• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

মধ্যপ্রাচ্য সফরে ব্লিঙ্কেন, যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে

প্রকাশ:  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৪৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ইসরাইলসহ আরব মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার জন্য মধ্যপ্রাচ্য সফরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গাজা যুদ্ধের ‘পরবর্তী পর্যায়’ নিয়ে আলোচনা করতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) তিনি সেখানে যান। শুক্রবার ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল এ খবর জানিয়েছে।

এ অঞ্চলের একাধিক দেশ সফর করবেন এই শীর্ষ কূটনীতিক। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েল মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছেন, এ সফরের আওতায় তুরস্ক, গ্রিস, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইসরাইল, পশ্চিম তীর এবং মিসরে যাত্রাবিরতি করবেন ব্লিঙ্কেন।

এ সময় ফিলিস্তিনিদের সহায়তার জন্য এবং উত্তর গাজায় বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে ইসরাইলকে চাপ দেবেন তিনি। কেননা আরৌরি হত্যার পর এ অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মিলার বলেছেন, গাজা যুদ্ধের ‘পরবর্তী পর্যায়ে রূপান্তর’ নিয়ে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন ব্লিঙ্কেন।

মিলার বলেন, বিশেষত যুদ্ধের তীব্রতা ও মাত্রা কমানোর মাধ্যমে ‘ফিলিস্তিনিদের নিজ বাড়ি এবং আশপাশের এলাকায় ফিরে যেতে সক্ষম করার’ লক্ষ্যেই এ আলোচনা।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে- এমন আশঙ্কার পুনরুত্থানের মধ্যেই বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান ব্লিঙ্কেন।

উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। হামাস এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা ওই এলাকায় রয়ে গেছে- এমন যুক্তি দেখিয়ে যুদ্ধের প্রথম দিকে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার জন্য বৃহস্পতিবার একটি পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। ওই পরিকল্পনায় তিনি বলেছিলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের হাতে জিম্মি থাকা সবাইকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না।

মিলারের মতে, ইসরাইলি সরকারকে ‘গাজায় মানবিক সহায়তা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে’ চাপ দেবেন ব্লিঙ্কেন। যুদ্ধের আগে, গাজায় প্রতিদিন পণ্য বহনকারী প্রায় ৫০০টি ট্রাক প্রবেশ করত। যুদ্ধের পর থেকে এ সংখ্যা কমে ১০০টির নিচে নেমে এসেছে। যুদ্ধ চলাকালীন শুধু নভেম্বরের শেষের দিকে সাত দিনের যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিদিন ২০০টি করে ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছিল।

মিলার আরও বলেন, গাজায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা প্রশমিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে ইসরাইলি সমকক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করবেন ব্লিঙ্কেন।

এছাড়া ‘পশ্চিম তীরে উত্তেজনা কমাতে আরও কী কী করা প্রয়োজন’ সে সম্পর্কেও ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্য সফর চলাকালীন ব্লিঙ্কেনের এজেন্ডার শীর্ষে থাকবে- গাজায় আমেরিকান নাগরিকসহ অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা।

মিলার বলেছিলেন, তাদের সবাইকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত মার্কিন এ সচিব বিশ্রাম নেবেন না। গাজার সংঘাত যাতে আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত না হয় তা রোধে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং ‘এ অঞ্চলের অন্যান্য দলের সঙ্গে এক হয়ে এই সংঘাতের বিস্তৃতি এড়াতে কিভাবে তাদের প্রভাব ব্যবহার করা যায়— এ রকম নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবেন।

মিলার আরও বলেছেন, সেই আলোচনার অংশ হিসেবে ব্লিঙ্কেন লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুথিদের আক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উত্থাপন করবেন।

তিনি বলেন, এ সফরে প্রতিটি বিষয়ে কথোপকথন সহজ হবে বলে মনে করছি না আমরা। এই অঞ্চলে স্পষ্টতই কঠিন সমস্যা রয়েছে। তবে সেক্রেটারি বিশ্বাস করেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং তিনি সামনের দিনগুলো তা করতে প্রস্তুত।

বৈরুতে কথিত ইসরাইলি বিমান হামলায় হামাসের সন্ত্রাসী প্রধান সালেহ আল-আরৌরি নিহত হওয়ার তিন দিনেরও কম সময়ের মধ্যে এবং ইরানের বিপ্লবী গার্ড জেনারেল কাসেম সোলেইমানির স্মৃতিসৌধে জোড়া বিস্ফোরণে কয়েক ডজন লোক নিহত হওয়ার একদিন পর ব্লিঙ্কেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু হয়েছে।

উভয় ঘটনার কারণে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হবে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আরৌরির হত্যার পর ইসরাইলকে দায়ী করে ইরানের লেবানিজ প্রক্সি হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ যুদ্ধের হুমকি দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, এটি ‘একটি বড়, বিপজ্জনক অপরাধ যা নিয়ে আমরা নীরব থাকতে পারি না।’

দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জেরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে ব্লিঙ্কেনের চতুর্থ সফর এটি।

মূলত চলতি সপ্তাহের শেষদিকে ব্লিঙ্কেনের ইসরাইলে পৌঁছার কথা ছিল। তবে মঙ্গলবার জানানো হয়, এ সপ্তাহের সফর বিলম্বিত হয়ে পরের সপ্তাহের শুরুতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্য,ব্লিঙ্কেন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close