• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

১০ বছরে 'গবিসাস'

প্রকাশ:  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:১৪
সানজিদা জান্নাত পিংকি

৩২ একরের একটি বিদ্যাপীঠ। যার যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে, দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ২৫ বসন্ত৷ নামেমাত্র প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এর অনেক কিছুই পাবলিকের আদলে গড়া। ব্যতিক্রমধর্মী এই বিদ্যাপীঠের নাম গণ বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি অঙ্গ গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)।

আজ ১০ই ফেব্রুয়ারি। দেশের সর্বপ্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনের ১০ বর্ষপূর্তি। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আল আজাদের নেতৃত্বে কিছু উদ্যমী তরুণের হাত ধরে পথচলা শুরু এই সংগঠনের। সেসময়কার নবীন সংগঠনটি আজ শৈশব পেরিয়ে পা দিয়েছে কৈশোরে৷

যেখানে গবিতে সাংবাদিকতা বিভাগ নেই, সেখানে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে আত্মপ্রকাশ করে গবিসাস। ফেব্রুয়ারীর শেষ বিকেলে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ঘাসের উপর বসে এই সংগঠনের জন্ম দিয়েছিলো যারা, তাদের এবং পরবর্তী স্বপ্ন সারথিদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই গবিসাসের ঝুলি হয়েছে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ।

১০ বছরে গবিসাসের খাতায় যোগ হয়েছে নানা অর্জন। ইতিহাসে প্রথম হয়ে জন্ম নেয়া এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল অনেক কিছুর প্রথম জন্ম দেয়ার। যার সূচনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন সংস্কৃতির জন্ম দিয়ে। সে সময়ে র‍্যাগিং বন্ধ হয়ে চালু হয় নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। গবিসাসের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আইন বিভাগ থেকে 'বিশ্ব মানবাধিকার দিবস' পালন শুরু হয়, ফার্মেসী বিভাগ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো 'বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস' পালন শুরু করে যা পরবর্তীতে দেশব্যাপী চালু হয়৷

এছাড়াও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো 'পিঠা উৎসব', 'ফুলবিজু উৎসব', 'বৈশাখী মেলা' অনুষ্ঠিত হয় এই সংগঠনের আয়োজনে। ২০১৫ সালে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে 'সহিংসতা নয় শান্তি চাই' শিরোনামে প্রথম কোনো সংগঠন হিসেবে মানববন্ধন করে গবিসাস। ক্যাম্পাসে প্রথম বৃক্ষরোপণ, নতুন ক্যাম্পাসের প্রথম 'ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল', ক্যাম্পাসে প্রথম 'ক্যারিয়ার বিষয়ক কর্মশালা', গবিসাসের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গবির ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ডে প্রথম অনুষ্ঠান করে গবিসাস৷

গবিসাসের মাধ্যমে দেশের সাংবাদিক সমিতির ইতিহাস পায় প্রথম নারী সম্পাদক। এ সংগঠনের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথমবারের মতো দেশের স্বনামধন্য কোন ব্যান্ডের গান পরিবেশন হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা এবং চত্বরের নামকরণ করেছে এই সংগঠনটি।

"সৃজনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখা" নীতিবাক্যকে ধারণ করে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছে এই সংগঠনটি। এক দশকের পথচলায় এ সংগঠনের রয়েছে স্বতন্ত্র গঠনতন্ত্র ও নিজস্ব কার্যালয়। গঠনতন্ত্রের আলোকে পরিচালিত হয় গবিসাস। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমের গবিসাস কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।

গবিসাসে সূচনা মোটেও সহজ ছিলো না। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে গবিসাস। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবীকে সমর্থন করে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১০ বছরের এই যাত্রাপথ ছিলো নানা প্রতিকূলতার।

এক দশক ধরে প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রকাশ ও ফিচারের মাধ্যমের গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশব্যাপী পরিচিতি পেতে মূখ্য ভূমিকা পালন করা এই সংগঠনের অপ্রাপ্তির তালিকাও কম নয়। এর মধ্যে প্রথমেই আসবে এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যুক্ত না হওয়া। তবে শুধু গবিসাস নয় গবির সকল সংগঠনের জন্য একটা বার্ষিক বরাদ্দ এখন সময়ের দাবী।

পথচলার এক দশকে অর্জনের খাতায় বার বার গর্জে উঠেছে স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণদের আলোচিত নামটি। ক্যাম্পাস হিরোর গল্পে লুকিয়ে থাকা এই সংগঠনটি যেন পর্দার আড়ালের নায়ক। সংগঠনে থাকা একঝাঁক তারুণ্য ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে ভোরের সূর্য। আলোর পিছনের কারিগরেরা নিজেরা ও আলোকিত হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো বাংলা। সৃজনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রতিভার জাগরণ ঘটানো সংগঠনটি প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টিশীল মনন ঘটাতে সাহায্য করে।

লেখা - শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

গণ বিশ্ববিদ্যালয়
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close