জোর করে ব্যাংকের একীভূতকরণ ঠিক হবে না :ড. ফরাসউদ্দিন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, “একীভূতকরণ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তবে এক ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংকে জোর করে একীভূত করে খারাপ ব্যাংককে ভালো করা যাবে না। একীভূত বা টেকওভার হতে পারে। তবে কোনো কিছুই জোর করা ঠিক না।”
সম্পর্কিত খবর
ফরাসউদ্দিন বলেন, “ব্যাংক একীভূতকরণ দরকার আছে কি না সেটা বলতে হবে। যে দুটি ব্যাংককে একীভূত করা হবে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। আমাদের উৎকণ্ঠা হলো-ব্যাংক বন্ধ হলে বোধ হয় আমানতের টাকা পাওয়া যাবে না- এইটা ঠিক না। এমনটা হয় না। অনেক দেশেই ব্যাংক বন্ধ হচ্ছে, চীনেও হচ্ছে। এখন ব্যাংকে টাকা আসার দরকার। এজন্য আমানতের ক্ষেত্রে যত প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করতে হবে।”
তিনি বলেন, “যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবক্ষয়ের কথা শুনি তখন কষ্ট লাগে। অনেক কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। অনিয়ম হচ্ছে, কিন্তু অনিয়মের ব্যাপারে ভূমিকা নিতে পারছেন না। ঋণখেলাপি, কর খেলাপি এবং অর্থপাচার একই সূত্রে গাথা। ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংকে অর্থের টান পড়েছে। এ কারণে ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমছে না। শক্ত হাতে খেলাপি ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। বিষয়গুলো নীতি নির্ধারকদের বোঝানোর মতো একটা লোক প্রয়োজন, ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন দরকার।”
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, “সবাই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি। কেউ অনেক বেশি, কেউ একেবারেই কম। কেন যেন অর্থপাচারের ব্যাপারে সরকার নীরব। তাদের তালিকা প্রকাশে সংসদে আলোচনা হয়, কিন্তু প্রকাশ করা হয় না। পাচার নিয়ে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) নীরব। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঋণখেলাপিরা যদি অনেক বড় হয়ে যায়, তাহলে সমস্যাও বড় হয়। মাত্র ১০ হাজার টাকার কৃষি ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে কৃষককে জেলে যেতে হয়। কিন্তু ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হলে তাকে সালাম দেওয়া হয়, পাশে বসিয়ে চা খাওয়া হয়, এটা হতে পারে না। খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ঋণগুলো অবশ্যই আদায় করা উচিত।”
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, “কিছু অসাধু খাদ্য কর্মকর্তা ও মিল মালিকরা কারচুপি করছেন। যার ফলে দেশে খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। তাই চাইলেও সরকার খাদ্য মূল্যস্ফীতি বা ফুড ইনফ্লেশন কমাতে পারছেন না।” এক্ষেত্রে সরকারের গুদামের মজুত বাড়ানো এবং বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশে স্বস্তি ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই ব্যাংকার।
তিনি বলেন, “ধনী-গরিবের বৈষম্য আগেও ছিল। এখন ধনী-গরিবের মধ্যে অর্থের পার্থক্য আগের তুলনায় বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটি দাতা মুরুব্বির পরামর্শে সরকার ৯২ সালে স্বল্পমেয়াদী আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটাই ব্যাংকের বড় সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানের অনেক পথ রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সমস্যার সমাধানে ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।”