কারো চাপে নয়, নিয়ম ভাঙার কারণেই শরীফ চাকরিচ্যুত: দুদক সচিব

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে কারো চাপে নয়, বরং কমিশনের নিয়ম ভাঙার কারণেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব মাহবুব হোসেন।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন্

দুদক সচিব বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো প্রভাব আমলে নেয় না এবং প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।

মাহবুব হোসেন বলেন, কমিশনের অনুমোদন ছাড়া আপনি কাজ করছেন। কমিশনের কোনো নিয়ম মানবেন না। আমাদের চাকরি নিয়ম মানবেন না, কমিশন কেন আপনাকে রাখবে? অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য তো আমাদের হার্ডলাইনে যেতে হবে। আমাদের চাকরি বিধানের ধরনে তিনি চলে আসছেন।’

গণমাধ্যম একতরফা খবর প্রচার করছে দাবি করে দুদক সচিব বলেন, শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের আদেশ জারির পর থেকেই বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষয়টি প্রচারিত হচ্ছে। মূলত একতরফা তথ্যের ভিত্তিতেই এই সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, যা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত। অপসারণকৃত উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন দায়িত্ব পালনকালে, যেকোনো অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। গুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ যাই হোক না কেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কর্মচারীই নির্ভয়ে এবং নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু শরীফ উদ্দিনের মতো কোনো অজুহাত তারা উত্থাপন করেন না।

চাকরির শুরুর দিকে শরীফের পদোন্নতি পাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, সম্ভবত ২০১৪ সালে তিনি চাকরিতে যোগদান করেছেন। স্বভাবগত কারণে চাকরিতে যোগদানের পর তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য, তখন যে কাজকর্ম করেছেন সে হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। আপনি এখন যে অবস্থায় আছেন, একদিন পরে বা দুই দিন পরে আপনি এ অবস্থায় থাকবেন কি না, আপনিও জানেন না, আমিও জানি না।

তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত অনুসন্ধান কাজ যারা করে থাকেন, একটা সেট রুল রয়েছে। বিজ্ঞ আদালতেরও নির্দেশনা আছে, একটা প্রসিডিউর রয়েছে, আমাদেরও বিধানে প্রসিডিউর রয়েছে।

কমিশনের অনুমতি ছাড়াই ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শরিফ ফ্রিজ করেছেন এমন দাবি তুলে মাহবুব হোসেন বলেন, যদি কারো বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করে, আমরা তাকে ডাকবো। যদি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে হয়, আমাদের কমিশনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিজ্ঞ স্পেশাল জর্জ কোর্টের আদেশ নিতে হবে। তারপর করতে পারব। উনি এক সাথে ২৫টি লিখিতভাবে বন্ধ করে দিলেন, আটটি মৌখিকভাবে বন্ধ করে দিলেন। এই ক্ষমতা তাকে কে দিল? আপনি যদি সার্ভিস করেন, আপনাকে সার্ভিস রুলস মানতে হবে। আপনি এখানে নিজের মনগড়া কাজ করতে পারবেন না।

সচিব আরও বলেন, কর্মচারীদের অসদাচরণ ও অন্যান্য অপরাধের জন্য শৃঙ্খলা এবং আচরণবিধি রয়েছে। দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধিতে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অপসারণের বিধান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি অনুযায়ী দুদক ছাড়াও দেশের অন্য বহু দপ্তরে এরকম আইন ও বিধি বিদ্যমান। সেসব দপ্তর/প্রতিষ্ঠান শৃঙ্খলার স্বার্থে প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করে।

মাহবুব বলেন, আলোচ্য ৫৪(২) বিধি অত্যন্ত সীমিত ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কমিশন এও মনে করে যে, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে শান্তি প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু কমিশনের শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে শরীফ উদ্দিনকে ৫৪ (২) বিধিমতে অপসারণ করা হয়েছে। কমিশনের সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রকৃত অপরাধ ও কর্মের দায় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীফ উদ্দিন কিছু মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ মামলা বলে প্রচার করে ওই মামলা/অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন বলেও জানান দুদক সচিব।

তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তাই প্রভাবশালীদের চাপে তাকে অন্যায়ভাবে অপসারণ করা হয়েছে মর্মে তিনি দাবি করেছেন এবং মিডিয়ায় তাই প্রচার করা হয়েছে, যা প্রকৃত ঘটনা নয়।’

মাহবুব হোসেন বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কারণে তাদের প্রভাবে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে এটা মোটেও সত্য নয়। বাস্তবতা বিবেচনায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কর্মরত জেলা পর্যায়ের ব্যক্তিদের আর কতটুকুই বা প্রভাব থাকতে পারে! কমিশনের প্রায় সব অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মচারী চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট মামলায় উল্লিখিত অভিযুক্ত বা আসামিদের অপেক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ উঁচু পদ-পদবির ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে বিচারের পর তাদের সাজাও হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেননি। তাদের কারণে কমিশনকে এভাবে বিব্রত হতে হয় না।

পূর্বপশ্চিম- এনই