• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করার নির্দেশ

প্রকাশ:  ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:০৩
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি পাহাড় আগামী এক মাসের মধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত করতে মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে ওসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে অবৈধভাবে দেওয়া গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভা থেকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এ নির্দেশ দেন।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন জানান, চট্টগ্রামে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানাধীন মিলিয়ে ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে।

এসব পাহাড়ের মধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং বাকি সাতটির মালিক সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, গণপূর্ত ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।

সভার সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, আগামী ১৫ মের মধ্যে এসব পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের নিজ উদ্যোগেই পাহাড়কে অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়গুলোকে তাদের অবৈধ বসতি সরিয়ে নিতে চিঠি দেওয়া হবে।

পাহাড় দখলমুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন সহায়ত করবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এজন্য প্রতিবছরই বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

জানা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করতে গিয়ে গত এক যুগে কম পক্ষে দুই শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ২০০৭ সালে। ওই বছর ১১ জুন পাহাড় ধসে ১২৯ জনের মৃত্যু ঘটে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রামে ৩০টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জুনের পাহাড় ধসের পর ১২টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই বছরই আরও একটি এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে আরও ১৭টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত এই ৩০টি পাহাড়ের মধ্যে নগরীর ১১টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস ছয়শ ৬৬টি পরিবারের। এর মধ্যে লালখান বাজার এলাকায় মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে তিনশ ২০টি, একে খানের মালিকানাধীন পাহাড়ে এক ৮৬টি, ইস্পাহানী পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে পাঁচটি, লেকসিটি এলাকায় ১২টি, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি এলাকায় ২৭টি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকার পাহাড়ে ২২টি, সিটি করপোরেশনের পাহাড়ে ১১টি, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকার কাছে পাহাড়ে নয়টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তরে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ৩৮টি, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে তিনটি ও জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩টি পরিবার বসবাস করছে।

তবে পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের প্রকৃত সংখ্যা সিটি করপোরেশনের এই পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি। অনেক পাহাড় রাজনৈতিকভাবে দখল করে সেখানে ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে প্রভাবশালীরা। পাহাড়ের এসব ঘরে ভাড়া কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো ঝুঁকে পড়ছে পাহাড়ে বসবাসের দিকে। স্থায়ী ও কঠোর কোনও উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বাড়ছে।

পিবিডি/এআইএস

চট্টগ্রাম
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close