নতুন বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে তেলের দাম

জ্বালানি তেল

নতুন বছর ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে দফায় দফায় বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। বছরের প্রথম মাসেই অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। জ্বালানি তেলের এমন দাম ২০১৪ সালের পর আর দেখা যায়নি।

বছরের প্রথম মাসজুড়েই সব ধরনের তেলের দাম দফায় দফায় বেড়ে উঠেছে নতুন উচ্চতায় । জানুয়ারিতে ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়েছে অপরিশোধিত তেলের দাম। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি।

সারা মাসের তথ্যের পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরের প্রথম সপ্তাহেই প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৭৮ দশমিক ৯৩ ডলারে উঠে আসে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম দাঁড়ায় ৮৪ দশমিক ২৬ ডলারে। তৃতীয় সপ্তাহে ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তলের দাম দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ১৩ ডলার।

গত এক সপ্তাহে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে অপরিশোধিত তেলের ব্যারেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ২৯ ডলারে। এতে বছরের প্রথম মাসেই অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেনের একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৮ দশমিক ৭৪ ডলারে ওঠে।

এদিকে, অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দামও নতুন বছরের প্রথম মাসজুড়েই বেড়েছে। বছরের প্রথম সপ্তাহে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৮১ দশমিক ৭৬ ডলারে উঠে আসে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক ৪৭ ডলারে। তৃতীয় সপ্তাহে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে ৮৭ দশমিক ৮৯ ডলারে উঠে আসে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম।

গত এক সপ্তাহে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ৮৯ দশমিক ৮০ ডলারে উঠে এসেছে। এতে বছরের প্রথম মাসেই এই জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এছাড়া, গত এক সপ্তাহে হিটিং অয়েলের দাম ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে প্রতি গ্যালন ২ দশমিক ৭৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বছরের প্রথম সপ্তাহে হিটিং অয়েলের দাম বাড়ে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়ে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং তৃতীয় সপ্তাহে বাড়ে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। এতে বছরের প্রথম মাসে হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে ৫১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

উল্লেখ্য, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের মধ্যে পড়ে তেল। সেদিন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়। রেকর্ড এ দরপতনের পরেই অবশ্যই তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে রেকর্ড দরপতনের ধকল সামলে ২০২০ সালের বেশিরভাগ সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারে আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল।

তবে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়া এবং লিবিয়ার তেল উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঝে বিশ্ববাজারে তেলের বড় দরপতন হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অপরিশোধিত ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়। যদিও ওই বছরের নভেম্বর থেকে আবার তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। কিন্তু প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে থেকেই ২০২০ সাল শেষ হয়।

২০২১ সালের শুরুতেই তেলের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। মহামারির মধ্যেই কয়েক দফা দাম বেড়ে প্রথমবার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৬০ ডলারে উঠে আসে। এর মাধ্যমে মহামারি শুরু হওয়ার আগের দামে ফিরে যায় তেল।

তেলের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আবারো দেখা দেয় গত বছরের জুন মাস থেকে। সে মাসে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে উঠে আসে। অক্টোবরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮০ ডলার স্পর্শ করে, যার মাধ্যমে ২০১৪ সালের নভেম্বরের পর আবারও অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৮০ ডলারের দেখা পায়।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস