• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

রিজার্ভ চুরি: বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরসিবিসির মামলা খারিজ

প্রকাশ:  ১৪ জুলাই ২০২২, ১৫:২৫ | আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২২, ১৫:৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজার্ভ চুরির ঘটনার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) করা মানহানি মামলা খারিজ করে দিয়েছে ফিলিপিন্সের আদালত। গত ৩০ জুন ফিলিপিন্সের আদালতে এ বিষয়ে রায় ঘোষণার পর তার কপি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে মানহানি মামলা ওই দেশের আদালতে আরসিবিসি করেছিল তা খারিজ করে দিয়েছে দেশটির আদালত। ওই দেশের আদালত বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে বিচারের আওতায় আনার এখতিয়ার ফিলিপিন্সের ওই আদালতের নেই। আর এই রায়ের নথিপত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তারা পাঠিয়েছে। আমরা তাদের পাঠানো নথিপত্র পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, নিউইয়র্কের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যে মামলা করেছিল, তা চলমান রয়েছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার করতে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর সিনিয়র কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল।

বাংলাদেশ মামলা করার পর ওই বছর ৬ মার্চ ফিলিপিন্সের সিভিল কোর্টে আরসিবিসির পাল্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি পেসো (১৯ লাখ ডলার) দাবি করে তারা। ফিলিপিন্সের ব্যাংকটির মামলায় বলা হয়, টাকা আদায় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, সেজন্য তারা আরসিবিসির সুনাম ক্ষুণ্ন করতে, ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু চুরি যাওয়া টাকা আরসিবিসির কাছে ছিল না, ওই টাকার দায়ও আরসিবিসির নয়। আরসিবিসি মামলা করার পর আইনি লড়াইয়ের জন্য ম্যানিলার ‘বারনাস ল অফিস’কে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ফিলিপিন্সের আদালতের আরসিবিসির পক্ষে রায় দিলে বাংলাদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ জুন আরসিবিসির মানহানি মামলা খারিজ করে দেয় ফিলিপাইনের আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে বিচারের আওতায় আনার এখতিয়ার ফিলিপিন্সের ওই আদালতের নেই। সে কারণে আরসিবিসির মামলাটি খারিজ করা হল।

এদিকে, গত এপ্রিলে আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে করা বাংলাদেশের করা মামলা খারিজ হয়ে যায়। ওই সময় নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বলা হয়েছিল, ওই মামলা বিচারের ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই’। পরে বাংলাদেশ ব‌্যাংকের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ আদালতে মামলা করা হয়েছে। যা চলমান আছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সে সময় বলেছিল, রিজার্ভের অর্থ চুরির কাজে ‘অজ্ঞাতনামা উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের’ সহায়তা নেয় আসামিরা। ‘নেস্টেগ’ ও ‘ম্যাকট্রাক’ এর মত ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কে ঢোকার জন্য পথ বের করে। পরে নিউইয়র্ক ফেড থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয় নিউইয়র্ক ও ফিলিপিন্সে আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে।

রিজার্ভ চুরির এই ঘটনা এক মাস পর ফিলিন্সের গণমাধ্যমের খবরে প্রথম জানা যায়। এই ঘটনার পর তখনকার গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। একই সময় দুই ডেপুটি গভর্নরকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্ত করতে ওই বছরের ১৫ মার্চ সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন- বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।

২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে পুরো প্রতিবেদন জমা দেন তারা।

পূর্বপশ্চিম/ম

রিজার্ভ চুরি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close