• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ডাকসু নির্বাচন: ছাত্রলীগ বলছে সহাবস্থান আছে, অন্যরা বলছে নেই

প্রকাশ:  ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৫ | আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৭
মোছাদ্দেক বিল্লাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

এক সময়ের দ্বিতীয় সংসদ খ্যাত ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে৷ সকল আইনি জটিলতা পার করে ৩১ মার্চেকে সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে৷ এ লক্ষ্যে প্রশাসন দফায় দফায় ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করছে৷ প্রতিদিনই ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে উপাচার্যসহ ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের৷ ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ড. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চলতি বছরের শুরুতে ৫ সদস্যবিশিষ্ট গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি গঠন করে৷

গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি চলতি মাসের ১০ই জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ১৩ সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করে৷বৈঠকে ১৪ জানুয়ারির মধ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ দেয় সংশোধন কমিটি৷ছাত্র সংগঠনগুলো লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার পর গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি উপাচার্যের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশও করেছে। চলতি মাসের শেষ দিকের সিন্ডিকেট বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে উপাচার্য জানান৷

সম্পর্কিত খবর

    ২১ জানুয়ারি সর্বশেষ সভায় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে কোনও প্রকার হামলা করবে না এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে কোনো ধরনের বাধা দিবে না বলে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ।

    সোমবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সভা বেলা ১১টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান৷ ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের সমান সুযোগসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তারা।

    এসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ হলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল অন্যান্ন সংগঠনের সংগঠনের নেতা-কর্মী।তারা স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পালন করে আসছে,কোনো রকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না৷

    এসময় ছাত্রদলের নেতাদের প্রতি তিনি বলেন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ছাত্রদল করে তাদের তালিকা তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেয়৷ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কেউ ছাত্রদল নেতা-কর্মী বলে পরিচয় দিলে তার কোনো সমস্যা করা হবে না বলে কথা দেন৷বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারবেন, আমরা কোনও ধরনের সমস্যা করব না।

    ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু বলেন,আমরা পরিবেশ পরিষদের সভায় মূল দুটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি৷এ দুটি বিষয়কে ডাকসু নির্বাচনের পূর্বশর্ত বলে মনে করি৷প্রথমত,নির্বাচনের জন্য মধুর ক্যান্টিনসহ সকল হলে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷দ্বিতীয়ত,হলের ভিতর ভোট গ্রহন না করে একাডেমিক ভবনে সিসিটিভি ক্যামেরার অধীনে ভোট গ্রহন করতে হবে৷

    সহাবস্থান প্রশ্নে তিনি বলেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের নিরাপত্তায় বিগত দুটি সভায় যোগ দিতে আমরা এসেছি৷ কিন্তু আজকে আর প্রক্টরিয়াল টিমের প্রয়োজন হয়নি।প্রকৃত অর্থে সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত হলে তা স্বীকার করতেও আমরা পিছপা হব না়৷ডাকসু নির্বাচনকে আমরা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি ,সুতরাং এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সফল করার জন্য আমরা সব ধরনের ছাড় দিতে রাজী আছি৷

    তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আজকে আমাদের মধুর ক্যান্টিনে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ সম্ভব হলে এবং উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে পরের দিন থেকেই আমরা মধুর ক্যান্টিনে বসে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই৷ আমাদের আগমনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি হোক তা আমরা চাই না। আমরা চাই ছাত্রলীগ সময় নিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ সুন্দর করুক৷ তফসিলের আগেই সহাবস্থানের একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি অনুরোধ জানান ৷

    এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, "সহাবস্থান বলতে শুধু হলে থাকাকে বোঝায় না৷বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইচ্ছে অনুযায়ী আদর্শ গ্রহণ ও দল বেচে নেওয়া এ সবই সহাবস্থানের সাথে জড়িত"৷

    "এছাড়া হলগুলোতে প্রথম বর্ষের ছাত্রদেরকে জোর করে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷আর আমরা হলগুলোতে এখনও কোনো কার্যক্রম করতে পারছি না৷সুতরাং ছাত্রলীগের এ অযৌক্তিক দাবীকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি"৷

    সহাবস্থান বিষয়ে ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি উম্মে হাবীবা বেনজীর বলেন, "ক্যাম্পাসে প্রকৃত অর্থে কোনো সহাবস্থান নেই৷কারণ আমরা প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি,বিভিন্ন ধরনের হামলার শিকার হচ্ছি৷গত ডিসেম্বর মাসেও আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে৷আর হলগুলোতেও আমরা কোনো কার্যক্রম চালাতে পারছি না,পুরোটাই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে৷ এছাড়া ছাত্রদলের মতো একটি সংগঠনের ক্যাম্পাসে কোনো প্রবেশাধিকার নেই''৷

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে প্রকৃতপক্ষে কোনো সহাবস্থান নেই,কারণ হলগুলো পুরোটাই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে৷ আর আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীন অধিকারটাও পাচ্ছি না৷প্রায়ই বিরোধী মতাদর্শের ছাত্রদের উপর হামলা করা হয়,যা সহাবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত৷

    পিবিডি/আরিফ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close