• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয ৮১৮ শিশু

প্রকাশ:  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:২০
নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারির কারণে দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও নানা বিধিনিষেধের মধ্যেও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮১৮ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৯৪ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে ১৪ মেয়েশিশু। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০ শিশু। ২০২০ সালে শিশু ধর্ষণের এই সংখ্যা ছিল ৬২৬।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামে শিশুবিষয়ক সংবাদের আধেয়-বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।

২০২১ সালে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ের সংখ্যা। গতা বছর ৪৩ হাজার ৫৪টি বাল্যবিয়ের সংবাদ পাওয়া গেছে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ৮৭ টি খবর থেকে। অন্যদিকে ২০২০ এ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিল ১০১ শিশু।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে শিশুরা বেশিরভাগ সময় বাসায়ই থেকেছে। এছাড়া একই কারণে জনসমাগমে তাদের তেমন উপস্থিতিও ছিল না। তবুও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৮১৮ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০২০ সালে শিশু ধর্ষণের এ সংখ্যা ছিল ৬২৬। এছাড়া একই সময়ে আরও ৯৪ জন শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে ১৪ মেয়ে শিশু। এই সময়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০টি শিশু।

সংবাদ সম্মেরনে আরও বলা হয়, আলোচিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৮৩ জন শিশু। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪৫। এ সময় হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৫ শিশুকে। এই সময়ের মধ্যে আত্মহত্যা করেছে ৭৮টি শিশু। এরমধ্যে ৫৭ ছেলে ও ২১ মেয়ে শিশু রয়েছে। ২০২০ সালে আত্মহত্যাকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৪ ও আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ২৩ জন।

আরও পড়ুন : নরসিংদীতে শিশু ধর্ষণ, ‘মামলা নিচ্ছে না পুলিশ’

আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বলা হয়, পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়, পরিবারের ওপর রাগ, প্রেম, উত্ত্যক্ত হয়ে, ধর্ষণের শিকার বা ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণের বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়া ও সাইবার ক্রাইম বা ব্ল্যাকমেইলের শিকার ইত্যাদি কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া গেল এক বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৯ শিশু মারা গেছে। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৫৮। শুধু এই একটি বিষয়ে শিশুদের নিহত হওয়ার হার আগের বছর ২০২০ সালের তুলনায় কমেছে।

এর বাইরে নানা ধরনের নির্যাতনে আহত হয়েছে ২৫৪ জন শিশু। হারিয়ে গেছে ৩৮টি শিশু। ৫৭০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬৫। নিখোঁজ হয়েছে ৩৮ শিশু। ২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২২ জন শিশু। অপহরণের কারণ হিসেবে টাকা, প্রেম, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ গ্রহণ, পাচার ও মুক্তিপণ দাবি সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

শিশু নির্যাতনের ৫৬টি ঘটনার মাধ্যমে ২৫৪ জন শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। ২০২০ সালে শিশু নির্যাতনের ১৬টি ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনকারী হিসেবে গৃহকর্তা, বাবা-মা, শিক্ষক, উত্ত্যক্তকারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান, চাকরিদাতা, প্রতিবেশী ও সৎমা। এমনকি ২০২১ সালে অপরাধে সংশ্লিষ্ট হওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২০, যা ২০২০ সালে ছিল মাত্র দুজন।

আরও পড়ুন : স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন

শিশুকে নিয়ে ২৫টি বিষয়ের ওপর নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ১ হাজার ৯৩০টি আর ইতিবাচক সংবাদ ছাপা হয়েছে ১২টি বিষয়ের ওপর ১০৬টি।

সংবাদ সম্মেলনে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, এমজেএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায় নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণ ও শিশুকে যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য সবাইকে এখনই জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নতুবা এর হার আরও বাড়তে থাকবে। শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আরও বেশি সহৃদয়বান হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান শাহীন আনাম।

তিনি বলেন, এমজেএফের বার্ষিক ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি’ পর্যালোচনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শিশু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী সুপারিশ তুলে ধরা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শিশু ও সমন্বয় উইং) মুহিবুজ্জামান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি মাহবুবা বিলকিস। সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’র সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এমজেএফের কো-অর্ডিনেটর রাফেজা শাহীন।

পূর্বপশ্চিম- এনই

শিশু ধর্ষণ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close