হাসপাতাল ছাড়লেন শূকরের কিডনি নেওয়া রোগী

যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়েছেন বিশ্বে প্রথম শূকরের কিডনি নেওয়া ব্যক্তি রিচার্ড রিক স্লেম্যান।

গত ৩ এপ্রিল তাকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেন ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) চিকিৎসকরা। গত ১৬ মার্চ এই হাসপাতালে চার ঘণ্টা অস্ত্রোপচার চালিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়। তার কিডনির অসুখ একেবারে শেষপর্যায়ে ছিল।

রিচার্ড রিক স্লেম্যানের সুস্থ থাকাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য বড় সফলতা হিসেবে বলে জানান চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, মানুষের শরীরে স্থাপনের আগে শূকরের কিডনিতে জিনগত পরিবর্তন আনা হয়। গবেষকরা শূকরের যে জিনগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো সরিয়ে দেন এবং তাতে মানুষের জিন যোগ করেন।

হাসপাতালের দাবি, অর্গান ট্রান্সপ্লানটেশন বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করল। একটি প্রাণীর অঙ্গ অন্য প্রজাতির প্রাণীর শরীরে প্রতিস্থাপনের নাম হলো জিনোট্রান্সপ্লানটেশন।

চিকিৎসকেরা জানান, রিকের প্রতিস্থাপিত কিডনি এখন চমৎকার কাজ করছে। তার আর ডায়ালাইসিস করার দরকার নেই। এক রিচার্ড জানান, হাসপাতাল ছেড়ে সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরা তার জীবনের অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত।

তিনি বলেন, “ডায়ালাইসিসের বোঝা থেকে মুক্ত হয়ে আবারও পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর বিষয় ভাবতেই আমার ভালো লাগছে।”

২০১৮ সালে রিচার্ডের শরীরে মৃত ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু গত বছর সেই কিডনি বিকল হতে শুরু করে। তারপরই চিকিৎসকেরা তার শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, “এই সাফল্যকে আমি কেবল নিজের মনে করি না। বরং বেঁচে থাকার জন্য যাদের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, এটা সেই সব মানুষের মনে আশা জোগাবে।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, যে শূকরের শরীর থেকে কিডনি নেওয়া হয়েছে, তাকে আলাদা করে বড় করা হয়েছিল, যাতে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ইনফেকশন না থাকে। এই শূকরের কিডনির আকৃতি মানুষের কিডনির মতোই ছিল।

এর আগে “ব্রেন ডেড” হয়ে যাওয়া কয়েকজন মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো জীবিত রোগীর শরীরে সফলভাবে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের ঘটনা এবারই প্রথম। এর আগে দুইজন রোগীর শরীরে জিনগত পরিবর্তনের পর শূকরের হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু তারা দুই মাসের বেশি বাঁচেননি।

জাতিসংঘের অর্গান শেয়ারিং নেটওয়ার্কের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হলো কিডনি প্রতিস্থাপনের। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।