• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ড. কামাল পদত্যাগ করুন যুদ্ধাপরাধীদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে

প্রকাশ:  ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:৩৩ | আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫৭
পীর হাবিবুর রহমান

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে জানলে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতাম না। কিন্তু ভবিষ্যৎ সরকারে যদি জামায়াত নেতাদের কোনো ভূমিকা থাকে তাহলে আমি তাদের সঙ্গে এক দিনও থাকব না।’ ড. কামাল হোসেন আরও বলেছেন, ‘দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন দেওয়াটা বোকামি। আমি লিখিত দিয়েছি যে, জামায়াতকে কোনো সমর্থন দেওয়া এবং ধর্ম, মৌলবাদ, চরমপন্থাকে সামনে আনা যাবে না।’

প্রিয় শ্রদ্ধেয় ড. কামাল আমাদের সংবিধানপ্রণেতা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ড. কামাল হোসেন যে আত্ম উপলব্ধি করেছেন, যে মহা ভুলের কারণে অনুতপ্ত হচ্ছেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একটিমাত্র পথ এই মুহূর্তে খোলা রয়েছে। তা হচ্ছে, আগামীকাল একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন সামনে রেখে আজ শনিবার এই ভুল সামনে নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে দেশবাসীর সামনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপি-জামায়াতের গভীর আঁতাত ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরকে ২২টি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক ধানের শীষ বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিবাদে সরে দাঁড়ানো। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভোটযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে ড. কামাল হোসেন তাঁর সারা জীবনের অর্জিত সুনাম, সম্মান ও ক্লিন ইমেজ রক্ষা করতে পারেন। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে দেশবাসী জেনে গেছে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান পরিষ্কার করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিই নয়, সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শেখ হাসিনার পক্ষে ভোটারদের সামনে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছে। মহাজোট শক্তির এ ঐক্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ২৯টি আসনে লাঙ্গল প্রতীককেও জয়ী করতে বলেছে।

সম্পর্কিত খবর

    ড. কামাল হোসেন নেতৃত্ব গ্রহণ করায় কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত লন্ডনে পলাতক আসামি তারেক রহমানের বিএনপি ভোটের লড়াইয়ে আশ্রয় পেয়েছিল। ড. কামাল হোসেন নির্বাচনে প্রার্থী হননি। বিএনপির গোপন ইচ্ছা ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে তারেক রহমানকেই যে দেশে এনে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাত তা এখন মানুষের সামনে পরিষ্কার। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছোট দলের বড় নেতারা ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হলেও তাদের সর্বমোট ১৯টি আসনে বিএনপি ছাড় দিয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কিত ধর্মান্ধ, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি আসনে মনোনয়নই দেয়নি, ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক ধানের শীষও বরাদ্দ দিয়েছে। বিএনপি প্রমাণ করেছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটযুদ্ধের ময়দানে তাদের মুখোশ মাত্র। আর বিএনপির আদর্শ ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের আত্মার বন্ধনে বাঁধা পরম মিত্র হচ্ছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত।

    ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই হননি, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ইতিহাসে সংবিধানপ্রণেতার উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে জয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সারা দেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, গ্রেনেড বোমায় ক্ষতবিক্ষত করেছিল। হাওয়া ভবনের প্যারালাল সরকার ক্ষমতাধরই হয়ে ওঠেনি, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণই করেনি দুর্নীতির মহোৎসব তৈরি করেছিল। একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকা-, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণের ভয়াবহতা তৈরি করেছিল। বিএনপি ও জামায়াতের অপশাসন ধানের শীষকে পাপের বিষে পরিণত করে গোটা দেশকে বিষাক্ত করেছিল। সেই অপশাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তি যে প্রতিবাদ ও ঐক্য গড়ে তুলেছিল সেখানে ড. কামাল হোসেনেরও অবস্থান পরিষ্কার ছিল। সেই শাসনামলের ভয়াবহতা মানুষ ভোলেনি। বিরোধী দলে এসে তাদের সহিংস হরতাল-অবরোধে প্রতিহিংসার আঘাত এবং আগুনসন্ত্রাস কতটা হিংস্র ও অমানবিক রূপ লাভ করেছিল তাও মানুষ ভোলেনি। যে অশুভ শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে শতভাগ ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং ক্ষমতা দিয়েছিল, দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিল, সেই শক্তি ড. কামাল হোসেনের চিন্তা-চেতনা, আদর্শ, লক্ষ্য ও মহৎ উদ্দেশ্যের সহায়ক শক্তি হতে পারে না। ড. কামাল হোসেন আজীবন সংবিধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সৎ ও আদর্শিক রাজনীতির স্লোগান ছড়িয়েছেন।

    সেই ড. কামাল হোসেন তাঁর স্লোগানের বাস্তবায়ন আর যা-ই হোক বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে পারবেন না, তা নিশ্চিত বলা যায়। ড. কামাল হোসেন নিজে যেখানে বলছেন, জামায়াতকে ধানের শীষ বরাদ্দ দেওয়া হবে জানলে তিনি এই দায়িত্ব নিতেন না এবং ভবিষ্যতে এদের মূল্যায়ন করলে তিনি একমুহূর্ত থাকবেন না সেখানে এ কথা বলাই যায় যে, বিএনপি তাঁকে ঐক্যফ্রন্টের নেতা নির্বাচিত করে দলের মনোনয়নবাণিজ্য আজান দিয়ে করেছে, প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে জোটই করেনি, ঐক্যফ্রন্টের চেয়ে বেশি আসন ছেড়ে দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে, সেখানে প্রশ্ন বড় হয়ে আসে- এই পাপের দায় কেন ড. কামাল হোসেন দেবেন? মানুষ স্লোগান তুলেছে, ‘নয়া বোতলে পুরনো বিষ, জামায়াত এখন ধানের শীষ’। এবার যখন এত কঠিন পরিস্থিতিতেও ড. কামাল হোসেনকে সামনে এনেও জামায়াতকে বিএনপি ছাড়েনি, ভবিষ্যতেও যে ছাড়বে না তা তারা নিশ্চিত করেছে। ড. কামাল হোসেনের মতো প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব কেন জামায়াত প্রশ্নে ভবিষ্যতের কাছে সময় ছেড়ে দেবেন? এই পাপের শক্তি নিয়ে কেন আগামীকাল তিনি ভোট করবেন? জামায়াত প্রশ্নে আজকেই প্রতিবাদ করে তিনি যদি ঐক্যফ্রন্ট থেকে পদত্যাগ করেন তাহলে তাঁর সুনাম, সম্মান ও আদর্শিক রাজনীতির মর্যাদা রক্ষা পাবে। নতুবা তাঁর সারা জীবনের সব অর্জন ধুলোয় মিশে যাবে।

    আমাদের প্রিয় শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেনের মতো নক্ষত্রের পতন আমরা দেখতে চাই না। রাজনীতিতে যত তিক্ততা-বিভক্তি থাকুক না কেন, ড. কামাল হোসেনের মতো কিছু ব্যক্তির জাতির সামনে আদর্শিক চিন্তা ও চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে থাকা জরুরি। দোহাই ড. কামাল হোসেন- এসব অন্ধকার, অশুভ, ধর্মান্ধ, যুদ্ধাপরাধী শক্তির দায় আপনি নেবেন না। আজকেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ান, ইতিহাস আপনাকে আপনার প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দিতে কার্পণ্য করবে না। (সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

    লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close