• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ চান প্রযোজক

প্রকাশ:  ১৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৯
বিনোদন ডেস্ক

ঢাকাই সিনেমার নায়ক শাকিব খান। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাসের অভিযোগ এনেছেন এক প্রযোজক। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক রহমত উল্লাহ। আজ বুধবার (১৫ মার্চ) বিকালে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি এই প্রযোজক এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ করেন।

নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ (২০১৭) সিনেমায় অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ (মামলা নং: NSW Police reference no: E ৬২৪৯৪৯৫৯) এবং পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতি সাধন করে শুটিং সম্পন্ন করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন তিনি। এতে করে সিনেমায় লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে অভিযোগ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।

এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে। শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সঙ্গে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেননি।’

২০১৭ সালে অপারেশন অগ্নিপথের চিত্রায়নের সময় শাকিব খান যেসব ক্ষতিকর কাজ করেছেন সেগুলোকে ৫টি পয়েন্ট আকারে অভিযোগপত্রে তুলে ধরেছেন ওই প্রযোজক। অভিযোগের একটি অনুলিপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে নিজেকে ঘটনাগুলোর চাক্ষুষ সাক্ষী দাবি করে অভিযোগকারী উল্লেখ করেছেন-

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন, আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছামতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুই-এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সবার বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। এই সব যৌনকর্মীদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো।

৫. একবার তিনি আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান। এরপর থেকে শাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।

এ সম্পর্কে জানতে শাকিব খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার পরিচালক আশিকুর রহমানেরও।

তবে প্রযোজক রহমত উল্লাহ কর্তৃক লিখিত অভিযোগটি হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির সাধারন সম্পাদক নিপুণ আক্তার। তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতিসহ প্রযোজক, পরিচালক, ক্যামেরাম্যান এসোসিয়েশনে ওই প্রযোজক অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ তো আসলে যে কেউই যে কারো নামে করতে পারে। তবে সেই অভিযোগের সত্য মিথ্যা যাচাই করা না পর্যন্ত কিছুই বলতে পারব না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগটি এসেছে তিনি দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। এখানে তথ্য যাচাই বাছাই করা খুব জরুরি।

শাকিব খান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close