• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

‘বিমা দাবি পরিশোধে কোনো ফি নেওয়া যাবে না’

প্রকাশ:  ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

বিমা দাবি পরিশোধে কোনো কমিশন, ফি বা সার্ভিস চার্জ নিতে পারবে না বিমা কোম্পানিগুলো। গ্রাহকদের বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রতিটি ধাপে কার্যক্রমের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। গ্রাহক কর্তৃক সর্বশেষ কাগজ দাখিলের পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। গ্রাহকদের ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টাকার অঙ্কসহ তথ্য প্রেরণ করতে হবে।

বিমা দাবিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তি কমিয়ে যতদ্রুত সম্ভব দাবিপ্রাপ্তিসহ বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ‘বিমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স ২০২৪’ প্রণয়ন করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। গত রোববার এই গাইড লাইনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিমার দাবি তুলতে গিয়ে তিনি যে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন সে প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় একবার বলেছিলেন, দেশে বিমার দাবি এবং পেনশনের অর্থ তুলতে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আমার জীবনেও এমনটা হয়েছে। এই দুটো ব্যবস্থাই সহজ করতে হবে যাতে সহজে তাদের নিজেদের বিনিয়োগকৃত অর্থ সহজে উত্তোলন করতে পারে। এরপরেই বিমা আইন সহজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিছুটা বিলম্ব হলেও বিমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স প্রণীত হয়েছে।

জানা গেছে, প্রণীত এ গাইডলাইন্স বিমা প্রতিষ্ঠান, পুনঃবিমাকারী; জরিপকারী বা বিমা এজেন্ট বা বিমা মধ্যস্থতাকারী বা বিমা পরিষেবা প্রদানকারী; বিমা গ্রাহক এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিমাকারী প্রতিষ্ঠানকে পলিসি ও দাবিবিষয়ক রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।

গাইডলাইন্স অনুযায়ী, প্রতিটি বিমাকারী প্রতিষ্ঠান আইন, বিধি-বিধান এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে বিমা দাবি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে নিজস্ব একটি ম্যানুয়াল তৈরি করবে এবং তা বিমা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

বিমাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীতব্য ম্যানুয়ালে যেসব বিষয় আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেগুলো হচ্ছে-গ্রাহক কর্তৃক দাবি উত্থাপন থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ও প্রতিটি ধাপের সময়সীমা। প্রতিটি ধাপে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কার্যক্রম পদ্ধতির সুস্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। বিমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ কার্যক্রমের স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। সহজ ও স্পষ্টভাবে প্রতিটি পলিসির দাবি নিষ্পত্তির ফরম বা টেমপ্লেট। বিমা দাবি নিষ্পত্তির যেসব ক্ষেত্রে জরিপকারী নিয়োগ করা প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত জরিপকারী নিয়োগ ও তদন্ত পদ্ধতি। কোনো পর্যায়ে আপিল বা পুনঃবিবেচনার সুযোগ থাকলে সে বিষয়ে বিমাগ্রহীতাকে অবহিতকরণের পদ্ধতি এবং পুনঃবীমা ও প্রত্যর্পণ বিমার অর্থ যতদ্রুত সম্ভব সংগ্রহ করে বিমা দাবি পরিশোধের ব্যবস্থার নিশ্চিত কার্যক্রম।

এর পাশাপাশি বিমা দাবি পরিশোধে আরও কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-বিমাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিমা চুক্তিতে উল্লিখিত কাগজাদি ছাড়া অন্য কোনো দলিল বিমা গ্রাহকের কাছে চাওয়া যাবে না এবং বারবার দলিল চাওয়া যাবে না। যেসব ক্ষেত্রে জরিপকারী নিয়োগ বা তদন্তের প্রয়োজন নেই, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিমা দাবি পরিশোধ পদ্ধতি ম্যানুয়ালে উল্লেখ এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। বিমা দাবি পরিশোধে কোনো কমিশন বা ফি বা সার্ভিস চার্জ আদায় করা যাবে না। বিমা গ্রাহক কর্তৃক সর্বশেষ দলিল দাখিলের পর আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে বিমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। বিমা দাবি পরিশোধ হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিমা গ্রাহকের মোবাইলে বিমা দাবিতে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণসহ মেসেজ দিতে হবে।

প্রণীত গাইডলাইন্সে বিমা গ্রাহকের করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে, ক্ষতি বা দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিমা চুক্তিতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে দ্রুত বিমাকারী প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা এবং সংশ্লিষ্ট কাগজাদি দাখিল করা; বিমা গ্রহীতাকে বিমাকারী প্রতিষ্ঠান বা জরিপকারীর কাছে দাখিলকৃত সব দলিলের সপক্ষে প্রাপ্তি স্বীকার নিতে হবে এবং সেটি প্রামাণিক হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। বিমা গ্রাহককে প্রকৃত ঘটনার সঠিক বর্ণনা দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ কিংবা ভুয়া দলিল প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। বিমা দাবি উত্থাপনের পর বিমা দাবি নিষ্পত্তির আগে বিমা গ্রাহক বীমাকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জরিপকারীকে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন পরিচালনা ও ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের সুযোগ ও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। দাবি নিষ্পত্তির পর ক্ষতিপূরণ অপর্যাপ্ত হওয়া বা অন্য কোনো উপযুক্ত কারণে আইন অনুযায়ী বিমা গ্রাহক প্রয়োজনে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।

বিমা,পরিশোধ,কোম্পানি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close