• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপকের দাপটে জিম্মি পেট্রোবাংলা

প্রকাশ:  ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানিখাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার উপ-মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন। জ্যেষ্ঠ অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে সংস্থাপন বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের চলতি দায়িত্ব বাগিয়ে নেন তিনি। প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক অসুস্থ থাকায় তার দায়িত্বও পালন করছেন আমজাদ হোসেন। পেট্রোবাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদের দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়ে পুরো জ্বালানিখাতের ওপর ছড়ি ঘুরাতে শুরু করেন তিনি। তার কথা না শুনলেই পেট্রোবাংলার অধীনস্থ ১৩টি প্রতিষ্ঠানের যেকোনো পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেনামে চিঠি লিখে নিজের পছন্দের কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্তের নামে হয়রানি করার একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে খোদ পেট্রোবাংলায়।

এমনকি আমজাদ হোসেনকে কমিশন না দিয়ে কেউ এলপিআরের টাকাও পান না কোন কর্মচারী-কর্মকর্তা। এভাবেই শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। টাকার গরমে ধরাকে শরা জ্ঞান করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো পেট্রোবাংলায়। আমজাদের দাপটের কাছে অসহায় তারচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তারাও।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, সাবেক চেয়ারম্যান এবিএম ফাত্তাহর আমলে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন আমজাদ। ফাত্তাহ অবসরে গেলে পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহকে ম্যানেজ করেন তিনি। মূলত নুরুল্লাহও আশীর্বাদেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আমজাদ হোসেন। সম্প্রতি আমজাদ হোসেনের কবল থেকে মুক্তি পেতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে খোদ পেট্রোবাংলায়।

ভুক্তভোগীরা জানান, আমজাদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আবেদন করেন সংস্থাপন বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক বেগম মেহেরুন আহমেদ। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে তা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। মেহেরুনের পেনশনের ফাইলটি প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় প্রশাসন বিভাগের চলতি দায়িত্ব পান আমজাদ। দায়িত্বে পেয়েই বেগম মেহেরুনের ফাইল আটকে দেন তিনি। এক বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে অবশেষে আমজাদকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হন মেহেরুন। একইভাবে মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ, অপারেশন অ্যান্ড মাইন্স বিভাগের সাবেক পরিচালক মোল্লা মোবিরুল হোসেনও আমজাদের রোষানলে পড়ে নির্যাতনের শিকার হন।

শুধু এরাই নয় পেট্রোবাংলার যেকোনো কর্মকর্তা কর্মচারী অবসরে গেলেই তার পরিণতি হয় মেহেরুনের মতো। আমজাদকে কমিশন না দিলে বছরের পর বছর ঘুরেও পেনশনের ফাইল চালু কিংবা এলপিআরের এককালীন টাকা পান না কেউ।

অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর যেকোনো পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটিতে পেট্রোবাংলার একজন প্রতিনিধি থাকার নিয়ম রয়েছে। কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে গেল দুই বছর ধরে সবগুলো কোম্পানির পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটিতে পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন আমজাদ হোসেন। এই সময়ের মধ্যে আমজাদকে নির্দিষ্ট অংকের ঘুষ না দিয়ে কেউ পদোন্নতি পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ ও বিপণন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০০ জন কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন পেট্রোবাংলায়। নিয়মানুযায়ী প্রতি দুই বছর পর পর চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও দক্ষ জনবল বিবেচনায় বড় কোন ব্যত্যয় না ঘটলে পুরনো জনবলের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু আমজাদ হোসেন প্রশাসন বিভাগের দায়িত্বে এসেই ওই দরিদ্র দুইশো জন কর্মচারীকে জিম্মি করে মোটা অংকের চাঁদাবাজির চেষ্টা করেন। দেড়শো জনের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চুক্তি নবায়ন করেছেন। টাকা দিতে না পারায় বাকিদের চাকরি ঝুলিয়ে রেখেছেন আমজাদ হোসেন। বাকিরা টাকা দিতে না পারায় এখনো ঝুলে আছেন।

পেট্রোবাংলার নিয়মানুযায়ী, মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি পেতে হলে যেকোনো কর্মকর্তার ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু ১৪ বছরের মাথায় মহাব্যবস্থাপকের পদ বাগিয়ে নেন ধুরন্ধর আমজাদ। অথচ ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আজও উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে কর্মরত থাকার ভুরি ভুরি নজির রয়েছে পেট্রোবাংলায়।

সূত্র বলছে, প্রশাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রণে থাকায় অনেক কর্মকর্তার এসিআর নম্বর কমিয়ে রাখেন। এমনকি একাধিক কর্মকর্তার নামে উড়ো চিঠি দিয়ে তার সূত্র ধরে পদোন্নতি আটকে দেন কর্মকর্তাদের। কাউকে তার প্রতিপক্ষ মনে হলে পেট্রোবাংলা থেকে অধীনস্থ কোম্পানিগুলোতে বদলি করে দেন। এমনকি অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের এক কোম্পানি থেকে অন্যটিতে বদলি করেও কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য করেন আমজাদ হোসেন।

পুরো জ্বালানিখাতের ওপর ছড়ি ঘোরানো আমজাদ হোসেন সংস্থাপন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হওয়ার আগে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত সচিব ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ডিমোশন নিয়ে পেট্রোবাংলায় সংযুক্ত করা হয়। সেখানে কিছুদিন ঘাপটি মেরে থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে সংস্থাপন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক পদটি বাগিয়ে নেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আমজাদ হোসেন জানান, প্রতিপক্ষরা তাকে ফাঁসাতে ও সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করতে বানোয়াট অভিযোগ করছে।

পেট্রোবাংলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close