• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্য করে আমেরিকা ও ব্রিটেনের বিমান হামলা

প্রকাশ:  ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:২৬
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য। দুই দেশের সরকার প্রধানই ইয়েমেনে হামলার এই খবর নিশ্চিত করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত হুথিদের হামলার জবাব হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

হুথিদের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যকে হুশিয়ার করে বলেছে, এইনির্মম আগ্রাসনেরজন্য তাদেরকেচড়া মূল্য দিতে হবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, রয়্যাল এয়ারফোর্সের যুদ্ধবিমানগুলো সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করেসুনির্দিষ্ট টার্গেট লক্ষ্য করে হামলাচালাতে সহায়তা করেছে।

তিনি আরো বলেন, এই হামলা ‌‘সীমিত, দরকারি এবং আত্মরক্ষার নিমিত্তে যথাযথ মাত্রার পদক্ষেপ

বাইডেন বলেছেন, এই মিশনে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং বাহরাইন সমর্থন দিয়েছে।

ইয়েমেনের রাজধানী সানা, হুথিদের নিয়ন্ত্রণ লোহিত সাগরের হুদায়দাহ বন্দর, ধামার এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হুথিদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাদায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

হুথিরা ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা বলছে, ইসরায়েলগামী জাহাজে হামলা চালিয়ে তারা মিত্র গোষ্ঠী হামাসকে সহায়তা করছে।

হামলার বর্ণনা দিয়েছে পেন্টাগন

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে, যুদ্ধ জাহাজ থেকে তমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং মার্কিন জেট বিমান থেকে রাজধানী সানা, হুদায়দাহ এবং হুথিদের লোহিত সাগরের শক্ত ঘাটির বন্দরগুলোসহ মোট ১২টির বেশি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।

সাইপ্রাসের আক্রোতিরি ঘাটি থেকে উড্ডয়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি আরএএফ টাইফুন জেট বিমান দুটি হুথি টার্গেট লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

অবাধ বাণিজ্য চলাচল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আরো পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে হুশিয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়ড অস্টিন একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘হুথিদের সক্ষমতা ব্যাহত করতে এবং কমিয়ে আনতেএই যৌথ সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এই পদক্ষেপের আওতায় হুথিদের পাইলট বিহীন উড্ডয়ন যান, চালকবিহীন জাহাজ, স্থল-হামলায় ব্যবহৃত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, উপকূলীয় রাডার এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেন্টাগনের প্রধান বাস্তব সময়ে হাসপাতাল থেকে এই অভিযান পর্যবেক্ষণ করেছেন। মূত্রথলির ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের কারণে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

এই কর্মকর্তা বলেন, অস্টিনসক্রিয়ভাবে জড়িতছিলেন এবং এই অভিযান নিয়ে গত ৭২ ঘণ্টায় তিনি অন্তত দুইবার প্রেসিডেন্টের সাথে আলাপ করেছেন।

চলতি সপ্তাহে অস্টিন হোয়াইট হাউজে চাপের মুখে রয়েছেন কারণ তিনি তার হাসপাতাল নিবির পরিচর্যা ইউনিটে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়ে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

যা বলছে যুক্তরাজ্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাথে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও। এতে বলা হয়েছে, দেশটির রয়্যাল এয়ার ফোর্সইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ব্যবহৃত স্থাপনায়চালানো হামলায় অংশ নিয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সব সময় চলাচলে স্বাধীনতা এবং বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহের পক্ষে অবস্থান নেবে।

‘এ কারণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে সীমিত, প্রয়োজনীয় এবং আত্মরক্ষায় যথাযথ মাত্রার পদক্ষেপ নিয়েছি। এই অভিযানে অংশ না নিলেও এই হামলা সংশ্লিষ্ট টার্গেটগুলোর বিষয়ে সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস, কানাডা এবং বাহরাইন। হুথিদের সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে বৈশ্বিক জাহাজ চলাচল সুরক্ষিত করতে এই হামলা চালানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে সংযমের আহ্বান সৌদি আরবের

সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোকে হামলার ক্ষেত্রে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবংউত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, ‘গভীর উদ্বেগেরসাথে রিয়াদ পুরো পরিস্থিতির উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে।

হুথিরা এখনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি- যুক্তরাষ্ট্র

সাংবাদিকদের টেলিফোনে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুথি কমান্ডারদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরণের সামরিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।

‘এখনো পর্যন্ত আমাদের যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য জোটভুক্ত সদস্যদের লক্ষ্য করে কোন ধরনের সরাসরি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখিনি,’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান।

‘‘আমরা অবশ্যই আমাদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু এখনো আমরা হুথিদের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া দেখিনি,” ওই কর্মকর্তা আরো বলেন।

আত্মরক্ষার জন্যই এই হামলা?

অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, কোরিয়া, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।

এই বিবৃতিতে হুথিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরবড় ধরণের ঐক্যমত্যরয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং একই সাথে লোহিত সাগরে তাদের হামলা বন্ধ করতে বিদ্রোহীদের প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের আহ্বানের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বহুপাক্ষিক এই হামলাব্যক্তিগত সামগ্রিক আত্মরক্ষার স্বভাবগত অধিকারের আওতায়ইচালানো হয়েছে।

‘এই নির্ভুল হামলাগুলো হুথিদের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত এবং কমানোর উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে যা তারা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলপথে বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক নাবিকদের জীবনের প্রতি হুমকি হিসেবে ব্যবহার করতো।

জোটভুক্ত দেশগুলো বলে, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে উত্তেজনা কমিয়ে আনা এবং লোহিত সাগরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

যা বলছে হুথিরা

হুথিদের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-ইজ্জি ইয়েমেনি টেলিভিশন চ্যানেল আল-মাসিরাহ এর সাতে কথা বলেছেন। তাকে উদ্ধৃত করে ওই চ্যানেলের খবরে বলা হচ্ছে, তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে এই নির্মম আগ্রাসনের জন্য কড়া মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

হুথিদের পরিচালিত -মাসিরাহ টেলিভিশন চ্যানেল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোথায় কোথায় হামলা চালানো হয়েছে সে বিষয়ে টেলিগ্রামে পোস্ট করেছে।

চ্যানেলটি বলছে, রাজধানী সানাসহ দেশটির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত আল-দুলাইমি বিমান ঘাটিতে আঘাত হেনেছে।

অন্যান্য লক্ষবস্তুর মধ্যে রয়েছে, সাদা শহরের পূর্বাঞ্চলে একটি শিবির, হুদাইদাহ বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা, তাইজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা এবং উপকূলীয় শহরগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে। খবর: বিবিসি বাংলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

বিমান হামলা,ব্রিটেন,আমেরিকা,ইয়েমেন,হুথি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close