• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মালঞ্চ জামে মসজিদ: ইসলামিক সংস্কৃতির অনন্য নিদর্শন

প্রকাশ:  ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:১০ | আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:২৬
জামালপুর প্রতিনিধি

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে মুসলমানদের বহু ধর্মীয় স্থাপনা। পারস্য অঞ্চলের পাশাপাশি স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছিলো ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত। অগণিত মুসলিম মনীষীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বিশ্বজুড়ে আজ ইসলামের মর্মবাণী পৌঁছে গেছে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি স্থাপনাগুলো সভ্যতা ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিশ্ব নন্দিত। এ সকল স্থাপনার মধ্যে অন্যতম ও প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মসজিদ। মুসলিম সংস্কৃতির এমনই এক স্থাপিত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন সাততলা বিশিষ্ট মালঞ্চ জামে মসজিদ। এটি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ৫নম্বর নয়ানগর ইউনিয়নের মালঞ্চ এলাকায় অবস্থিত।

জামালপুর জেলা শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার ও মেলান্দহ উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার অদূরে মালঞ্চ এলাকা। এখানেই প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সাততলা বিশিষ্ট মসজিদ নির্মিত। মসজিদকে ঘিরে পুরো এলাকায় দৃশ্যপট বদলে গেছে। একদিকে মুসলিমদের ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রভাব ও অন্যদিকে সেবা, শিক্ষা ও ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৪০ সালে আলহাজ আব্দুল গফুর মন্ডল নামে স্থানীয় এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিতৈষী সুরকি পাথর দিয়ে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৯৮৭ সালে গম্বুজ তিনটি আরও বর্ধিত করে ৭ তলায় রুপান্তর করা হয়। তবে সুদৃশ্য মিনারসহ এটি মোট ১১ তলা। এ মসজিদের আধুনিক রূপ দান করে মূল মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ আব্দুল গফুর মন্ডলের নাতি ও সাবেক ধর্ম সচিব আলহাজ এমএ রশিদ চিশতি নিজামির ছেলে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি আলহাজ হাসান মাহমুদ রাজা।

মসজিদ সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বহু দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই মানুষজন এখানে ঘুরতে আসেন, এসে নামায আদায় করেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে। জুমআর দিন প্রায় ৭০০ মুসল্লী একসাথে নামায আদায় করে থাকেন। তাছাড়াও প্রতি ওয়াক্তে ২০০-২৫০ মুসল্লী প্রতিদিনই নামায আদায় করেন। মসজিদের প্রথম তলায় ১৫ কাতার ও দ্বিতীয় তলা থেকে ৭ম তলা পর্যন্ত ১০ টি করে কাতার রয়েছে। প্রতি কাতারে ২২-২৫ জন করে নামায আদায় করতে পারেন।

মসজিদটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ও শিক্ষা-সেবাকেন্দ্র। এ মসজিদকে ঘিরে একটি এতিমখানা, একটি নূরানী মাদরাসা ও একটি হাফিজিয়া মাদরাসা পরিচালিত হয়। পাশেই রয়েছে দাতব্য চিকিৎসালয় ও আর্থিক সহায়তা কেন্দ্র। রয়েছে কামিল (স্নাতকোত্তর) একটি মাদরাসা। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আবাসিক ভবন। এই মসজিদে পড়ানো হয়ে থাকে ঈদের নামাযও। মসজিদের সামনে অবস্থিত সুবিশাল দিঘি মুসল্লীসহ স্থানীয় মানুষদের অজু ও গোসলের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

স্থানীয় মো. আব্দুল মজিদ ও আফছার মন্ডলসহ আরও অনেকে জানান, আলহাজ আব্দুল গফুর মন্ডল বৃহত্তর এই এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও জনহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। তার নাতি দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী আলহাজ হাসান মাহমুদ রাজাও দানশীল ব্যক্তি। প্রায় দেড় কোটি টাকায় সম্পূর্ণ নিজ খরচে তিনি এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ও দাতব্য কেন্দ্রও তিনিই গড়ে তোলেন এবং অদ্যাবধি পর্যন্ত এসবের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করে আসছেন।

মালঞ্চ জামে মসজিদের পার্শ্ববর্তী মালঞ্চ আল-আমিন জমিরিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার আলিম পড়ুয়া শিক্ষার্থী আলাল উদ্দিন ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া শোয়াইব সম্রাট হিমেল জানান, এ মসজিদে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে মানুষ নামায পড়তে আসে এবং অসংখ্য মানুষ পরিদর্শনে আসে। বিশেষ করে প্রতি জুমআর দিন এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়।

কথা হয় মসজিদের ঈমান ও খতিব মাওলানা এ এফ এম নুরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, আমি মালঞ্চ আল-আমিন জমিরিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসায় উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এর পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে মালঞ্চ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োজিত আছি। এ মসজিদটি শুধুমাত্র ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ইবাদতের স্থানই নয় ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও। এখানে একটি এতিমখানা, নূরানী মাদরাসা ও হাফিজিয়া মাদরাসাও পরিচালিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে শত শত শিক্ষার্থী পাঠদান করে আসছে। যাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষা অর্জন করে দেশ-বিদেশে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করছেন।

মেলান্দহের বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী শাহ্ জামাল বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মোহাম্মদ (সা.) ইসলামী কালচারের প্রবক্তা। তাঁরই ধারাবাহিকতায় সারা পৃথিবীতে ইসলামের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চতেও সুদর্শন জামে মসজিদ তথা ইসলামি সাংস্কৃতিক চর্চার একটি নিদর্শন গড়ে উঠেছে। এখানে সাবেক ধর্ম সচিব আলহাজ এমএ রশিদ চিশতি নিজামির ছোঁয়া রয়েছে। যা পরবর্তীতে তারই ছেলে আলহাজ হাসান মাহমুদ রাজা মিয়ার মাধ্যমে পরিপূর্ণতা এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ধর্ম-গবেষণা, শিক্ষা, দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি চালু রয়েছে। যা আমাদের এলাকার জন্য গর্বের।


পূর্বপশ্চিম/এএন

মালাঞ্চ মসজিদ,ফিচার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close