• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পাকিস্তানের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রথম হিন্দু নারী সাবিরা'র একান্ত সাক্ষাৎকার

প্রকাশ:  ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তানের গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো হিন্দু নারী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আলাদাভাবে আলোচনায় এসেছেন ডা. সাবিরা পারকাশ।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থী হিসেবে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলার ২৫ নম্বর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।

ঢাকা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি অয়ানাংশ মৈত্র কথা বলেছেন আলোচিত এই নারীর সঙ্গে।

সাবিরা পারকাশ ২০২২ সালে অ্যাবোটাবাদ ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। সাবিরা পারকাশের বাবা ওম পারকাশও পেশায় একজন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎক এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি খাইবার পাখতুনখোয়া শাখার সংগঠক। সাবিরা নিজে পিপিপির বুনের জেলা শাখার নারী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক।

তবে তফসিল ঘোষণার এক মাস আগেও “মুখচোরা” হিসেবে পরিচিত সাবিরার ভাবনায় ছিল না নির্বাচনে লড়াই করার বিষয়টি।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, “জানেন, আমি এতটাই লাজুক ছিলাম যে বাড়িতে অতিথিরা এলে আমি আর আমার দশ বছরের ছোট ভাই ড্যানিয়েল প্রকাশ ওয়াশরুমে লুকিয়ে থাকতাম। অ্যাবোটাবাদের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট এমবিবিএস করার সময়ও প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে খুব স্নায়বিক দুর্বলতায় ভুগতাম।"

আলাপের শুরুতে তার কথার মধ্যে বেশ একটা আলগা দুর্বলতা ছিল, নিদারুণ শৈত্যপ্রবাহে দস্তানার মধ্যে থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা আঙুল-দলের মতো। কথা এগিয়ে যেতেই বলতে থাকেন কীভাবে মানুষের সাহচর্য এবং সংস্পর্শ তাকে তাপ দিতে থাকে।

একসময় ওই আলগা ইতস্তত আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়। ধরে ফেলেন মাইক্রোফোন। তারপর জনসভা -মানুষ আর মানুষের দরিয়ায় ভেসে যাওয়া।

স্থানীয় রীতি মেনে বাইরে বেরোলেই মাথায় মাথায় রাখেন ওড়না। তাকে ঘিরে কেন্দ্রীভূত হয় মানুষ। তৈরি হয় এক কৌতূহল ও বিস্ময়ের বলয় ।

ঢাকা ট্রিবিউনকে জানালেন, রাজনীতিবিদ আলী বরদির মাধ্যমে ৪ জানুয়ারি সাক্ষাৎ হয় পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বিলওয়াল ভুট্টার সঙ্গে। বর্তমানে পাক বিদেশ মন্ত্রী ভুট্টো তাকে দেখা মাত্রই বলে ওঠেন, "আপতো বাড়ি ফেমাস হো গেয়ি হো" ( আরে আপনি তো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন) ।

শোনালেন খাইবার পাখতুনখাওয়ার বাসভবন থেকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ভ্রমণ করে লাহোরে ভুট্টোর প্রাসাদে গিয়ে বিল্লাল ভুট্টোর ব্যক্তিত্বের অভিভূত হওয়ার কথা। এর আগে গত ১৩ ই ডিসেম্বর পেশাওয়ার উইমেন ওয়ার্কার্স কনভেনশনে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়।

সাবিরার দুই ছোট ভাই সঞ্জিত আর ড্যানিয়েল। সঞ্জিত যুক্তরাজ্য থেকে আইন পেশায় পড়ালেখা শেষ করে লাহোরে বিল্লাল ভুট্টোর অফিসে চাকরি করেন ।

সাবিরা রাজনীতিতে আসেন পিপিপির নারী বিভাগের নেত্রী রুবিনা খালিদের সংস্পর্শে এসে । তার নিজের জেলা বুনেরে মোট তিনটি নির্বাচনি এলাকা। “ডটার অব বুনের” নামে খ্যাত সাবিরা এখন তার দল পিপিপির হয়ে নির্বাচনি প্রচারণায় যান জেলার বাকি দুটি এলাকাতেও।

রাজনীতি তার জীবনে বড় রকমের পরিবর্তন এনেছে বলে জানান ঢাকা ট্রিবিউনকে। তিনি বলেন, "প্রায়ই খাওয়ার সময় পাই না, ইদানিং ডাক্তার হিসেবে হাউস জব থাকাকালীন ৭ কেজি ওজন কমেছে। আর ইতিমধ্যে রাজনীতিতে এসে এক মাসে তিন কেজি ওজন হারিয়েছি।"

ডা. সাবিরা প্রকাশ তার চোখ ঢাকা রাখেন এক ক্ষীণ সোনালী রিমের বড় চশমায়। তার মধ্যেই চোখ গলিয়ে দেখেন "দ্য প্যারেন্ট ট্রাপ" আর আশির দশকের কমেডি মুভিগুলো। পড়েন জেন অস্টিন। নির্বাচনে প্রার্থী হওযায় ইমরান খানের পি টি আই এবং জামায়াত-উল্লেমা-ইসলাম ইসলামের সমর্থকরা তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুদেবার্তায় জানাচ্ছেন শুভেচ্ছা।

বিলওয়াল ভুট্টোর সঙ্গে সাবিরাবিলওয়াল ভুট্টোর সঙ্গে সাবিরা

পিপিপির বেনজির ভুট্টো তার আদর্শ। বেনজির পুত্র বিলাওয়াল তার নেতা। আসন্ন নির্বাচনে তার ইশতেহার দারিদ্র্যতা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে ঘিরে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে তার এলাকা খাইবার পাখতুনখাওয়ার করুণ দশা দেখেছেন খুব কাছ থেকে। সেই কথা উল্লেখ করে বলেন, “কোনো কিছুই অসম্ভব না, শুধু প্রথম পদক্ষেপটা নেওয়া ভীষণ জরুরি।”

নির্বাচন,নারী,পাকিস্তান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close