• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘অর্থনীতিতে টেক অফ হয়ে গেছে, এখন উড়ব’

প্রকাশ:  ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:১৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি। সরকারের গত মেয়াদে সামলেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এবার দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের। সম্প্রতি সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, অর্থনীতিতে টেক অফ হয়ে গেছে, এখন ওড়ার সময়। সূত্র: বণিক বার্তা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের পর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। কতটুকু আস্থা রাখতে পারে দেশের মানুষ?

সম্পর্কিত খবর

    আমি সবসময়ই আশাবাদী মানুষ। স্বপ্ন দেখাতে পছন্দ করি। মানুষকে বিশ্বাসের জায়গায় নিতে ও স্বপ্ন দেখাতে হবে। স্বপ্ন দেখানোর পর সেগুলো বাস্তবায়নে আমি সবসময়ই জোর দিয়ে থাকি। আমরা এতদিন নানা অবকাঠামো, বিশেষ করে রেললাইন, বন্দর, সড়ক, সেতু কিংবা উন্নত ভবন তৈরি করেছি। এগুলোর পাশাপাশি আমরা নতুন অবকাঠামো তৈরি করতে যাচ্ছি। সেটি হচ্ছে বিশ্বাস ও আস্থা। এটি শক্তিশালী অবকাঠামো। আমরা যে স্বপ্ন দেখাব, সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি, তা দেখাতে পারলেই মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। মানুষের মধ্যে যখন বিশ্বাস জন্ম নেবে, তখন তারা সম্পূর্ণরূপে কাজ করতে এগিয়ে আসবে। আমি পরিকল্পনামন্ত্রী থাকা অবস্থায় সারা দেশের মানুষের মধ্যে স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছি। এটাও বোঝাতে সমর্থ হয়েছি যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দেশের প্রত্যেক মানুষের একটি করে স্বপ্ন আছে। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছি। আমার ওপর দেশের মানুষ আস্থা রাখতে পারে। আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ ও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর, এমন কাজই আমি করব। আপনারা আমার কথা শোনেন, বিশ্বাস করেন। আপনারা অবশ্যই জিতবেন।

    বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কী উদ্যোগ থাকবে?

    বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে আমরা একধাপ এগিয়েছি। গত ১০ বছরে ১৬টি দেশকে টপকাতে সক্ষম হয়েছি। গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আবারো একটি দেশকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০৩৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হবে। যদিও দেশের অর্থনীতিবিদরা অর্থনৈতিক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা ও সুশাসন নিশ্চিত করাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন। কিন্তু আমি মনে করি, তারা সবসময় আশঙ্কার কথা বলেন, আতঙ্কের কথা বলেন, ঝড়ঝাপটার কথা বলেন, টাইফুনের কথা বলেন, ভূমিকম্পের কথা বলেন। এ রকম চিন্তা করলে কেউ কিছু করতে পারবে না। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করছে বেসরকারি খাত। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের পেছনে এখন পর্যন্ত সিংহভাগ অবদান বেসরকারি খাতের। সামনের দিনেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাত থাকবে চালকের আসনে। সহযোগী হিসেবে সব ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার। যারা এখন বিনিয়োগ করছেন না, আমরা তাদের ফিরিয়ে আনব। আগামী কয়েক বছরে অনেকেই ফিরবেন। যে যেখানেই গিয়ে থাকুক না কেন, তারা ফিরে আসবেই। আমি ফিরিয়ে আনব। শুধু দেশের বিনিয়োগকারী নয়, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদেরও আনা হবে। যারা বিদেশে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে, আমি আশা করি, তাদের ফেরত পাব। ব্যবসায়ীরা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে যদি উন্নতি হয়, তাহলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ অনেক আসবে। কারা ফেরত আসবে, তা আপনারা কল্পনাও করতে পারেন না। অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা আসবেই। উৎপাদন খাতকে বিকশিত করব। সেবা খাতকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাব। যে খাতের জন্য যা প্রয়োজন, তাদের তা-ই দেব। দেশের অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দেব।

