• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

তবে কি দাম বাড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য?

প্রকাশ:  ২৫ আগস্ট ২০২২, ১৫:৫৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

দাম বাড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য। আর সেই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পর বাজারে বাড়ছে সয়াবিন তেলের সরবরাহ।

মঙ্গলবার নতুন দাম কার্যকর করার পরদিন বাজারে বাড়ছে অন্যতম এই ভোজ্যতেলের সরবরাহ। নতুন করে চাহিদা নিচ্ছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। সব পর্যায়ে নেয়া হচ্ছে তেলের চাহিদা।

ডলারের বাজারে অস্থিরতার কথা বলে গেল ৩ আগস্ট বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও উৎপাদক সমিতি। ২০ দিন পর লিটারে সর্বোচ্চ ৭ টাকা বাড়াতে সম্মতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মিরপুর শেওড়াপাড়ার আলিম স্টোরে দুইদিন আগেও বোতলজাত ৫ লিটার তেল কিনতে পারেননি রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, সংসার বড় হওয়ার কারণে একবারে ৫ লিটার কেনা হয়। কিন্তু পাঁচ লিটার না পেয়ে অগত্যা ২ লিটারের বোতল কিনতে হয়েছে। আশপাশের কোনো দোকানে তখনও পাওয়া যায়নি ৫ লিটারের বোতল। কিন্তু আজ অন্য পণ্য কিনতে এসে দেখছি পাঁচ লিটারের বোতল আছে।’

একই দোকানের ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও তিনটি দোকান ঘুরে এক দোকানে তেলের বোতলের গায়ের দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দিয়ে ২ লিটার তেল কিনেছি। বেশি দামে তেল কিনতে পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ দেখছি দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ বেড়েছে। সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য। আক্ষেপ, ক্রেতাদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই।’

দোকানি আলিমউদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে চাহিদার বিপরীতে কোম্পানি থেকে তেল পাওয়া গেছে কম। গতকাল কোম্পানিকে চাহিদা দেয়া হলে আজ সকালেই তারা দিয়ে গেছে।’

একই এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ লিটন বলেন, ‘ডিলারদের কাছে তেল চেয়ে পাননি। গত কয়েক দিন দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ। দাম বাড়ানো হবে এ জন্য নাকি ডিলাররা তেল মজুত করেছেন। মঙ্গলবার দাম বাড়ার পর বুধবার চাহিদা দেয়া হয়েছে। এখন হয়তো তেল পাওয়া যাবে।’

রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মদিনা স্টোরের দোকানি আলতাফ হোসেন জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দোকানে সরিষার তেল ছাড়া কোনো সয়াবিন তেল ছিল না। বেশির ভাগ কোম্পানির কোনো প্রতিনিধিকে এখন দেখা যায় না। তবে বুধবার দুই-একজনের দেখা পেলে তারা জানান, এক বা দুইদিনের মধ্যে তেল সরবরাহ করা হবে।

কারওয়ান বাজারেও সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা যায়নি। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় দোকানগুলোতে এক, দুই বা পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দেখা মিলছে। দু-একটি দোকানে আগের কিছু তেল আছে। সেটা বিক্রি করছেন নতুন দামে। তবে গায়ে লেখা আগের দাম।

৩ আগস্ট ডলারের বিপরীতে টাকার দর পতনের কারণে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, বোতলজাত তেলের দাম ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার তেলের দাম ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা এবং পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫০ টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কারণে তেলের দাম সমন্বয় করা হয় গেল ১৮ জুলাই। এক মাস না যেতেই নতুন করে আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ব্যবসায়ীরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ট্যারিফ কমিশন পর্যালোচনা করে প্রতি লিটারে ৭ টাকা দাম বাড়ায়।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মঙ্গলবার থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৯২ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৭৫ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে ৯৪৫ টাকা। ১ লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১৪৫ টাকা।

বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়ে আসছিল ১৮৫ টাকায়। ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের যুক্তি সামনে এনে লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়িয়ে তেলের দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় আমদানিকারক ও উৎপাদক সমিতি। সে ক্ষেত্রে দাম হতে পারত ২০৫ টাকা।

প্রস্তাব দেয়ার পর দাম বাড়ানোর পক্ষের যুক্তি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন।

প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ববাজারের বর্তমান দাম, ডলারের মূল্য, শুল্কহারসহ সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হয়।

তিনি বলেন, ‘১৮৫ টাকা দাম নির্ধারণ যখন হয়, তখনও ডলারের ঊর্ধ্বমূল্য ছিল। সেই সময় ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়। তাই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি তেমন ধোপে টেকার কথা না। বিশ্ববাজারে কমছে ভোজ্যতেলের দাম। কিন্তু সেই দাম সমন্বয় হয়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরে ট্যারিফ কমিশন বলে, লিটারে ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত না। স্পষ্ট করে ট্যারিফ কমিশন জানায়, যেহেতু বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী, তাই টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়লেও সার্বিক মূল্যে প্রভাব পড়বে না।

ট্যারিফ কমিশনের যুক্তি এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার পর লিটারে ৭ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যুক্তি-পাল্টাযুক্তির কারণে মূল্য নির্ধারণে সময় চলে যায় ২০ দিন। তবে ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে তা থেকে ৭ টাকায় নেমে আসা, অর্থাৎ এত কমিয়ে দাম নির্ধারণ করার পরও তা ব্যবসায়ীদের মেনে নেবার ঘটনা এবারই প্রথম।

পূর্বপশ্চিম/ম

সয়াবিন তেল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close