• শনিবার, ০১ জুন ২০২৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

হুন্ডি সম্পৃক্ততায় ২৩০ এমএফএস হিসাব জব্দ

প্রকাশ:  ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১২:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

হুন্ডির সম্পৃক্ততা থাকায় দেশের একাধিক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ২৩০টি হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর মধ্যে গতকালই জব্দ করা হয়েছে ২০০টি হিসাব। এসব এমএফএস অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে আসা রেমিট্যান্স জমা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছর ২৩০টি এমএফএস হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের প্রিয়জনদের হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে আহ্বান জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) প্রেরণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনাদের অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে না পাঠিয়ে বৈধ পথে অথবা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করুন, দেশ গড়ায় মূল্যবান অবদান রাখুন এবং আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন।’ উল্লেখ্য, অবৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষে

প্রচলিত আইনে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এই বিষয়ে বিএফআইইউর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বন্ধ করতেই বাংলাদেশ ব্যাংক হিসাব জব্দ করার উদ্যোগ নিয়েছে। যাদের হিসাব জব্দ করা হয়েছে তাদের অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার না করে, বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। এসব অ্যাকাউন্টধারী বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করে বিএফআইইউকে জানানোর পর এই জব্দ করা হিসাবগুলো পুনরায় চালু করা হবে।

‘হুন্ডি কারবারিরা’ আগে বাসাবাড়িতে গিয়ে নগদ টাকা পৌঁছে দিত। এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা গ্রাহকের এমএফএস হিসাবের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও হুন্ডির টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। মোবাইলে বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল হুন্ডি।

এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, বিকাশ-নগদ ও রকেটের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট অবৈধ উপায়ে বিদেশ থেকে অর্থ আনা ও বিদেশে অর্থ পাঠানোয় জড়িত। ফলে এসব এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। সিআইডির হিসাবে, গত চার মাসে শুধু মোবাইল অ্যাকাউন্টে হুন্ডির কারণে ২৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। আর এক বছরের প্রায় ৭৮০ কোটি ডলার দেশেই আসেনি। হুন্ডির সঙ্গে জড়িত ১৬ জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

করোনার সময় অবৈধ চ্যানেল বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স অনেক বেশি এসেছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমতে থাকে। সক্রিয় হতে থাকে অবৈধ মাধ্যমগুলো। বাড়তে থাকে হুন্ডি প্রবণতা। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের পরও হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানো বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন দেশে হুন্ডি কারবারিদের অপতৎপরতার কারণে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ দেশে আসছে না। এর পরিবর্তে দেশে আসছে স্থানীয় মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করে দেওয়ার সংকেত কিংবা মেসেজ সংবলিত নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা মেনে হুন্ডি কারবারিদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা প্রবাসীর স্বজনের কাছে সরাসরি কিংবা তার নিজস্ব মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পৌঁছে দিচ্ছে।

বিএফআইইউ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close