• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চাকরি ফিরে পেতে দুদকে শরীফের রিভিউ আবেদন

প্রকাশ:  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক

অপসারণের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য রিভিউ আবেদন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে বরখাস্ত হওয়া উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে তিনি আবেদন জমা দেন।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনে অপসারণের আদেশটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অমানবিক হিসেবে উল্লেখ করে পুনর্বহালের প্রার্থনা করেছেন শরীফ।

আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কমিশনে সততা, বিশ্বস্থতা, অধ্যবসায় ও সর্বোচ্চ ন্যায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়ে আমি আমার সর্বোচ্চ দক্ষতার সহিত সত্তরেরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মামলা সুপারিশ, রুজু ও চার্জশিট দাখিল করে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করেছি।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলাগুলো হলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অবৈধভাবে পাসপোর্ট ও এনআইডি অনিয়ম সংক্রান্ত ২০ মামলা, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮৬৩ জন খালাসী নিয়োগের দুর্নীতির মামলা ও সম্পদের অনুসন্ধান, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল করিম ও মো. আমিনের বিরুদ্ধে মামলা, স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে মামলা, কেজিডিসিএল’র শিল্প গ্রাহক আবুল খায়ের গ্রুপ, ক্রাউন স্টিল, বায়েজিদ স্টিলস লিমিটেড, ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড, আরএফ বিল্ডার্সসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু ও সুপারিশ করেছি।

আবেদনে তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ সজেকায় কর্মকালীন ভালুকা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক সরকারি সম্পদ জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের দায়ে মামলা রুজু করে ২ জনকে গ্রেফতার, ভূমি অফিসের নাজিরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় গ্রেফতারসহ আরও অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছি। এছাড়াও চট্টগ্রাম কর্মরত থাকাকালীন আমার কাছে প্রায় ৭০টি অভিযোগের অনুসন্ধান ও ৪২টি মামলার তদন্তভার ছিল।

এর বাইরেও প্রধান কার্যালয়ের রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট দেওয়া বিষয়ক ৬টি অভিযোগের অনুসন্ধান টিমের সদস্য, মাহিনী ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড অভিযোগের অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য, ১৫৭ প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাঁকখালী নদী দখল, চট্টগ্রাম এল এ শাখার দুর্নীতির বিপরীতে মামলা করার সুপারিশ, মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান, মহেশখালীর ২৭ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান টিমের সদস্য হিসেবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি।

ওইসব অনুসন্ধান ও মামলা অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এবং কতিপয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশ পাওয়া যায় বলে তিনি আবেদনে লিখেছেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুর্নীতি ও তদসংশ্লিষ্ট অনিয়মকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে সপরিবারে বিভিন্ন সময়ে প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। তথাপি আমি ও আমার পরিবারের আর্থিক, সামাজিক ও জানমালের নিরাপত্তার দিকগুলো ন্যূনতম বিবেচনায় না নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (চাকরি) বিধিমালা-২০০৮ এর ৫৪ (২) বিধিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কোনোরূপ কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে আচমকাই আমাকে অপসারণ করা হয়।

আবেদন শরীফ বলেন, আমাকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অমানবিকভাবে করা হয়েছে। এ আদেশটি দেওয়ার আগে আমাকে কোনরূপ কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়নি, যা কিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৫ ( ২ ) অনুচ্ছেদ এবং মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। এমতাবস্থায় যৌক্তিক, আইনানুগ ও মানবিক কারণসমূহ বিবেচনায় নিয়ে চাকরি হতে অপসারণের আদেশ পুনরীক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যাহার পূর্বক চাকরিতে ধারাবাহিকতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ পুনর্বহালের জন্য হুজুরের অনুকম্পা প্রার্থনা করছি।

এর আগে, বিধিমালা ভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করে দুদক। পরদিন এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকাসহ ২১ জেলার দুদক কর্মকর্তারা নজিরবিহীনভাবে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ করেন। এছাড়া হঠাৎ করে এই কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা তৈরি হয়।

প্রথমদিকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না জানালেও ২০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে শরীফের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ জানান দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন। যদিও এসব অভিযোগের ব্যাখ্যা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন শরীফ।

অন্যদিকে ২০ ফেব্রুয়ারি শরীফের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট চিঠিটি রেখে আইনজীবীদের বলেন, সংক্ষুব্ধ হলে তারা যেন রিট দায়ের করেন।

জানা গেছে, গত বছরের ১৬ জুন শরীফকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। চট্টগ্রামে চাকরির সময় একের পর এক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন শরীফ।

শরীফের অভিযোগ, চাকরিচ্যুতির কিছুদিন আগে ৩০ জানুয়ারি তাকে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানা এলাকার বাসায় এসে সদলবলে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা হুমকি দিয়ে যান। সেদিন এক সপ্তাহের মধ্যে শরীফের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিষয়টি কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শরীফ উদ্দিন।

এই জিডি তদন্তের সময় সিসিটিভি ফুটেজে পেট্রোবাংলার অবসরকালীন ছুটিতে থাকা পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খানের উপস্থিতি দেখতে পায় পুলিশ। যদিও কী কারণে সেদিন আইয়ুব খান শরীফের বাসায় গিয়েছিলেন তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।


পূর্বপশ্চিম/এসকে

দুদক,শরীফ উদ্দিন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close