• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

জোট সরকারের পথে পাকিস্তান, ভাগাভাগি হবে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ

প্রকাশ:  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচনে সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক দলই। তবে সরকার গঠনে জোট করার কথা ভাবছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন)। কিন্তু এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? এই প্রশ্ন নিয়ে ছিল জল্পনা। এরমধ্যে একটি সমাধানের দিকে হাঁটছে দুই দল।

সূত্রের তথ্য, পাঁচ বছর মেয়াদি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ভাগাভাগি করা হতে পারে। দুই দলের শীর্ষ নেতা অর্ধেক অর্ধেক করে থাকবেন এই পদে।

যদিও পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো সরকারের পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ইতিহাস নেই। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীত্বের বড় দাবিদার, নওয়াজ শরিফকেই একাধিকবার মেয়াদ পূর্তির আগে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে পিএমএল-এন এবং ন্যাশনাল পার্টি (এনপি) একই ভাবে জোট সরকার গড়ে। সেই সময় দুটি দলের দুই মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদে আড়াই বছর করে ক্ষমতায় ছিলেন।

রবিবার দুই দলের পিপিপি ও পিএমএল-এনের বৈঠকে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদটির মেয়াদ ভাগাভাগির বিষয়টি উঠে আসে। সাধারণ নির্বাচনের পরে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয় দুই দলই।

বৈঠকে পিপিপি-পার্লামেন্টারিয়ান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল-ভুট্টো জারদারি ও পিএমএল-এন থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। যা জাতির স্বার্থ ও মঙ্গলকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।’’

উভয় দলের নেতৃবৃন্দ বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দেশের উন্নতির জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনা করেন।

পিএমএল-এন প্রতিনিধি দলে ছিলেন আজম নাজির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভীর, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমেদ খান, মরিয়ম আওরঙ্গজেব ও শেজা ফাতিমা।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনার মূল বিষয় ছিল পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন, ভবিষ্যত রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা ও দেশের স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রচার করা।

পাকিস্তানকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দূরে সরিয়ে সমৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপকতার পথের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন দুই দলের নেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের জনগণ দুটি দলকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। তারা তাদের হতাশ করবে না।

দুই দলের নেতারা জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে তাদের অটল অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন।

আসলে কি কথা হয়েছে বৈঠকে?

জোট গঠনের বৈঠকের সূত্র বলছে, পিএমএল-এন আনুষ্ঠানিকভাবে পিপিপিকে জোট সরকার গঠনের জন্য প্রস্তাব দেয়।

এছাড়া স্বতন্ত্র ও এমকিউএম-পাকিস্তানের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে বলে পিপিপিকে জানায় পিএমএল-এন।

পিএমএল-এন নেতারা প্রধানমন্ত্রীর পদটি নিজেদের রাখার কথা জানায়। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারি বলেন, ‘‘পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি (সিইসি) ইতিমধ্যেই বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করেছে।’’

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদের পাঁচ বছরের মেয়াদে অর্ধেক অর্ধেক ভাগাগারি করে নেওয়ার বিষয় উঠে আসে।

এছাড়া কেন্দ্র, পাঞ্জাব এবং বেলুচিস্তানে জোট সরকার গঠনেও সম্মত হয় তারা।

সূত্র আরও জানায়, “আজকের সিইসির বৈঠকে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব পেশ করবে পিপিপি।’’

ভবিষ্যত সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একমত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বৈঠক করেছেন পিএমএল-এন এবং এমকিউএম-পি নেতারা।

পিএমএলএন প্রধান নওয়াজ শরিফ ও এমকিউএম-পি থেকে ডা. খালিদ মকবুল সিদ্দিকী যার যার দলের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

পিএমএলএন প্রতিনিধি দলে ছিলেন শাহবাজ শরীফ, মরিয়ম নওয়াজ, ইসহাক দার, আহসান ইকবাল, রানা সানাউল্লাহ, আয়াজ সাদিক, খাজা সাদ রফিক, মরিয়ম আওরঙ্গজেব ও রানা মাশহুদ। আর এমকিউএম প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিন্ধুর গভর্নর কামরান তেসোরি, ড. ফারুক সাত্তার ও মোস্তফা কামাল।

পিএমএলএন-এর মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেবের মতে, ‘‘নওয়াজ শরিফ ও এমকিউএম নেতৃত্ব দেশ ও জাতির স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এই বিষয়ে দুই দলের মধ্যে মূল বিষয়গুলো মীমাংসা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘এক ঘণ্টার বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে ও পরামর্শ বিনিময় হয়েছে। সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও এ পর্যন্ত অগ্রগতি নিয়ে তারা একে অপরকে প্রতিশ্রুতি দেন।’’

তবে বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই এমকিউএমপির আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিকী বলেন, ‘‘কেন্দ্রে সরকার গঠনে সহযোগিতার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’’

এদিকে, পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফ জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানকে ফোন করেছেন ও জোট সরকার গঠনের প্রচেষ্টার পটভূমিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সূত্র জানায়, তারা কেন্দ্র ও প্রদেশে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।

আন্তর্জাতিক,সরকার,পাকিস্তান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close