• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছে :জি এম কাদের

প্রকাশ:  ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য জাতীয় পার্টির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ ছিল বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তবে জাতীয় পার্টি অংশ না নিলে নির্বাচন হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এমনকি বিএনপি নিজেদের আন্দোলনের ব্যর্থতার দায় তার ওপর চাপাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণ, বিএনপির আন্দোলন ও অভিযোগের বিষয়ে তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের বলেন, “দ্বাদশ নির্বাচনে যাবার জন্য বিভিন্ন চাপ এসেছিল। ১৭ ডিসেম্বর (২০২৩) আমি নির্বাচন থেকে সরে আসার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তারপর চাপ আসলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ চাপের কথা আমি বিস্তারিত বলবো না আপনারা বুঝে নেবেন। পরোক্ষ চাপ হলো— যদি আমি নির্বাচনে না যাই, তাহলেও নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমার এবং আমার সঙ্গে যারা থাকবেন তাদের নেতৃত্বে নয়, অন্যদের দিয়ে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং তাতে বুঝলাম, জাতীয় পার্টি গৃহপালিত দল হিসেবে নির্বাচন করে রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে। আমরা রাজনৈতিক মঞ্চ হারাবো তাতে ভবিষ্যতে আমরা দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারবো না।”

তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম, আমাদের নিশ্চিত করুন নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ। প্রশাসন দলীয় কর্মীদের মতো আচরণ করবে না। তারা কথা দিলেন তারা সেটা করবেন। এটা করতে গিয়ে তারা আমার স্ত্রীর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়ে বললেন, বাকিগুলো প্রসেসে আছে। বাইরে প্রচার করলেন, আমি স্ত্রীর মনোনয়নের জন্য দলকে বিক্রি করে নির্বাচনে এসেছি।”

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ আগ্রহী ছিল না এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আগ্রহী ছিল না বলেও মন্তব্য করেন জি এম কাদের।

তিনি বলেন, “আমাদের ধারণা ছিল— বিএনপি, আমরা ও আওয়ামীলীগ একসঙ্গে নির্বাচন করলে দর কষাকষির সুযোগ হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষই চাইবে, আমাদের সরিয়ে নিয়ে আসতে। ফলে আমরা সেখানে একটা রাজনৈতিক মূল্য পাবো। কিন্তু আমি যখন দেখলাম, বিএনপি আন্দোলনের কয়েকটি ফাঁদে পড়ে গেলো। এটা তাদের দোষ দিচ্ছি না। আন্দোলন করলে কিছু সহিংসতা হয়, বাইরে থেকে এসব সহিংসতা তৈরি করা হয়। কাজেই এই সহিংসতার নাম করে তাদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হলো। তাদের সাজা দেওয়া হলো পুরনো মামলায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা হলো। ফলে মাঠে থাকলাম আমরা। তখন মাঠে থাকলাম আমরা আর আওয়ামী লীগ।”

নির্বাচনের আগে বিএনপির যে আন্দোলন চলছিল তা সফল হবে না— এটি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, এমন মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, “বাংলাদেশে কোনো গণআন্দোলনের মুখে সরকার পরিবর্তন হয়নি। আন্দোলন হয়েছে, মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়েছে— এর সুযোগে অন্য একটি শক্তি এসে সরকারকে পরিবর্তন করেছে। এটা হলো বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সত্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তিন মাস গণআন্দোলনের মুখে দেশ সম্পূর্ণ অচল হওয়ার পরেও সরকার পরিবর্তন হয়নি। তাই ১০ লাখ, ৫০ লাখ নয়, এক কোটি মানুষও রাস্তায় নামলে সরকারের পরিবর্তন হবে না। বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। নির্বাচন বন্ধ করা সম্ভব হবে না— এটাতে আমি নিশ্চিত ছিলাম। তার মানে নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে, সরকার ৫ বছর থাকবে।”

জি এম কাদের বলেন, “গেল নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা গেলে যা হয়েছে, না গেলেও তাই হতো। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি হয়তো যেত। সরকারের এমন প্রস্তুতি ছিল। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলেও বর্তমান অবস্থা এমনই হতো। বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে। আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। দেশের স্বার্থে তারা কাজ করছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।”

তিনি বলেন, “তাদের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছে— আমি একটা বিশাল নেতা, আমি নির্বাচনে না গেলে নাকি দেশের ভবিষ্যতই চেঞ্জ হয়ে যেতো। আমি নিজেকে এত বড় নেতা মনে করি না। আমি নির্বাচনে যেতাম আর না যেতাম, দেশ এভাবেই চলতো। এমন পরিস্থিতিই থাকতো।”

তিনি আরও বলেন, “আমাকে দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি বলছে, আমি নির্বাচনে না গেলেই নাকি নির্বাচন বানচাল হতো, আর তারা ক্ষমতায় আসতে পারতো। এগুলো হচ্ছে নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ঘাড়ে দোষ দেওয়া।”

জাতীয় পার্টি,বিএনপি,রাজনীতি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close