• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আজও স্পেনকে সুরক্ষা দেয় মুসলিম আমলের সেচ প্রণালী

প্রকাশ:  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:২৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

যেখানেই তাকে প্রয়োজন, পাকো পেরেস সেখানেই হাজির হন। যদিও বয়স ৮৫ বছর পেরিয়ে গেছে। গ্রামের প্রাচীন সেচ ব্যবস্থা সম্পর্কে অন্য কারও এত ভালো ধারণা নেই। তিনি বলেন, “খালের মধ্যে পানি বইতে দেখা আমাকে সব সময় সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়ে এসেছে। এভাবে আমরা খেতে চাষ করেছি। এই খালের ওপর আমরা নির্ভর করে আসছি।”

স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে আলপুখারা পর্বতে অষ্টম শতাব্দীতে মুর মুসলিমরা শাখা-প্রশাখাযুক্ত সেচ ব্যবস্থা চালু করেছিল। আজও সেই খাল ব্যবহার করা হচ্ছে। পাকো ও তার ছেলে আন্তোনিও তাদের ক্যাপসিকামের খেতে এভাবে পানি দিচ্ছেন। মুরদের ঐতিহ্যের সুফল এখনো ভোগ করছেন তারা।

আন্তোনিও মনে করেন, “এই প্রণালীর মাধ্যমে তারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। রোমানরাও খাল কেটেছে বটে, কিন্তু আরবরা সেগুলোকে নিখুঁত করে তুলেছিল।”

তবে অনেক পরিখা (দুর্গ বা রাজপ্রাসাদের চারপাশে খনন করা খাল) কয়েক শতাব্দী ধরে ব্যবহার করা হয়নি। তাই খোসে মারিয়া মার্তিন সিবান্তসের সঙ্গে তারা সেগুলো পুনরুদ্ধারের কাজ করছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে তার কাছে সেই প্রণালীর গুরুত্ব চাষবাসের তুলনায় অনেক বেশি।

খোসে মনে করেন, “এখানকার মতো প্রাচীন খালগুলো পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো প্রাণ সঞ্চার করে। পানির একটা অংশ মাটির নিচে চলে যায় এবং সেখানে আবার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এভাবে এই প্রণালী আরও বড় জীববৈচিত্র্য সৃষ্টির কাজে অবদান রাখছে।”

শাখা-প্রশাখার কারণে খালের পানি বেশি দ্রুত বয়ে যেতে পারে না। পানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে চলায় তাতে সুবিধাই হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পাকোর মনে আর কোনো সংশয় নেই। পাকো পেরেস বলেন, “আমার গ্রামে বহু বছর ধরে তুষারপাত ঘটেনি। আগে আমাদের বাড়ির সমতল ছাদ থেকে বরফ সরিয়ে রাস্তার ওপর ফেলতে হতো। তখন ১৫-২০ দিন বা এক মাস গ্রাম বরফে ঢাকা থাকত। এখন আর সেটা হয় না।”

জলাধারগুলো পানির প্রকট অভাবের সাক্ষ্য বহন করে। অথচ স্পেনে আম ও আভোকাডোর মতো আরও বেশি করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলমূল চাষ হচ্ছে, যে কাজে অনেক পানির প্রয়োজন। চাষবাসের কাজে আরও বেশি করে স্বয়ংক্রিয় প্রণালী ব্যবহার করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রত্যেকটি গাছের গোঁড়ায় পানির ছিটা দেওয়া হয়।

কৃষি প্রযুক্তিবিদ হিসেবে অ্যাদুয়ার্দো মালদোনাদোর মতে, “প্রাচীন খালগুলোর আর কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ সরবরাহের সময় পানি ছুঁইয়ে পড়ে বাষ্পীভূত হয়ে যায়।”

অ্যাদুয়ার্দোর মতে, “ড্রিপ সেচই হলো ভবিষ্যতের পথ। এই প্রণালী অনেক বেশি কার্যকর এবং সব ধরনের প্লান্টেশনে কাজে লাগানো সম্ভব। এর মাধ্যমে আমরা ৪০% থেকে ৬০% পানি সাশ্রয় করতে পারি।”

অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে আজকের যুগে মুল আমলের পরিখাগুলির প্রাসঙ্গিকতা বরং আরও বেড়ে গেছে। সে কারণে তারা আলপুখারার গ্রামগুলোর বয়স্ক মানুষদের কাছে সে বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করছেন।

খোসে মারিয়া মার্তিন সিবান্তস বলেন, “এই জ্ঞান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কার্যকারিতা বিচার করি, বিশেষ করে ইকোলজিকাল ব্যবহারের কথা ভাবি, তখন বুঝতে পারবো যে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই প্রণালীগুলো অনেক বেশি কার্যকর।”

তবে ঐতিহ্যবাহী চাষিদের মধ্যে পুরানো এই খাল ব্যবহারের প্রবণতা কমে চলেছে। সে কারণে হাজার বছরের পুরানো মুর আমলের সেচ ব্যবস্থা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

জলবায়ু,কৃষিপণ্য,পানি,স্পেন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close