• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ফেব্রুয়ারিতেও রাজধানীতে থাকবে তীব্র গ্যাস সংকট

প্রকাশ:  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী এবং আশপাশের জেলাগুলোয় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় আবাসিক এবং শিল্প গ্রাহকরা পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছেন না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন এবং দুর্ভোগ বেড়েছে বাসাবাড়িতে। জানা গেছে, গ্যাসের এ সংকট রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। তবে গত জানুয়ারি থেকে তা তীব্র আকার ধারণ করে।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দেশে গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা কত, সেটার সঠিক কোনো হিসাব নেই। ধারণা করা হয়, প্রতিদিন অন্তত সাড়ে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বিশাল এই চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে প্রতিদিন আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ২৭শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তবে ২০১৫ সালের পর দু-তিন বছর চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৩২শ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালপরবর্তী সময়ে দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন কমতে থাকে। ফলে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ কমে। বিশেষ করে গত বছরের এপ্রিল থেকে গ্যাসের সরবরাহ কমতে থাকে অব্যাহতভাবে।

কবে নাগাদ এ সংকট কমতে পারে জানতে চাইলে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী আলী মো. আল মামুন বলেন, গ্যাসের সংকট মূলত চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে পার্থক্য থাকায়। দেশে উৎপাদিত গ্যাসের সঙ্গে বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহ করে এতদিন জোগান দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে বেসরকারি খাতের সামিটের টার্মিনালে ত্রূটি দেখা দেয়। সেটা এখনো সারানো যায়নি। ফলে এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে প্রতিদিন ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানায় কূপ সংস্কারের কাজ চলছে। একই সঙ্গে এলেঙ্গায় স্থাপিত গ্যাস কম্প্রেশার মেশিনও বিকল হয়ে আছে। ফলে রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোয় গ্যাস সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ সংকট কমতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেষ্টা চলছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করি।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে সংস্কার কাজ শুরু হয়। এ কারণে বিবিয়ানা থেকে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছিল, সেটা কমে যাওয়ায় সংকট দেখা দেয়। তবে সংস্কার শেষে গত সপ্তাহে এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও, এখনো এক থেকে দেড় শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ হচ্ছে। এদিকে গত ১৮ নভেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালীতে সমুদ্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মুরিং ছিঁড়ে যাওয়ায় মূলত বড় ঘাটতি দেখা দেয়। এ টার্মিনাল দিয়ে ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হতো।

পেট্রোবাংলা সূত্র আরও বলছে, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে সিঙ্গাপুর থেকে মুরিংয়ে ব্যবহৃত রশি এবং বিদেশি ডুবরিরা দেশে আসেন। তবে প্রায় ১৫ জন ডুবরির মধ্যে বেশিরভাগই কোভিড পজিটিভ হওয়ায় তারা সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেননি। পরে আরেকটি টিম বিদেশ থেকে এসেছে। তারা কাজ শুরু করবে শিগগিরই। সমিটের টার্মিনালটি ঠিক হয়ে গেলে এলএনজি সরবরাহ শুরু হলেই সংকট কমে আসবে।

এদিকে গ্যাস সংকট নিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বাসায় গ্যাসের চুলা আছে; অথচ ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করে খেতে হচ্ছে। আবার পত্রিকায় খবর দেখছি, সরকার গ্যাসের দাম ডবল করবে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার গা। শুধু নজরুল ইসলাম নন- এমন আরও অনেকেই গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। শুধু আবাসিক গ্রাহক নয়, শিল্প গ্রাহকরাও তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্যাস না পেয়ে হতাশ।

নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, জয়দেবপুর এলাকার একাধিক শিল্প মালিক বলেন, স্বাভাবিক সময়েও প্রত্যাশিত চাপে গ্যাস পাওয়া যায় না। এখন তো একটা সংকট চলছে। বিশেষ করে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

গত শনিবার বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সাংবাদ সম্মেলনে করেন। সেখানে তিনি বলেন, গত তিন মাস বা তারও বেশি সময় ধরে আমাদের কারখানাগুলো নির্ধারিত চাপে গ্যাস পাচ্ছে না। তিতাস গ্যাস না দিয়ে পাইপলাইনে শুধু বাতাস সরবরাহ করে আমাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বিল নিচ্ছে। ১২০০টি ইলেকট্রনিক ভলিউম ক্যারেক্টার আমদানি করা হলেও অল্পসংখ্যক মিলে তা স্থাপন করা হয়েছে। ইভিসি মিটার বসালে তিতাসের সিস্টেম লস কত শতাংশ, সেটি বোঝা যাবে। তাই হয়তো তারা ইভিসি মিটার স্থাপনে আগ্রহী নয়।

অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, নির্ধারিত চাপে ও মাপে গ্যাস না দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার মাধ্যমে তিতাসের কর্মকর্তারা প্রতারণা করছেন।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

গ্যাস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close