• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভারতীয় নারীদের ভিডিও কলের জাল, ফেঁসেছেন বাংলাদেশের আমলা-চিকিৎসকরা

প্রকাশ:  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভারতীয় তরুণী পরিচয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবীদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এই প্রতারক চক্রে ভারতীয়দের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকরাও জড়িত। রাজধানীর পল্লবী ও যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলার তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

সম্প্রতি চক্রের চারজনকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তাদেরকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণা সম্পর্কে জানতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, “ভারতীয় পুরুষরা ফেসবুকে নারী কর্মকর্তা, স্কুল শিক্ষিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয় দিয়ে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বড় সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলছেন। ভারতের এসব নাগরিক হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী। তারাই মূলত কল দিয়ে ভিডিও ধারণ করতেন। আর চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা হুমকি দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিতেন। পরে সেই টাকা অবৈধ পথে (হুন্ডি) চক্রের ভারতীয় সদস্যদের কাছে পাঠাতেন।”

চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তাসহ অন্যদের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফ্রেন্ড রেকুয়েস্ট পাঠাচ্ছে প্রতারক চক্র। ভারতীয় তরুণী পরিচয় দিয়ে সেই বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো হচ্ছে। তাদের কেউ নিজেকে আইপিএস বা কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দিচ্ছে। এসব দেখে অনেকেই ফেসবুকে বন্ধুত্ব করছেন।

এরপর মেসেঞ্জারে নানা ধরনের কথা বলার এক পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও। এর মাঝেই জেনে নেওয়া হয় মোবাইল নম্বর।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময় জানিয়েছে, ভারতের চেন্নাই, মাদ্রাজ, রাজস্থান, দিল্লি ও বিহার প্রদেশ থেকে প্রতারকরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে নারীদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করছেন। মোবাইল নম্বর নেওয়ার পরই প্রতারকরা কল দেন। ভিডিও করার জন্য বাংলাদেশি ব্যক্তিকে যখন প্রতারক চক্রের সদস্যরা কল দেন, তখন নিজেরা কথা বলেন না। রেকর্ড করা অশ্লীল ভিডিও চালিয়ে দেন। কিন্তু তারা এমন কৌশলে কাজটি করেন, যেন ভিডিও দেখে মনে হয় দুই পাশ থেকেই কথা বলা হচ্ছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন একটি মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ, একজন সহকারী প্রকৌশলী, একটি পোশাক কারখানার মালিক, উত্তরাঞ্চলের একটি পৌরসভার মেয়র এবং বিশ্ববিদালয় শিক্ষার্থী। তাদের কাছ থেকে ৫০,০০০ থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে অনেকেই মাসের পরের মাস ভারতে গিয়ে অবস্থান করেন। আবার অনেকে ভ্রমণ করতে এবং ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যান। সেখানে অবস্থানের সময় তারাও সে দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন, কথাবার্তা বলেন। এভাবেই ভারতীয় প্রতারক চক্রের সঙ্গের বাংলাদেশি প্রতারকের পরিচয় হয়।

এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত দুই ভারতীয় নাগরিককে শনাক্ত করা হয়েছে বলে ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

প্রতারণা,ভারত,অপরাধ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close