• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বসন্ত এসে গেছে

প্রকাশ:  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:১৫ | আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:৩৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত। ঠিক তাই, ইট-কনক্রিটের এই নগরীতে প্রকৃতির রূপ খোজার ফুরসত কই? তাই বলে কি থমকে থাকবে ঋতু বদল, মোটেও না। জবুথবু শীতের জীর্ণতা সরিয়ে বসন্ত এসে গেছে।

বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই মৃদু হাওয়ায় প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের ঋতু বসন্তই মনকে সাজায় বাসন্তী রঙে, মানুষকে করে জীর্ণতা সরিয়ে নতুন শুরুর প্রেরণা। বসন্ত কচিপাতায় আনে নতুন রঙ, আলোর নাচন। সাথে মানব মনেও হয়তো। তাই তো সবুজ পত্রপল্লবের আবডালে লুকিয়ে বসন্তের দূত কোকিল শোনায় মদির কুহুকুহু ডাক। আর এই ডাকে ব্যাকুল হয় বিরহী মন।

সাহিত্যে প্রেম আর মিলনের ঋতু বলেও বসন্ত সুপরিচিত। বসন্তের শুরুর দিনে রাঙা মনের সৌন্দর্য ফুটে উঠে পোশাকেও, থাকে ফাগুনের আগুন ঝরানো রং। বসন্তের বাতাস যেমন প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলে নতুনভাবে। গুন গুন সুরে এ ফাগুন জুড়ে উড়ে ফুলে ফুলে প্রজাপতি। গাছে গাছে আছে ফুড়ফুড়ে মেজাজে কচি পাতারা সব নাচেরই আমেজে। আজ এ বসন্তে হৃদয়ের মন্ত্রে ধরণী রঙিন হলো ফুল-ফল-জল ও প্রেম-বলে। আজ শুভ কামনায়, ভালোবেসে বাহানায় ফাগুনের হাত ধরে দরজায় নাড়া দিলো বসন্ত। আহা, বসন্ত এসে গেলো। বসন্ত এসে গেলো, নেই মাঝে হসন্ত কোন আর।

লোক কবি শাহ আব্দুল করিম গেয়েছিলেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...।’ আসছে কি সেই ঘ্রাণ? একই চেতনা থেকে কবি মহাদেবসাহা লিখেছিলেন: ‘তোমার সঙ্গে প্রতিটি কথাই কবিতা, প্রতিটি গোপন কটাক্ষই অনিঃশেষ বসন্তকাল।’

এভাবে বসন্ত আর ভালবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বসন্তের আগমনে উচাটন হয়ে ওঠে মন। পুরনো বেদনা, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ভালবেসে এর পেছনে আবারও ছুটতে প্ররোচনা দেয়। পাখিরাও প্রণয়ী খোঁজে এ সময়। ঘর বাঁধে। মৌমাছিরা মধুর খোঁজে হন্যে হয়। এক ফুল থেকে ছোটে অন্য ফুলে। এমন ঋতু শুরুর দিনটি তাই যারপর নাই বিশেষ। আজ সর্বত্রই বসন্ত বরণ উৎসবের আয়োজন করা হবে। প্রিয় ঋতুকে বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করে নেবে বাঙালী। রাজধানী ঢাকার অলিগলি রাজপথে ভিড় বাড়বে। রঙিন হয়ে উঠবে চারপাশ। সকাল হতেই বাসন্তি রং শাড়ি পরে বেরিয়ে পড়বে তরুণীরা। ছোট্ট মেয়েটিও খোঁপায় জড়িয়ে নেবে গাঁদা ফুল। বড়দের মতো শাড়ি পরে গন্তব্যহীন হেঁটে যাবে। ছেলেরা পরবে পাঞ্জাবি। দল বেঁধে ঘুরে বেড়াবে। মানুষের ঢল নামবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলার বকুলতলাসহ আশপাশের এলাকায়। বসন্তের ঢেউ আছড়ে পড়বে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বইয়ের মেলা হয়ে উঠবে ফাগুনেরও। রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যানের সবুজের সঙ্গে আজ হলুদ রংটি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, রেস্তরাঁÑ সবখানে পরিলক্ষিত হবে উৎসবের রং। উচ্ছ্বল ছোটাছুটি।

দীর্ঘদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসলেও সংশোধিত বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী গতবছর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনের প্রথম দিন ধরা হয়ে থাকে। প্রতি বছর বসন্তকে বরণ করতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। তবে এবার করোনার সংক্রমণের কারণে সীমিত পরিসরে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত উৎসব হবে।

বসন্তের আগমনী গানে পুরো বাংলাদেশ যেন আটপৌরের আগল ভেঙে বসন্তের আহ্বানে জেগে ওঠে। তরুণীদের পরনে শোভা পায় বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় বাসন্তী ফুল। গালে বসন্তের মনকাড়া আল্পনা। তরুণদের বসনেও বাসন্তী ছোঁয়া। বাদ যায় না শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধরাও। সবার মন তাই গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে/এত বাঁশি বাজে/ এত পাখি গায়...।’

পূর্বপশ্চিম- এনই/

বসন্ত এসে গেছে,পয়লা ফাল্গুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close