    আর্থিক খাত নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

    দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হলেও কিছু জায়গায় বিতর্ক রয়েছে। সেটি হচ্ছে আর্থিক খাত। এগুলো আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে যতটা শুনতে পাই, ততটা খারাপ অবস্থা নয়। যদি ব্যাংকিং খাত বা আর্থিক খাত অত খারাপ হতো, তাহলে সার্বিক অর্থনীতি এতটা উন্নত হলো কীভাবে? অর্থনীতিতে গতিবেগ এল কীভাবে? প্রবৃদ্ধি হলো কীভাবে? তবে আপনাদের মাধ্যমে এবং আমার পর্যালোচনায় যেসব সমস্যা জেনেছি, তা সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। সমাধানের সহজ উপায় হচ্ছে সংস্কার। যেসব জায়গায় দীর্ঘদিন হাত দেয়া হয়নি, সেসব জায়গা নিয়ে ভাবতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে। সেগুলো সবার সঙ্গে বসেই ঠিক করা হবে। সবার আগে কী ধরনের দুর্বলতা আছে, সেটি পর্যালোচনা করে সমাধান করব। অনেক আইন আছে, যেগুলো পুরনো। অনেক কিছুই হালনাগাদ করা হয়নি। সারা বিশ্বেই এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলছে। সময়ের সঙ্গে এসব আইন কতটুকু সংগতিপূর্ণ বা কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে।

    পূর্বসূরি সম্পর্কে আপনার পর্যালোচনা?

    সদ্যসাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি নিরসলভাবে কাজ করে গেছেন। সারা দিনই কাজ করতেন। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা, তার কাজের জন্য প্রশংসা করতেই হবে। তিনি দেশের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। অর্থনীতি গতিশীল করতে মুহিত ভাইয়ের অবদান রয়েছে। তবে দেশের অর্থনীতিকে এ অবস্থানে আনার পেছনে অর্থমন্ত্রীকে সবাই সহযোগিতা করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, এ সহযোগিতা পেলে দেশের অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। সবাইকে নিয়েই আমি এগিয়ে যেতে চাই।

    অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দিতে কী পদক্ষেপ থাকবে?

    ২০০৯ সালে লেহম্যান ব্রাদার্সের মতো ব্যাংক পতন হয়েছে। সারা বিশ্বে নানা আর্থিক দুর্বলতা এসেছে। বিভিন্নভাবে অর্থনীতির পতন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটার কোনো প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ১ ঘণ্টার জন্য পিছিয়ে থাকেনি। এখন আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি। এতদিন আমরা টেক অফ স্টেজে ছিলাম। অর্থনীতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এবার অর্থনীতিকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাব। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি নতুন উদ্যম নিয়ে ওড়া শুরু করবে। এজন্য বেশ কয়েকটি কাজ করতে হবে। অর্থনীতির যে যে জায়গায় উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে, সেগুলো উন্নত করতে হবে। যেসব সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলোকে উন্মোচন করতে হবে, নতুনভাবে বাস্কেটে নিয়ে আসতে হবে। কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে, মেরামত করতে হবে। তাহলেই অর্থনীতি নিরবচ্ছিন্নভাবে উড়তে পারবে।

    বাজেট কোনো বাড়তি চাপ তৈরি করে কি?

    বাজেট শুধু এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়। আমাদের অবস্থানকে ভিত্তি করে বাজেটে শুধু এক বছরেরই কথা থাকবে না। আগামী পাঁচ বছরে কী থাকবে, তার প্রতিফলন থাকবে। বাজেটে অবশ্যই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকবে। অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সংযোগ করতে হয় বাজেটকে। দেশের মানুষের চাহিদার খোরাক হিসেবেই বাজেট দেয়া হবে। নতুনত্ব ও সৃজনশীলতা থাকবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হবে।

    বাজেটে কর-জিডিপি অনুপাত সঠিক আছে বলে মনে করেন কি?

    কর-জিপিডি অনুপাত এখনো অনেক কম। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। আর্থিক খাতের অন্যতম উপাদান হলো অভ্যন্তরীণ কর আহরণ। সরকারের রাজস্ব বাড়াতে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য সহজ কাজ হলো রাজস্ব আহরণের জায়গাগুলোকে আরো সংগতিপূর্ণ করা। মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক, আয়কর, রফতানি কর, করপোরেট ট্যাক্স, যার যেটা দেয়া দরকার, তারা সেটা দেবে। যারা কর দেন, তাদের আহত না করেই রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। যারা যোগ্য, তাদের সবাইকে করের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করব। কোন খাত থেকে বেশি রাজস্ব আসবে, তাও নির্ধারণ করব। যারা কর দেবেন, তাদের কখনই ব্যথিত করা যাবে না, কোনোভাবেই কষ্ট দেয়া যাবে না। আমার মূল লক্ষ্য হবে আগামী পাঁচটি বছর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো আর ক্রমান্বয়ে করের হার সহনীয় রাখা। কর-জিডিপি অনুপাত আমি একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসব। রাজস্ব বাড়াতে করের হার কমাতে হলে সেটিও করব। আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে প্রবৃদ্ধিবান্ধব, উন্নয়নবান্ধব, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানবান্ধব করা।

    পিবিডি/ওএফ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close