• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সংগঠনকে শক্তিশালী করে আন্দোলন গড়ে তোলার তাগিদ বিএনপি নেতাদের

প্রকাশ:  ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৬:৫২
নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, আজকে সময় এসেছে,এই দেশের মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। সুতারাং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে প্রথম কাজটি করতে হবে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।

বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি আয়োজিত এক মানববন্ধনে বিএনপির নেতারা এ তাগাদা দেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।

তিনি বলেন, আমরা বারবার খালেদা জিয়ার পছন্দমত বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি করলেও সরকার তা শুনছে না। সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ভয় পায়। কারণ সরকার মনে করে তিনি চিকিৎসা নিতে গেলেই তারা ক্ষমতা হারাবে। এই একটি কারণ ও ভয়ে তারা তাকে আটকে রেখেছে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেউ ভোট দিতে যায়নি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, এতে প্রমাণ হয়েছে দেশের মানুষ এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়েছে। সুতরাং গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হলে প্রথমে খালেদা জিয়াকে আমাদের মুক্ত করতে হবে। এ জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ‍দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

খালেদা জিয়া অসুস্থ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, চিকিৎসা পাওয়া তার মৌলিক অধিকার হলেও সেই অধিকারটুকু তিনি পাচ্ছেন না। তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এই অবৈধ সরকার গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই জানি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা হয়েছে, সবগুলোতে তিনি জামিনযোগ্য। এসব মামলায় আর যারা ছিলেন, তাদের জামিন হয়ে গেছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে একটার পর একটা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এর একটা উদ্দেশ্য আছে, তা হলো তিনি দেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্রের মা হিসেবে স্বীকৃত।

আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তারা এই আয়োজন সম্পন্ন করছে। কিন্তু দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে তারা ধরা পড়ে গেছে। তারা জাতীয় নির্বাচন করেছে, সেই নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোট দখল করে নিয়ে গেছে আগের দিন রাতে। একাদশ সংসদ নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। পরিষ্কার করে বলছি, নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে হবে। আবার একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

মানববন্ধনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুধু চিকিৎসার কারণে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। যাতে করে তিনি বিদেশে গিয়ে বা দেশে তার পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এমন আন্দোলন করতে হবে যাতে সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

তিনি আরও বলেন, এর আগেও খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু তার চিকিৎসা হয় নাই। এখন আবার তাকে আনা হবে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। তাকে ‍মুক্তি করতে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তাকে মুক্ত করতে হবে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হতে পারে। তাহলে খালেদা জিয়াকে কেন যেতে পারবে না। তিনি কেন পছন্দমত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন না?

বর্তমান সরকার গায়ের জোরে, অস্ত্রের জোরে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে সরকার যতো বড় বড় কথা বলুক না কেন, তাদের কোনো জনপ্রতিনিধিত্ব নাই।

সরকারের সমালোচনা করে মঈন খান বলেন, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য একদলীয় শাসনের মাধ্যমে দেশ শাসন করতে চায়। যেখানে কারও কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের চিকিৎসা অধিকার রয়েছে। বিএনপির প্রতিটি সৈনিককে এই অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে।

মঈন বলেন, কোনো স্বৈরাচারী সরকার কোনো মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সেলিনা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. জাহিদ হোসেন, দলটির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালামসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

পিবিডি/জিএম

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া,জাতীয় প্রেসক্লাব,মানববন্ধন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close