• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

স্কুলশিক্ষক হৃদয়ের মুক্তি দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের

প্রকাশ:  ০৯ এপ্রিল ২০২২, ১৮:০৪
অনলাইন ডেস্ক

ধর্ম ও বিজ্ঞানের পার্থক্য নিয়ে শ্রেণিকক্ষে আলোচনায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বলেন, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশের চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতীক, যেখানে ক্রমশই স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শ্রেণিকক্ষে আলোচনার জন্য একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তার হওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউকে জেলে যেতে হতে পারে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নির্বিচারে আটক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে অপরাধীকরণ করার ফলে জনগণের মধ্যে উদ্ভূত ভীতি সঞ্চারের পরিস্থিতি নথিভুক্ত করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের এই ঘটনা বিদ্যমান সংকটের পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে, একটি দেশের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই ঘটনা।

বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও সেন্টার ফর উইমেন জার্নালিস্টসহ বেশ কয়েকটি সুশীল সমাজ এবং একাডেমিক সংগঠন শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে এবং শিক্ষকদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

একইভাবে সারাদেশে মানবাধিকার রক্ষক, আইনজীবী ও শিক্ষকরা গ্রেপ্তারের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।

সিং বলেছেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে আটক করা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবক্ষয়ের লজ্জাজনক উদাহরণ। এ পরিস্থিতি উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে মানুষ মুক্তভাবে ও নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারে। কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই শিক্ষকরা ক্লাসে কথা বলতে পারবেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

এক শিক্ষার্থীর রেকর্ড করা অডিও ফাইল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, বিজ্ঞানের একটি ক্লাসে ‘ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপার’; বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত-এ নিয়ে কথা বলেছিলেন গ্রেপ্তার ওই শিক্ষক।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সংগ্রহ করা অডিও রেকর্ডিংটিতে ওই শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, ধর্মের কোনো প্রমাণ নেই। শেষমেশ ধর্মের ব্যাখ্যা কোথায় যায় জান? শেষমেশ ওই ঈশ্বর দেখে, ঈশ্বর সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার হবে। এসব বিশ্বাসের বিষয়। কোনো প্রমাণ নেই৷ আর বিজ্ঞান প্রমাণ সাপেক্ষ।

রেকর্ড করার দুদিন পর ২২ মার্চ স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সংবাদমাধ্যমকে জানান, হৃদয় মণ্ডলের শাস্তি চেয়ে শিক্ষার্থী ও অন্যরা স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করছে। সেদিনই স্কুলটির একজন অফিস সহকারী হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২০ মার্চ বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির মানবিক শাখার ক্লাস নেওয়ার সময় হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ‘ধর্ম অবমাননা’ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ২২ মার্চ মামলা করেন স্কুলের অফিস সহকারী মো. আসাদ। সেদিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৩ মার্চ তাঁকে আদালতে হাজির করলে আদালত তাঁকে জেল হাজতে পাঠায়।

গত ৪ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামির জামিনের জন্য ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন তার আইনজীবী। সেদিন মামলাটিতে আসামির জামিন শুনানি আগামী ১০ এপ্রিল ধার্য করেন মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ।

অপরদিকে বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্ট নাগরিক। গত বুধবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, আমরা হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃর্শত মুক্তি দাবি করছি। আর যে কিশোর ছাত্ররা মৌলবাদী চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে অপমান করে পুলিশে সোপর্দ করেছে তাঁদের মধ্যে মানবিক চেতনার বিকাশ ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

পূর্বপশ্চিম/এনএন

স্কুলশিক্ষক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close