• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

২০ বছরেও দখলমুক্ত হয়নি খাল

বর্ষায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ডোবার আশঙ্কা

প্রকাশ:  ১৪ মার্চ ২০২২, ১৭:৫৫ | আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১৮:১৫
খুলনা প্রতিনিধি
ময়ূর নদের নিষ্কাশন খালের উপর অবৈধ স্থাপনা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে গল্লামারী থেকে ময়ূর ব্রিজ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধ সড়কের কেসিসির লিনিয়ার পার্ক সংলগ্ন ময়ূর নদের সংযোগ নিষ্কাশন খাল অবৈধ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। খুপড়ি ঘরের স্থলে বর্তমানে সেখানে যত্রতত্র অবৈধ দখলদাররা গড়ে তুলছে নতুন নতুন পাকা স্থাপনা।

খাল ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের। এতেকরে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ গোটা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছে নগরবাসী।

এদিকে বর্তমানে পানি নিষ্কাশন পুরোপুরি বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরের লেকের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দূষণের মাত্রা এতোটাই তীব্র যে, এই পানিতে কেউ পা পর্যন্ত দিতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকার লেকটির এ অংশের সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তীব্র দূষণের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ২০ বছর যাবত পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে অবহিত করলেও কার্যত অবৈধ দখলমুক্ত করা যায়নি বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র । শেষ দফায় দু’বছর আগে প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড গল্লামারী বাজার সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করলেও শেষ পর্যন্ত ওই স্থানটিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকবছর আগে কাঁচা-আধা পাকা ঘর থাকলেও এখন খালটির উপরে অবৈধভাবে স্থায়ী পাকা ঘর তুলে দোকান ও ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সে সকল দোকানদারদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, শাহিন নামের এক ব্যক্তি এখানে এক পাশে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও মো. জুয়েল ও সামাদ নামে আরও দু’জন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তাদের মধ্যে কে বা কারা খাস খালের উপর স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তারা তা জানেন না। তবে তাদের কাছে অভিযুক্ত ওই সকল ব্যক্তিদের মোবাইল নাম্বর বা ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ হলের একটি সূত্র জানায়, ময়ূর নদের সংযোগ খালের নিষ্কাশন অংশ অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ীভাবে দোকানসহ ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় হলের পাশের এই খালের পানি আর নিষ্কাশিত হচ্ছে না। ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে সেকানকার পানি। হল কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। অথচ ১৫-২০ বছর আগেও এই খালটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা এলাকার বেশিরভাগ পানি নিষ্কাশন হতো।

এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস জানান, পানি নিষ্কাশনের সমস্যা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক বলে পরিচিত খালের পানি পূর্ব পাশে ময়ূর নদে নিষ্কাশিত না হতে পারায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ই বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার হুমকিতে পড়েছে। বিগত কয়েকবছর অতিবৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অংশ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনসহ কয়েকটি ডিসিপ্লিনের মাঠ গবেষণায় শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। রিসার্চ ফিল্ডে একটি গবেষণা কার্যক্রম একবার নষ্ট হয়ে গেলে ওই শিক্ষার্থীর শিক্ষাকোর্স সম্পন্ন করতে বিলম্ব হবে। খালের উপর অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করে জনস্বার্থে খালটি ময়ূর নদের সঙ্গে সংযোগ কার্যকর করে নিষ্কাশনে স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ দীর্ঘদিনেও প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পূর্বক অবৈধ দখলমুক্ত করতে না পারায় অভিজ্ঞ মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে জনমনে সঞ্চার হয়েছে নানা প্রশ্নের! অবৈধ দখলদাররা কি এতোটাই প্রভাবশালী যে, পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসন গত ২০ বছরেও সরকারি খালের জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারেনি!

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএনএস/জেএস

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close