মনে হচ্ছে গরম ফ্রাই প্যান, তবুও চলতে হচ্ছে” কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল আল-আসাদ। গরমের তীব্রতা উপেক্ষা করেই সৌদি আরবে হজের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিচ্ছেন তিনি।

৪৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নাগরিক বলছেন, “৪৬ ডিগ্রি (১১৫ ফারেনহাইট) তাপমাত্রা তার কষ্টের কারণ হয়ে উঠেছে।”

সম্পর্কিত খবর

    ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম শহর মক্কার এই আবাসন ব্যবসায়ীর মতে, “এটি আরও সহজে করতে পারলে তার জন্য সুবিধা হতো।”

    সুর্যের আলোয় লালচে হয়েছ উঠেছে তার মুখ। এরমধ্যেই এএফপিকে আল-আসাদ বলেন, “নবিজি যেভাবে হজ করেছিলেন। আমাদেরও সেভাবে করতে হবে।”

    বৈশ্বিক উষ্ণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদির মরুভূমির জলবায়ুকে আরও গরম করে তুলেছে। এটি ১,৪০০ বছর আগে মোহাম্মদের সময়ের তাপমাত্রার বহুগুণ বেশি।

    ওয়াশিংটন ভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য ইন্সটিটিউটের অনাবাসী বিশেষজ্ঞ করিম এলজেন্ডি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে গত তাপমাত্রা চার দশকে ২.৫ ডিগ্রি বেড়েছে।”

    তিনি এএফপিকে বলেন, “শতাব্দীর শেষে গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে।”

    তীব্র গরমে মুসল্লিদের কিছুটা স্বস্তি দিতে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের বাইরে লম্বা খুঁটি থেকে পানি ছিটানো হচ্ছে।

    গরমের কারণে হাজিরা অনেকেই হোটেল, বিপণী বিতানের শীতল মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন।

    কর্তৃপক্ষ জানায়, হিটস্ট্রোক ও অন্য অসুস্থতায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ৩২,০০০ জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। বিনামূল্যে পানির বোতল সরবরাহ করা হচ্ছে।

    সরাসরি সূর্যের আলোর গরম থেকে বাঁচতে অনেকেই মাথার ওপর ছাতা ধরে হাঁটছেন। কেউ কেউ জায়নামাজ ও অন্যান্য কাপড় মাথার ওপর ধরে রাখছেন।

    কানাডায় বসবাস করা সিরিয়ান নাগরিক ও হজযাত্রী নিবাল মোহাম্মদ বলেন, “এখানে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক। এটি একরকম জাহান্নামের উত্তাপের মতো।”

    “আমি আমার হজ শেষ করে দ্রুত ফিরে যেতে চাই,” যোগ করেন তিনি।

    তেল নির্ভর অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবের অর্থ উপার্জনের অন্যতম বড় আয়ের উৎস হজ। এটি প্রতিবছরই চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে পালন করা হয়। ফলে সবসময় হজ গ্রীষ্মকালে হয় না।

    কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ হজযাত্রী সৌদি আরব গেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এ বছর সর্বোচ্চ বয়সসীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বয়স্ক অনেকেই হজ পালন করতে গেছেন।

    পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চলের একটিতে গ্রীষ্মকালে বাইরে মানুষের যাতায়াত খুবই বিপদজনক। এতে ডিহাইড্রেশন ও হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। এমনকি গরমের কারণে সৌদি আরবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাইরে শ্রমিকদের কাজ করাও নিষিদ্ধ থাকে।

    উপসাগরীয় জলবায়ু এতোটাই খারাপ অবস্থায় আছে যে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল জানায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের কিছু অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

    তবে ইন্দোনেশিয়া থেকে হজ করতে আসা বোধির জন্য তাপ কোনো বাধা নয়।

    ৪০ বছর বয়সী এই হাজী বলেন, “আমাদের হৃদয়ে বিশ্বাস আছে। আমরা পারবো।”

    তবে ভিড়ের কারণে বেশ উদ্বিগ্ন আল-আসাদের স্ত্রী লায়লা। তিনি বলেন, “এতো মানুষের ভিড়। এটাই বড় সমস্যা, তার ওপর অতিরিক্ত গরম।”

    গ্র্যান্ড মসজিদের কাছে ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়া তিউনিসিয়ার নাগরিক আহলাম সাইয়ি বলেন, “সৌদির তাপ অন্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি।”

    তবে তিনি কোনো অভিযোগ করতে নারাজ। বরং হজের মধ্যে কষ্ট করতে পারাটাও তার কাছে একটি বড় অর্জন। তিনি বলেন, “কষ্টের সমান প্রতিদান আল্লাহ দেবেন।”

    হজ ও বছর জুড়ে ওমরাহ থেকে সৌদি আরব বছরে ১২ বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি তেল ছাড়াও অন্য খাতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আনতে পর্যটনে বিনিয়োগ করছে। সেজন্য মক্কায়ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞ নিয়েছে সৌদি রাজ পরিবার।

    সৌদি আরব হজ
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close