• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইমরান ইনিংস শেষ, মাঠে নওয়াজ

প্রকাশ:  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:২৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সারা বছরই রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাটল পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের। শুরুটা ছিল তাকে ঘিরেই- শেষটাও তিনিই। পাকিস্তানে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন বিগত নির্বাচনে ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিশ্বনন্দিত এই ক্রিকেটার। তবে ক্রিকেট মাঠের ২২ গজে বরাবর দুর্দান্ত সফলতা দেখিয়ে আসলেও রাজনীতির ইনিংসে হেরে তিনি এখন জেলে। পরিবর্তে ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পাকিস্তানের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আর এই উত্তাপেই পুড়ে ছাই ইমরান খানের নয়া পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন! ডন, জিইও নিউজ।

জাতীয় পরিষদে আনা আলোচিত এক অনাস্থা প্রস্তাবে গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এ বিষয়ে এক কূটনৈতিক তারবার্তার বরাত দিয়ে ইমরানের খানের অভিযোগ ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে। এ কাজে সায় ছিল সামরিক বাহিনীর। এরপরই সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্রমশ সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে ইমরানের। বিভিন্ন সভাসমাবেশে সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন আসিম মুনির। ক্ষমতায় থাকাকালে তাকে কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ আছে ইমরানের বিরুদ্ধে।

ইমরানের খানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পর একের পর এক মামলা হতে থাকে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে তোশাখানা, তারাবার্তা ফাঁস ও আল–কাদির ট্রাস্ট মামলা উল্লেখযোগ্য। মামলায় হাজিরা দিতে গেলে ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ইমরান খানের গ্রেফতারের পরই নজিরবিহীন এক সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানজুড়ে। এমনকি জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (জিএইচকিউ) নামে পরিচিত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ঢুকেও হামলা চালান ইমরান সমর্থকরা। এদনি সদর দপ্তরে ঢুকে সেনাবাহিনীর পতাকা সংবলিত সাইনবোর্ডও খুলে ফেলেছিলেন তারা। লাহোরে সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ জেনারেলের বাসভবনে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই ঘটনাটিকে ইতিহাসে ‘কালোদিন’ বলে অভিহিত করেন। যদিও ইমরানকে ওই যাত্রায় বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিতে থাকে পাকিস্তানের সেনারা। সবশেষে আদালতের রায় অনুযায়ী তোশাখানা মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর তাকে ৫ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের উচ্চ আদালত তার এ সাজা স্থগিত করেন। কিন্তু তারবার্তা ফাঁসের মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকতে হচ্ছে তাকে।

মামলায় বিপর্যস্ত ইমরানের খানের নিজের দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয়েছে। পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান হয়েছেন গহর আলী খান। পাকিস্তানের ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নিজ শহর মিনওয়ালিসহ দুই আসনে কারাগার থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ইমরান খানের দল। তবে পিটিআইয়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। কারণ সম্প্রতি পিটিআইকে বেআইনি ঘোষণাসহ ইমরান খানের দলীয় প্রতীক ব্যাট বাতিল করেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধে গিয়ে ইমরানের পরিণতিই হয়েছিল নওয়াজ শরিফের। কারাগার থেকে ‘উন্নত চিকিৎসার’ জন্য ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি। মূলত ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ছক তিনি কষেছিলেন লন্ডনে বসেই। সাধারণ নির্বাচনের লক্ষ্যে ৯ আগস্ট জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে নওয়াজের ছোট শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অবসান ঘটে।

পরপরই শুরু হয় নওয়াজের দেশে ফেরার গুঞ্জন। পরবর্তী সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে পরে গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২১ অক্টোবর দেশে ফেরেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ।

দেশে ফিরেই একের পর এক মামলা থেকে খালাস পেতে থাকেন তিনি। নওয়াজের মামলা থেকে খালাস পাওয়াকে সেনাবাহিনীসহ দেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমঝোতার অংশ বলে মনে করেন অনেকে।

রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক সংকটের চরম মাত্রায় পৌঁছেছে পাকিস্তান। মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে। এ বছরই পাকিস্তানি রুপির মান রেকর্ড সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। বছরের শুরুর মাসেই দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। পাকিস্তানের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) গত মে মাসে রেকর্ড ৩৮ শতাংশ বাড়ে। মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় দেশটির নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পাকিস্তানে বিনামূল্যে ময়দা কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। মার্চ-এপ্রিলে করাচিতে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে পদদলিত হয়ে ১০ জনের বেশি লোক নিহত হন।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াও ২০২৩ সালের কয়েকটি সন্ত্রাসী ও আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা পাকিস্তানকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই বছরের প্রথম ৬ মাসে অন্তত ২৭১টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৮৯ জন নিহত এবং ৬৫৬ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়ায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের দুটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। এতে নিহত হয়েছিলেন ৫৭ জন।

ইমরান,রাজনৈতিক,নওয়াজ,পাকিস্তান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close