• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

টিকটকে মেতে থাকা তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশ:  ২৭ জুন ২০২৩, ২০:৫০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে টিকটকের ব্যবসা রমরমা। টিকটকের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, তেমন বিতর্কও কম হচ্ছে না। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এই প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার কারণে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

টিকটকের ফিড সত্যি অসাধারণ, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও মনোরঞ্জক। “ফর ইউ” পেজে কোন কোন ভিডিও দেখা যাবে, অ্যালগোরিদম তা বাছাই করে। তার মধ্যে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে অখ্যাত মানুষের ভিডিওও থাকে। গোটা বিশ্বের মানুষ সেখানে ভিডিও আপলোড করেন বলে বৈচিত্র্যের শেষ নেই।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্কট গ্যালোওয়ে সেই সাফল্য ব্যাখ্যা করে বলেন, “প্রতি ঘণ্টায় টিকটক কয়েকশ করে সিগনাল পায়। যে ধরনের কনটেন্ট আপনাকে টিকটকে আকৃষ্ট রাখে, মনোযোগ ধরে রাখে, প্ল্যাটফর্ম সেই সব ভিডিও বাছাই করতে থাকে। যে ব্যক্তি কয়েক ঘণ্টার বেশি টিকটকে সময় কাটিয়েছে, সে বলতে পারবে যে আপনার টিকটক আমার তুলনায় একেবারে আলাদা। সেটাই হলো জাদু।”

“ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট” দিয়ে নজর কাড়তে হলে প্রোডাকশন মোটেই নিখুঁত হবার প্রয়োজন নেই। চলতি প্রবণতা অনুযায়ী কম সময়ের কন্টেন্ট তৈরি করলে এবং সঠিক সঙ্গীত ব্যবহার করলেই সাফল্য আসে। সৃজনশীল ও মৌলিক আইডিয়ারও কদর করা হয়। যেকেউ রাতারাতি টিকটকে ভাইরাল হতে পারে।

গ্যালোওয়ে বলেন, “অ্যালগোরিদমের সিগনাল, নমনীয়তা ও শক্তি আপনার জন্য সেরা স্ট্রিমিং নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে পারছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি পরিবার গড়ে ১১ থেকে ১৫ মিনিট ধরে কী দেখা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেয়। টিকটকে আপনাকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় না। চ্যানেল একটাই, অ্যালগোরিদমের দৌলতে আপনি কোন ধরনের কন্টেট দেখতে পছন্দ করেছেন, প্ল্যাটফর্ম তা পুরোপুরি জানে। ইতিহাসে অন্য কোনো পরিষেবা এমন অসাধারণ, সবচেয়ে আনন্দদায়ক, সবচেয়ে ফলপ্রসূ স্ট্রিমিং কনটেন্ট দিতে পারেনি।”

তিনি আরও বলেন, “যতটা সম্ভব সময় ধরে আমাদের প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখাই হলো লক্ষ্য। টিকটক সেই সাফল্যকে নিখুঁত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা এই প্ল্যাটফর্মে সময় কাটান, বাকি সব পরিষেবার তুলনায় যা অনেক বেশি। যেমন ফেসবুকের ইউজাররা এর অর্ধেক সময় ব্যয় করেন।”

টিকটকের অ্যালগোরিদম এক পরিসংখ্যানগত নীতি অনুসরণ করে। ইন্টারনেট সোসাইটি হংকং-এর ওয়ং হো ওয়া বলেন, “তারা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের স্যাম্পেল নিয়ে দেখার চেষ্টা করে, তারা কোনো ভিডিও পছন্দ করছে কি-না। উত্তর ইতিবাচক হলে তারা পছন্দের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। ফল খারাপ হলে তারা সেই সংখ্যা সীমিত রাখার চেষ্টা করে। তাই অ্যালগোরিদমে দেখা যায়, কিছু ভিডিও এভাবে ভাইরাল হয়ে ওঠে।”

অন্যদিকে টিকটক স্ট্রিম বাকি প্ল্যাটফর্মের তুলনায় অনেক বেশি নেশার কারণ হতে পারে। প্রত্যেকটি ইন্টারেস্টিং ভিডিও মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটায়। সেটা আমাদের মনে আনন্দ জাগিয়ে তোলে এবং বার বার সেই অভিজ্ঞতার ইচ্ছা জাগে। পর্যায়ক্রমে এমন শক্তিশালী ভিডিও দেখানো হয়, যা ইউজারদের প্ল্যাটফর্মে আটকে রাখে। এমন শক্তিশালী টুলের পেছনে কি শুধু এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবদান রয়েছে? ওয়ং হো ওয়া মনে করেন, “কোনো কারচুপি আছে কি-না, সেটা এখনো বলা যায় না। কারণ আমাদের অ্যালগোরিদম ও তথ্যের ব্ল্যাক বক্সের আড়ালে রাখা হয়।”

অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম এতটা অস্বচ্ছ নয়। আবার অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মের এত তরুণ ব্যবহারকারী নেই। সেটাই এর আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। “জেনারেশন জেড” বলে পরিচিত এই প্রজন্ম টিকটক কনটেন্ট সৃষ্টি করে এবং দেখে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ স্কট গ্যালোওয়ে বলেন, “এক জনমত সমীক্ষায় ৩০ বছরের কম বয়সী মানুষদের হয় টিকটক অথবা অন্যদিকে নেটফ্লিক্স, এইচবিও ইত্যাদি স্ট্রিমিং মিডিয়ার গুচ্ছ বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সিংহভাগই টিকটক বেছে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ ৩০ বছরের কম বয়সীরা অন্যান্য মিডিয়ার তুলনায় টিকটকেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন। একদিকে বাকি সব মিডিয়া, অন্যদিকে টিকটক। তরুণদের মধ্যে টিকটকেরই রমরমা বেশি।”

সত্যি চমকপ্রদ সাফল্য বটে।

টিকটক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close