• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

সংকটেও বেড়েছে ব্যাংকের মুনাফা

প্রকাশ:  ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

তারল্য সংকট, ঋণে অনিয়ম, রিজার্ভ ঘাটতি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও ডলার সংকটে সারা বছরই আলোচিত ছিল দেশের ব্যাংক খাত। সবমিলিয়ে ২০২২ সালে দেশের অর্থনীতি ছিল নানা সমস্যায় জর্জরিত। তবে এত কিছুর মধ্যেও দেশের প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বেনামি ঋণ ও আমানত ঘাটতির অভিযোগ নিয়েও সদ্য বিদায়ী বছরে সকল ব্যাংকে পেছনে ফেলে মুনাফার তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। তবে নিরীক্ষিত হিসাব না হওয়ায় এই মুনাফা দিয়ে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে আমদানির পরিমাণ ইতিহাস তৈরি করেছে। একই সঙ্গে রেকর্ড রপ্তানিও হয়েছে দেশ থেকে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের কমিশন এবং ডলারের বাজারে বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাজে লাগিয়েছে ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক ডলার বেচাকেনায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে। সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণ আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে নানা ধাক্কা আসার পরও ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় সবার শীর্ষে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক খ্যাত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকটি গত বছর বিদায়ী বছরে মুনাফা করেছে ২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে মুনাফার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। আর মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। তার আগের বছরে মুনাফার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। আর পূবালী ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ হলো ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির আগের বছর মুনাফা করেছে ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।

    ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে, এটা ঠিক নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের জন্য দেখানো হচ্ছে তা প্রকৃত মুনাফা নয়। এটার মাধ্যমে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র জানা যায় না। কারণ এ মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণ ও কর-পরবর্তী মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা। আর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এরকম মুনাফা প্রকাশ করতে পারে না।

    এদিকে সাউথ ইস্ট ব্যাংক বিদায়ী বছরে মুনাফা কেরছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। যা ২০২১ সালে ছিল ১০১৬ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিডেট (এসআইবিএল) গত বছর পরিচালনা মুনাফা করেছে ৫৫০ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ৫০১ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক বিদায়ী বছরে মুনাফা করেছে ২১১ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৪৭ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। যদিও আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৭৮০ কোটি টাকা। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৮১০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআবিসি) ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটি আগের বছর মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক বিদায়ী বছরে মুনাফা করেছে ২০০ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ২১০ কোটি টাকা। আর মিডল্যান্ড ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৮০ কোটি টাকা। যা আগের বছরে ছিল ১৬২ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। এই মুনাফার পরিমান আগের বছর ছিল ৩৭৫ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের মুনাফা পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকতা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তি ছিল। পণ্য আমদানি করতে দেশের আমদানিকারদের ব্যাপক হারে ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া দেশের ডলারের বাজার ছিল অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে। এ সময়ে ডলারের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ডলার বাজার থেকে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close